১. সরষে মটন - সরষের ঝাঁঝালো স্বাদে মনভরানো মাংস। সরষে-মাছের মতোই খোলতাই স্বাদ। মূলত পাঁঠার মাংসের সঙ্গে সরষে, পেঁয়াজ ও টক দইয়ের রেসিপি। কারণ, ১ কেজি মাংসের সরষে মটন রান্না করতে অন্যান্য মশলার সঙ্গে লাগে ৪০০ গ্রাম পেঁয়াজ, ২০০-২৫০ গ্রাম টকদই আর ৭০-৮০ গ্রাম সরষে বাটা। রান্না কড়াই থেকে নামানোর ঠিক আগে আরও একটু সরষে বাটা ও কাসুন্দি ভালো করে মিশিয়ে সেই মিশ্রণ মাংসের ওপর ছড়িয়ে দিলে সরষে মটন গরম ভাত দিয়ে খেতে জিভে জল এসে যাবে!
২. জংলি মটন - দারুণ মশলাদার এবং সে রকমই সুস্বাদু মটনের পদ। রাজস্থানের মশলা ও লঙ্কার ঝাঁঝে তৈরি বাঙালি ঘরের এক অচেনা মটনের 'ডিশ'। ১ কেজি মাংসের জংলি মটন রান্নার জন্য বাদবাকি সব মশলা ছাড়াও অবশ্যই লাগবে লাল শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ এবং ৮-১০টা কাশ্মীরি মির্চ ওরফে লঙ্কা। এ ছাড়াও ৮-১০টা মটন মশলা, ২ টেবিল চামচ আস্ত গরম মশলা, ২ টেবিল চামচ ঘি, ১০-১২ কোয়া রসুন যে মাংস রান্নায় বিশেষ করে লাগে, বুঝতেই পারছেন, সেটা কতটা বেশি মশলাদার আর স্বাদু হয় খেতে!
৩. চম্পারণ মটন - মাটির পাত্রে রান্না হয়। মূলত 'দম্' পদ্ধতিতে রান্নাটা হয়ে থাকে। এর রেসিপির বিশেষত্ব হল, কাজু-কিশমিশ বাটা। এ ছাড়াও অন্যান্য সব মশলা দিয়ে খুব ভাল করে কষার পর মাংসটা মাটির পাত্রে ঢেলে তাতে পরিমাপ মতো জল দিয়ে মাটির পাত্রের মুখ আটা দিয়ে ভালো করে বন্ধ করে টানা দু'ঘন্টা গ্যাস ওভেনের স্বাভাবিক আঁচে বসিয়ে রাখা হয়। তার পর নামিয়ে মাটির পাত্রের মুখ খুলে তাতে ঘি ছড়িয়ে দিলে চম্পারণ মটনের স্বাদ আরও বেড়ে যায়।
৪. মুচমুচে মটন ভাজা - কাশ্মীরি রান্না। আসল নাম মটন কাবারগাহ্। মূলত দুধ ও বিভিন্ন মশলা দিয়ে তৈরি অসামান্য সুস্বাদু মাংসের পদ। ঘি-তে ডুবিয়ে ভাজা হয় বলে এর ভেতরটা রসালো ও নরম, বাইরেটা মুচমুচে হয়ে থাকে। অন্য সব মশলা ছাড়াও হিং ও কেশর দিয়ে মটন-টা কষা হয় এই রান্নায়। তেজপাতা, ছোট ও বড় এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ থেঁতো করে মিশিয়ে একটা পরিষ্কার সুতির কাপড়ে বেঁধে সেই পুঁটলি আলাদা ভাবে হাঁড়িতে ফোটানো দুধের মধ্যে ফেলে আরও কিছুক্ষণ ফোটাতে হয়। তার পর তাতে কষানো মাংস মিশিয়ে রান্নাটা করতে হবে। অন্যদিকে, টক দই, নুন, গোলমরিচ গুঁড়ো ও বেসন মিশিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে রাখতে হয়। রান্না করা মাংসের টুকরো ওই মিশ্রণে ভালো করে ডুবিয়ে, সব শেষে কড়াইয়ের গরম ঘি-তে ভেজে নিন। আপনার বাড়িতেই 'রেডি' মুচমুচে মটন ভাজা।
৫. দরবারি মটন - আগে আলাদা সেদ্ধ করা মটনের সঙ্গে টক দই ও চিনি ফেটানো মিশ্রণের মূলত রান্না এটা। দরবারি মটনের আরেক বিশেষত্ব এতে কাজু বাদাম, পোস্ত, চারমগজ (ছোট দানার চিনির মতো এক ধরনের সাদা মশলা) এক সঙ্গে বেঁটে রান্নায় দেওয়া হয়ে থাকে। রান্না করা মাখামাখা মাংস উনুন থেকে নামানোর পর উপর থেকে ধনেপাতা ছড়িয়ে পরিবেশন করলে খেতে আরও সুস্বাদু লাগে।
