সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘সুজন বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’ ঘরোয়া পুজোটির এখন যথেষ্ট পরিচিতি হয়েছে।
অতলান্তিক মহাসাগরের পূর্ব পাড়ে ছোট্ট পান্না সবুজ দ্বীপের দেশ আয়ারল্যান্ড। সেই আয়ারল্যান্ডের রাজধানী, ডাব্লিন শহরের ‘সুজন বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর সর্বজনীন দুর্গোৎসব এ বার কুড়িতে পা দিল। সমুদ্র আর পাহাড়ে ঘেরা এই আয়ারল্যান্ডে বাঙালি অভিবাসীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। কর্মসূত্রে বা উচ্চশিক্ষার তাগিদে বহু বাঙালিই এ দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। তেমনই কয়েক জন সমমনস্ক প্রবাসী বাঙালির হাত ধরে সুজনের পথ চলা শুরু হয়েছিল বছর কুড়ি আগে। এক কালে খুবই ছোট করে হত পুজো। সময়ের সঙ্গে ঘরোয়া পুজোটির এখন যথেষ্ট পরিচিতি হয়েছে। তবে সেই ঘরোয়া আন্তরিকতা আজও সুজনের সর্বজনীন পুজোর এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এখানে প্রতি বছর সুজনের পুজো আয়োজিত হয় শরতের কোনও একটি সপ্তাহান্তে। যাতে দৈনন্দিন জীবনের কর্মব্যস্ততা সামলেও অধিকাংশ বাঙালি পুজোয় যোগ দিতে পারেন, আবার সেই সঙ্গে পুজোর আমেজটাও বজায় থাকে পূর্ণ মাত্রায়। পাঁচ দিনের পুজো মাত্র আড়াই দিনের মধ্যে সারলেও অনুষ্ঠানে আর উপাচারে যাতে কোনও খামতি না থাকে, সেই বিষয়ে সুজনের প্রধান পুরোহিত আর কর্মকর্তাদের কড়া নজর থাকে। তাঁদের দক্ষ তত্ত্বাবধানে ষষ্ঠী, সপ্তমীর পুজো থেকে শুরু করে অষ্টমীর অঞ্জলি, সন্ধিপুজো, নবমীর সন্ধ্যারতি, দশমীর পুজো, দেবীবরণ এবং সিঁদুর খেলার যাবতীয় উপাচার অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়।
এই দুর্গোৎসবের আর একটি আকর্ষণ হল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আড়াই দিনের পুজোর প্রত্যেক সন্ধ্যায় অন্তত ঘণ্টা খানেক জমজমাট থাকে নাচ, গান, নৃত্যনাট্য, আবৃত্তিতে।
বাঙালির দুর্গোৎসবের আনন্দ আর আমেজের এক প্রধান অঙ্গ হল খাওয়াদাওয়া। তাই সুজনের পুজোর প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে থাকতেই হবে ‘আনন্দমেলা’। বাড়িতে বানানো মাছের চপ, শিঙাড়া, ফিশ ফ্রাই, মোচার চপ, ফুচকা, পোলাও, কষা মাংস, বিরিয়ানি থেকে শুরু করে রসগোল্লা, মিষ্টি দই, পাটিসাপ্টার মতো নানা মিষ্টির বৈচিত্রে পুজোর আমেজ যেন জাঁকিয়ে বসে সুজনের মণ্ডপে।
এই বাৎসরিক পুজোর যাবতীয় প্রস্তুতি কিন্তু শুরু হয় অন্তত মাস ছয়েক আগে থেকে। সুজনের পুজো কমিটির প্রথম মিটিংয়ের নোটিস, এখানকার প্রবাসী বাঙালির জীবনে খুঁটি-পুজোর মতোই তাৎপর্যপূর্ণ। পুজোর দিন যত এগিয়ে আসতে থাকে, ততই বেড়ে চলে কমিটির ব্যস্ততা। আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে সপ্তাহান্তে নাটক আর নাচ-গানের মহড়া। প্রতি বছরেই আসন্ন পুজোর আয়োজনের যে এই চিরন্তন পর্যায়ক্রম— এর আকর্ষণ কিন্তু আসল পুজোর দিনগুলির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy