ক্যালিফোর্নিয়ার শরতের নীল আকাশে এখন হেমন্তের আগমনী সুর। সোনালি রোদে পাতা রঙ বদলাচ্ছে, অথচ প্রবাসী বাঙালিদের হৃদয়ে বাজছে একটাই সুর, ‘পুজো আসছে’। দূর প্রবাসে থেকেও সেই আবেগের টানেই এ বছর পাঁচ বছরে পা দিল সান ফ্রান্সিসকোর ‘প্রথমা’র দুর্গোৎসব।
সংগৃহীত চিত্র।
শুরুটা হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। কয়েকজন প্রবাসী বাঙালি আর নতুন প্রজন্মের উৎসাহী তরুণ-তরুণীরা মিলে ভেবেছিলেন—নিজেদের হাতে গড়া এক দুর্গাপুজো হবে, যেখানে থাকবে ঐতিহ্য, মিলেমিশে কাজ করার আনন্দ, আর সবার জন্য এক উন্মুক্ত মিলনমেলা। সেখান থেকেই জন্ম নেয় ‘প্রথমা’।
সংগৃহীত চিত্র।
প্রতি বছরই ‘প্রথমা’ তাদের পুজোর আয়োজনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। এ বছরের বিশেষ আকর্ষণ হল মণ্ডপ। ক্যালিফোর্নিয়ার বুকে যেন এক টুকরো বেলুড় মঠ গড়ে উঠেছে। সব চেয়ে অবাক করা বিষয় হল, এই বিশাল কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন ‘প্রথমা’র সদস্যরাই। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও হাত লাগিয়েছে এই অসাধারণ শিল্প কর্মে। নিজেদের হাতে মণ্ডপের কাঠামো গড়া, তাকে রঙে রাঙানো এবং ফুটিয়ে তোলা— এ যেন শিল্প ও ভক্তির এক দারুণ মেলবন্ধন। ‘প্রথমা’র সভাপতি দীপা মণ্ডল বললেন, ‘‘আমাদের পুজো মানে শুধু প্রতিমা দর্শন নয়। এটা হল এক সঙ্গে কাজ করার, স্বপ্ন দেখার আর সেই স্বপ্ন পূরণ করার আনন্দ। এই আনন্দের টানেই প্রবাসে থেকেও বাঙালি নিজের শেকড়কে খুঁজে নেয়, আর সেই টানটারই নাম ‘প্রথমা’।’’
সংগৃহীত চিত্র।
তিন দিন ধরে চলবে উৎসব। ২৬, ২৭ আর ২৮ সেপ্টেম্বর মণ্ডপ মুখর হবে ঢাকের আওয়াজে, ভেসে আসবে চণ্ডীপাঠ, মহাষ্টমীর অঞ্জলিতে ভরে উঠবে ভক্তির আবহ। প্রতি বছরই থাকছে নিজস্ব পুজোর গান—সদস্যদের নিজেরাই তৈরি করেন সেই বিশেষ সুর। গান, নাচ, ভোগ রান্না—সব মিলিয়ে যেন ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশে ফিরে আসবে বাংলার শরৎ।
সংগৃহীত চিত্র।
পাঁচ বছরে ‘প্রথমা’ হয়ে উঠেছে শুধু এক পুজোর আয়োজন নয়, প্রবাসী বাঙালির অদৃশ্য বন্ধন। যে বন্ধন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিকড়কে মনে করিয়ে দেয়—
পুজো মানেই এক সঙ্গে থাকার আনন্দ, যেখানেই হোক না কেন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।