৬. মশলা মটন - নামেই পরিষ্কার কতটা বেশি সব মশলা লাগে এই মটনের পদ রান্নায়। ১ কেজি মাংসে আদাবাটা, রসুন বাটা, গুঁড়ো লঙ্কা, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, গুঁড়ো গরম মশলা, হলুদ গুঁড়ো, শুকনো লঙ্কা, গোল মরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে চায়ের চামচের ১১ চামচ সব মশলা মিশিয়ে মাংস কষা হয়। তার পরেও তাতে আস্ত দারচিনি, ছোট এলাচ, লবঙ্গ মিলিয়ে ২ টেবিল চামচ দিয়ে মাংসটা ১৫ মিনিট পর্যন্ত গরম সরষের তেলে ভাজতে হয়। সব শেষে পরিমাপ মতো জল ঢেলে ওই মাংস সেদ্ধ হলে মশলা মটন খেতে যেন অমৃত!
৭. মটন রা-রা - এই মটনের পদের বিশেষত্ব ১ কেজি মাংসের সঙ্গে ৫০০ গ্রাম মটন কিমা লাগে। ১টা জায়ফল গুঁড়ো করে, ২টো জৈত্রী, ২ চায়ের চামচ ঘি, ১ চামচ লেবুর রস, ১০-১২ কোয়া রসুন অন্যান্য স্বাভাবিক মশলার সঙ্গে দিয়ে মাংসটা ২৫ মিনিট পর্যন্ত কষা হয়ে থাকে। মটন কিমা'টা আলাদাভাবে সেদ্ধ করে মাংসের হাঁড়িতে ঢেলে পরিমাপ মতো গরম জলে প্রয়োজন মতো ৩০-৪৫ মিনিট রান্না করতে হয়। উনুন থেকে নামানোর পরে ধনে পাতা কুঁচি ও অল্প লেবুর রস ছড়িয়ে পরিবেশন করলে মটন রা-রা খেতে আরও অসাধারণ লাগে।
৮. নিরামিষ মটন - এটা আসলে পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া মাংসের এক ধরনের পদ। কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে মা কালীর ভোগে পর্যন্ত এই নিরামিষ মাংস নিবেদন করা হয়ে থাকে। বাটাবাটির ঝামেলাও নেই এই মটন রান্নায়। ৮০০ গ্রাম মাংসে ১৫০ গ্রাম টকদই, পরিমাপ মতো নুন, তেল, ঘি, গোটা জিরে, ধনে, গরমমশলা, দুটো তেজপাতা, হলুদ গুঁড়ো, কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো, কয়েকটা শুকনো লঙ্কা মিশিয়ে মটন'টা ১০-১৫ মিনিট কষিয়ে তাতে মাপ মতো জল ঢেলে মাংস সেদ্ধ হলেই তৈরি নিরামিষ মটন। উনুন থেকে নামানোর পরে ওর উপর ১ টেবিল চামচ গরমমশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে পরিবেশন করলে গরম ভাত দিয়ে খেতে দারুণ লাগে।
৯. হান্ডি মটন - বহু পুরনো দিনের মাংসের পদ। মাটির হাঁড়িতে পুরো রান্নাটা হয়। হাড়িতে প্রথমে ভালো করে সরষের তেল মাখিয়ে নিতে হবে। আলাদাভাবে কড়াইয়ে সব স্বাভাবিক মশলাপাতি দিয়ে মাংস কষিয়ে সেটা হাঁড়িতে ঢেলে তাতে পরিমাণ মতো অল্প গরম জল দিয়ে মাটির হাঁড়ির মুখ আটা দিয়ে ভাল করে বন্ধ করতে হয়। ৪০ মিনিটে মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে হাঁড়ির মুখ খুলে তার উপর লেবুর রস ছড়িয়ে পরিবেশন করুন হান্ডি মটন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy