গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
আমেরিকার আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শুক্রবার মধ্যরাতে (ভারতীয় সময়) বৈঠকে বসবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈঠকে তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধের বিরতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই মূলত কথা বলবেন দুই রাষ্ট্রনেতা (যদিও শুক্রবার আলাস্কার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধবিরতির শর্ত সম্পর্কে আলোচনা তাঁর লক্ষ্য নয়)। ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে যুদ্ধবিরতির ‘শর্ত’ হিসাবে ‘ভূমি বিনিময়’ (ল্যান্ড সোয়াপিং)-এর প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে বলে আগে ইঙ্গিত দিয়েছিল মস্কো।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ট্রাম্পও ইতিমধ্যেই বার্তা দিয়েছেন, রাশিয়ার হাতে নিজেদের ভূখণ্ডের কিছু অংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে পারেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। কোন কোন এলাকা রয়েছে এই তালিকায়? পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, পুতিনের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে ২০১৪ সালে ছিনিয়ে নেওয়া ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ক্রাইমিয়া এবং ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের অন্যতম ভরকেন্দ্র ডেনেৎস্ক-ওল্ডবাস্ট এবং লুহানস্ক অঞ্চল (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়)। ডনবাসের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা বর্তমানে রাশিয়ার দখলে। গত তিন মাসে ওই এলাকায় নির্ণায়ক অগ্রগতি হয়েছে রুশ বাহিনীর। তাদের হামলায় পতনের মুখে ডনেৎস্কের ডেব্রোপিলিয়া শহর।
এ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের খেরসন এবং জ়াপোরিঝিয়া রয়েছে পুতিনের তালিকায়। যুদ্ধের গোড়ায় ওই প্রদেশগুলির বড় অংশের দখল নিয়েছিল রুশ বাহিনী। ২০২২ সালের শেষপর্বে ডনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন এবং জ়াপোরিঝিয়ায় গণভোট করিয়ে সেগুলিকে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার ঘোষণা করেছিলেন পুতিন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে খেরসন এবং জ়াপোরিঝিয়ার বড় অংশ পুনরুদ্ধার করে জেলেনস্কি বাহিনী। তবে কিছু অংশ এখনও রুশ ফৌজের নিয়ন্ত্রণে। ইউক্রেনের ভূখণ্ড হলেও ডনবাস অঞ্চলে রুশ বংশোদ্ভূতেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। গত এক দশক ধরে সেখানে সক্রিয় মস্কোপন্থী মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলি। বস্তুত তাদেরই সহায়তায় ইউক্রেন ফৌজকে ডনেৎস্ক ও লুহানস্কের বড় অংশ থেকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে পুতিনসেনা।
অন্য দিকে, ক্রাইমিয়ার উপর পুতিনের নজরের মূল কারণ সামরিক ও বাণিজ্যিক। কৃষ্ণসাগর উপকূলের ক্রাইমিয়ার সেবাস্তিপোল বন্দর শীতের সময়ও সচল থাকে। মূল রুশ ভূখণ্ডের কোনও বন্দরে সে সুবিধা নেই। সমুদ্র ভেসে আসা বরফের চাঁইয়ের কারণে বছরভর সেগুলি সচল রাখা সম্ভব নয়। ২০১৪ সালে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে সামান্য সংঘর্ষের পরে দক্ষিণ ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করেছিল রুশ সেনা। পরে গণভোট করিয়ে ওই অংশকে রুশ ভূখণ্ডের সঙ্গে জুড়ে নিয়েছিল পুতিনের সরকার। ২০১৮ সালে ১২ মাইল লম্বা কের্চ সেতুর যান চলাচলের অংশটির উদ্বোধন করেছিলেন পুতিন স্বয়ং। তার দু’বছর পর রেল পরিবহণের অংশটি চালু হয়েছিল। গত তিন বছরের যুদ্ধে বার বার সেই সেতুকে নিশানা করেছে জ়েলেনস্কির বাহিনী।
বর্তমানে ইউক্রেনের ১৯ শতাংশ ভূখণ্ডে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অর্থাৎ, ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশে। ডনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন এবং জ়াপোরিঝিয়া ছাড়া খারকিভ, সুমি, মিকোলিভ এবং নিপ্রোপেট্রোভস্কের কিছু কিছু অঞ্চলও মস্কোর দখলে রয়েছে। ডনবাসের ক্রামাটোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্কের মতো শহরেও ধারাবাহিক হামলা চালানোর চেষ্টা করছে রুশ সেনা। এক বছর আগেই পুতিন যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে ইউক্রেনের মানচিত্র বদলের কথা বলেছিলেন। এ বার আলাস্কা বৈঠকে তিনি সেই প্রসঙ্গেই অবতারণা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। জুলাই মাসে ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছিলেন, ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে লড়াই বন্ধ না করলে রাশিয়ার উপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। পরে সেই সময়সীমা আরও সংক্ষিপ্ত করার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তা ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। তবুও মস্কোর বিরুদ্ধে বড় কোনও পদক্ষেপ করেনি ওয়াশিংটন। বরং চলতি মাসেই ট্রাম্পের দূত মার্ক উইটকফ ক্রেমলিনে গিয়ে বৈঠক করে এসেছেন পুতিনের সঙ্গে।