(বাঁ দিকে) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। — ফাইল চিত্র।
যুদ্ধবিরতি আলোচনায় রাজি। তবে শান্তি বৈঠক হবে মস্কোয়! আবার ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের রাশিয়ায় আসার ‘আমন্ত্রণ’ জানালেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একই সঙ্গে পশ্চিমি দেশগুলিকে সতর্ক করে তাঁর বার্তা, যুদ্ধরত ইউক্রেনে কেউ যদি সেনা পাঠায়, তবে তারাও রুশ সেনাবাহিনীর নিশানায় থাকবে। পুতিনের মতে, শান্তিচুক্তিতে বিদেশি উপস্থিতির কোনও যুক্তি নেই।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শুক্রবার পুতিন আবার নিজের মত প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে ইউক্রন যুদ্ধে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ যে তিনি ভাল ভাবে নিচ্ছেন না, তা-ও স্পষ্ট করেছেন। ব্লাডিভস্তকে অনুষ্ঠিত ‘ইকনমিক ফোরাম’-এ পুতিনের বলেন, ‘‘ইউক্রেনে যদি অন্য কোনও দেশের সেনা থাকে, বিশেষত এই পরিস্থিতিতে, তবে আমরা রেয়াত করব না। ইউক্রেনে বিদেশি সেনাও আমাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তু।’’ তার পরেই শান্তি আলোচনা প্রসঙ্গে পুতিনের মত, ‘‘যদি বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি শান্তি আলোচনার দিকে এগিয়ে যায়, তবে ইউক্রেনের মাটিতে বিদেশি শক্তি উপস্থিতির কোনও অর্থ দেখি না।’’
পুতিন চান শান্তি আলোচনার জন্য ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল মস্কোয় আসুক। তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রুশ প্রশাসনের। তবে তিনি এ-ও মনে করেন, এই আলোচনা কখনও বাস্তবায়িত হবে না। কোনও ভবিষ্যৎ নেই। পুতিনের কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত কেউ আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাননি।’’
সাড়ে তিন বছর ধরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনের উপর হামলার কারণে আমেরিকা-সহ বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ইউক্রেনের সমর্থনে এগিয়ে আসে ইউরোপের দেশগুলি। এমনকি, যুদ্ধে ইউক্রেনকে সাহায্যের আশ্বাসও দেয় তারা। অন্য দিকে, যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্যে অনেক দেশই এগিয়ে এসেছে। তবে এখনও পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে কোনও রফাসূত্র বার হয়নি। থামেনি যুদ্ধও। এই আবহে পুতিন আবার এক বার ইউক্রেনের ইউরোপীয় বন্ধুদের হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিকে পাশে বসিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ দাবি করেন, ২৬টি দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। স্থল, আকাশ, এবং জলপথে সেনা পাঠানোর কথাও বলেছেন মাক্রোঁ। তাঁর এই দাবির পরের দিনই পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিম বিশ্বের দেশগুলিকে দূরে থাকার আহ্বান জানালেন। পুতিন এ-ও জানান, ইউপরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতেই পারে ইউক্রেন। সেটা তার অধিকারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু ‘নেটো’ (আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট)-এর সদস্য হওয়ার কোনও যোগ্যতা নেই ইউক্রেনের।
দিন দুয়েক আগেই পুতিন জানিয়েছিলেন, তিনি জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি। তবে বৈঠক হতে হবে মস্কোতে। শুক্রবার সেই প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এখনও ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের ১০০ শতাংশ সুরক্ষা দিতে আমরা তৈরি।’’ তবে রাশিয়ার বাইরে অন্যত্র আলোচনায় বসতে তিনি রাজি নন, স্পষ্ট করলেন পুতিন।