(বাঁ দিকে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কাজ চলছে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বসে চুক্তির বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করছেন সে দেশের বাণিজ্যসচিব হোয়ার্ড লুটনিক। বাণিজ্য সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলে খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে ঘোষণা করতে পারেন ট্রাম্প। সোমবার (স্থানীয় সময় অনুসারে) ওয়াশিংটনে সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানালেন হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিব ক্যারোলিন লেভিট। ভারতকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকার ‘কৌশলগত ভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুরাষ্ট্র’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
আমেরিকার নয়া শুল্কনীতি আপাতত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রেখেছেন ট্রাম্প। ৯০ দিনের ওই সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ৯ জুলাই। তার আগে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হবে কি না, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে। বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে আমেরিকায় রয়েছে। সম্প্রতি সূত্র মারফত জানা যায়, বাণিজ্যের বেশ কিছু ক্ষেত্রে এখনও মতবিরোধ রয়েছে দুই দেশের। বিশেষ করে গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইস্পাত এবং কৃষিজাত পণ্যের আমদানি শুল্ক নিয়ে দুই দেশের মধ্যেই দর কষাকষি চলছে। ওই মতবিরোধ কেটেছে, এমন কোনও তথ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। এরই মধ্যে হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিবের মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন করা হয় ক্যারোলিনকে। চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পথে কোনও বাধা রয়েছে কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট গত সপ্তাহে যা বলেছিলেন, সেই মতোই সব চলছে। (আমেরিকার) বাণিজ্যসচিবের সঙ্গেও আমার এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ওভাল অফিসে ছিলেন। চুক্তির বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করছেন তাঁরা। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে আপনারা প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের থেকে শীঘ্রই জানতে পারবেন।”
ভারতের সঙ্গে আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথাও সাংবাদিক বৈঠকে উল্লেখ করেন ক্যারোলিন। বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে প্রশ্নের সময়েই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের প্রভাব নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। চিন প্রসঙ্গে সরাসরি কোনও মন্তব্য না-করলেও ক্যারোলিন জানান, ভারতকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘কৌশলগত ভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুরাষ্ট্র’ হিসাবে দেখে আমেরিকা। হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিব আরও বলেন, “আপনারা জানেন, (ভারতের) প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের খুব ভাল সম্পর্ক রয়েছে। দু’জনের সম্পর্ক সেই রকমই থাকবে।”
বস্তুত ট্রাম্প ইতিমধ্যে আভাস দিয়ে রেখেছেন, ৯ জুলাইয়ের পর এই সময়সীমা আর বৃদ্ধি করতে চান না তিনি। তবে এই সময়সীমার মধ্যে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কেন্দ্রের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ভারতের কৃষি এবং দুগ্ধজাত ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে আগ্রহী আমেরিকা। কিন্তু তাতে এখনও পর্যন্ত সায় নেই নয়াদিল্লির। সোমবার প্রকাশিত ‘ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেন, “বড় লক্ষণরেখাগুলির মধ্যে কৃষি এবং দুগ্ধজাত ক্ষেত্র রয়েছে। এই ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সতর্কতা নিতেই হচ্ছে।”
অপর একটি সূত্রের দাবি, ট্রাম্পের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার ঠিক এক দিন আগে, আগামী ৮ জুলাই অন্তর্বর্তিকালীন বাণিজ্যচুক্তির কথা ঘোষণা করতে পারে নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটন। এই বিষয়ে কথাবার্তা চূড়ান্ত করতে ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটনে পৌঁছে গিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রকের বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়াল। সোমবার আমেরিকা গিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও। তাঁর সফরের নেপথ্যে কোয়াড অক্ষের বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক থাকলেও বাণিজ্যচুক্তির প্রেক্ষাপটেও এই সফর তাৎপর্যপূর্ণ।