Sheikh Hasina Verdict

মুজিব-ভবন পাহারায় সেনা! খুন, থানায় বোমাবাজি,‌ জখম পুলিশ, হাসিনার ফাঁসির‌ আদেশের পর‌ উত্তপ্ত বাংলাদেশে কী কী ঘটল?

সোমবার ধানমন্ডি ৩২-এ পুলিশ এবং সেনাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় বিক্ষোভকারীদের। হাসিনাকে নিয়ে রায়ের পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। নামাতে হয় আধাসেনাও।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৩৪
Share:

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। — ফাইল চিত্র।

শেখ হাসিনার ফাঁসির সাজা ঘোষণার পর থেকে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছে বাংলাদেশে। জায়গায় জায়গায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজির অভিযোগ উঠে এসেছে। থানাতেও বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা এবং বরিশালে অন্তত দু’জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।

Advertisement

বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডেলি স্টার’ জানাচ্ছে, সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার পল্লবী থানা এলাকায় যুব দল (বিএনপি-র যুব শাখা)-এর এক কর্মীকে গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠেছে। হেলমেটে মুখ ঢাকা তিন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী তাঁর উপর হামলা করে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পালানোর সময়ে এলাকার এক অটোচালককেও গুলি করে দুষ্কৃতীরা। অন্য দিকে হাসিনাকে নিয়ে আদালতের রায় ঘোষণার পরে মিষ্টি বিলিকে কেন্দ্র করে বরিশালে এক সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ছাত্রদল (বিএনপি-র ছাত্র শাখা)-এর এক কর্মীর। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলিতে জানানো হচ্ছে, ছাত্রদলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরেই ঘটনাটি ঘটেছে।

সোমবার হাসিনাকে নিয়ে রায় এবং সাজা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত আটটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের খবর মিলেছে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে দু’টি স্কুলভবনেও। ‘দ্য ডেলি স্টার’ অনুসারে, রাত আড়াইটে নাগাদ (ভারতীয় সময়) নেত্রকোনায় দু’টি স্কুলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এর মধ্যে একটি স্কুলে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তবে অন্যটিতে তিনটি শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষকদের বসার ঘর পুড়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

সোমবার সকাল থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মিলতে শুরু করেছিল। বিভিন্ন জায়গায় বাসে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রামে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ঢাকাতেই অন্তত ছ’টি বাসে সোমবার অগ্নিসংযোগের খবর মিলেছে। ‘প্রথম আলো’ জানাচ্ছে, সোমবার বিকেলে ঢাকার উত্তরায় একটি মিনিবাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। দাবি করা হচ্ছে, বাসটি আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাংসদ হাবিব হাসানের ভাই নাদিম হাসানের। এর পরে উত্তেজিত জনতা হাবিব এবং তাঁর ভাইয়ের বাড়িতেও চড়াও হতে উদ্যত হয়। তবে পুলিশ তাদের সেখান থেকে হটিয়ে দিয়েছে।

রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সোমবার দফায় দফায় উত্তপ্ত হয় বাংলাদেশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ (ভারতীয় সময়ে) গোপালগঞ্জের এক থানায় ককটেল (এক ধরনের বোমা) হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। ওই বিস্ফোরণে জখম হয়েছেন থানার তিন পুলিশকর্মী।

হাসিনাকে নিয়ে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের রায় সোমবার সরাসরি সম্প্রচারিত হয় বাংলাদেশে। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে বসানো হয় জায়ান্ট স্ক্রিনও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেও একটি জায়ান্ট স্ক্রিন বসে। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়া পৌঁছে যান ধানমন্ডি ৩২-এ। বুলডোজ়ার নিয়ে সেখানে পৌঁছোন তাঁরা। শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত সেই বাড়ির বাকি অংশও (গত বছরই একদল জনতা বাড়ির একাংশ ভেঙে দেয়) গুঁড়িয়ে দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের। বস্তুত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত)-র ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবিরের দখলে রয়েছে।

হাসিনাকে নিয়ে আদালত রায় ঘোষণার আগে থেকেই ধানমন্ডি ৩২-এর সামনে ভিড় করতে শুরু করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের ঠেকাতে মোতায়েন করা হয় পুলিশ। নামানো হয় সেনাও। বাধা পেয়ে পুলিশ এবং সেনাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করেন বিক্ষুব্ধেরা। পুলিশও পাল্টা লাঠিচার্জ করে। তত ক্ষণে হাসিনাকে নিয়ে রায় এবং সাজা ঘোষণা করে দিয়েছে ট্রাইবুনাল। পরিস্থিতি সামাল দিতে ধানমন্ডি ৩২-এর সামনে ফাটানো হয় সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেলও। তাতেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। পুলিশ এবং সেনা আগে থেকেই মোতায়েন ছিল সেখানে। বিকেলের দিকে নামানো হয় আধাসেনা (বিজিবি)। রাতেও নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষোভকারীরা।

পরে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ (ভারতীয় সময় অনুসারে) ঢাকা পুলিশের ধানমন্ডি এলাকার অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক ‘প্রথম আলো’কে জানান, বিক্ষোভকারীদের ওই চত্বর থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যান চলাচলও শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement