দুর্গাপুজো মানে শুধু মন্ত্র আর পুষ্পাঞ্জলি নয়, এ এক আবেগ, যা বছরের পর বছর বাঙালির বুকের ভেতরে লালিত হয়। সেই আবেগই যেন প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে ক্যালিফোর্নিয়ার মাটিতে এসে ডালপালা মেলেছে। এখানকার 'সংস্কৃতি'র পুজো এখন শুধু একটা উৎসব নয়, যেন প্রবাসে থাকা বাঙালি হৃদয়ের এক টুকরো কলকাতা। ১৯৯৮ সালে, প্রায় ২৭ বছর আগে ছোট্ট পরিসরে যে পুজোর শুরু, তা আজ এক বিশাল বটবৃক্ষ।
এই পুজোর আলাদা পরিচয় আছে। এখানে কোনও সদস্যপদ বা পদাধিকারীর ভেদাভেদ নেই, সভাপতি থেকে নবীনতম স্বেচ্ছাসেবক, সবাই এক সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই উৎসবকে সুন্দর করে তোলেন।
বসন্তকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় এখানকার পুজোর প্রস্তুতি। পশ্চিমের এই দেশে যখন কাজের লোকের অভাব, তখন ভরসা কেবল স্বেচ্ছাসেবকরা। তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে মণ্ডপ থেকে প্রতিমা, সব কিছুতেই নিজেদের হাতের ছোঁয়া রাখেন। এ বারের আকর্ষণ ‘আদিবাসীদের প্রতিধ্বনি’ থিমের মণ্ডপ। গ্রাম বাংলার আদিবাসী জীবনের প্রতিচ্ছবি এ বার ফুটিয়ে তোলা হবে ক্যালিফোর্নিয়ার বুকে। প্রায় ২০ ফুট উঁচু পিলার আর তাতে বাংলার ঐতিহ্যবাহী ডোকরার কাজ নিঃসন্দেহে দর্শকদের মুগ্ধ করবে। আর এই পুরো মণ্ডপটি তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে।
তিন দিনব্যাপী এই পুজো শুরু হয় মায়ের বোধন দিয়ে। একে বারে সনাতন নিয়ম মেনে কলাবউকে স্থান করে দেওয়া হয়। প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয় আর এই বছর বোধনের দিন দর্শকদের জন্য থাকছে বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী অন্বেষা দত্ত গুপ্ত ও তাঁর দলের সুরের উপহার। পুজোর মূল আকর্ষণ শুরু হবে শনিবার সকাল থেকে। পুষ্পাঞ্জলি, ভোগ আর নানা ধরনের পুজোর আচার চলতে থাকবে সমান্তরাল ভাবে। আর এর পাশেই জমে উঠবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর।
আমেরিকায় থাকা বাঙালিরা এই কয়েকটা দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকেন একটু বাঙালিয়ানায় বাঁচার জন্য। সেই অপেক্ষায় মাত্রা যোগ করে 'সংস্কৃতি'র পুজোর হরেক রকমের আয়োজন। এখানে আড্ডা, গল্প, আর বন্ধুদের সাথে খিচুড়ি খাওয়ার স্বাদ যেমন পাওয়া যাবে, তেমনই এগরোল বা বিরিয়ানির গন্ধ ছেলেবেলার স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনবে। নতুন পোশাকে সেজেগুজে বে এরিয়ার সব বাঙালিরা এক বারের জন্য হলেও এই পুজোয় আসবেনই। কারণ, নতুন বা পুরোনো, সব বাঙালির কাছেই এই পুজো প্রাণের উৎসব। আগামী সপ্তাহে আবারও ‘সংস্কৃতি’ প্রস্তুত সবাইকে নিয়ে এই আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।