প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

দুর্গাপুজোর মতোই রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে জড়িয়ে শিঙাড়ার উৎপত্তির গল্প! কী ভাবে তৈরি হল এই জনপ্রিয় পদ?

বাংলার সঙ্গে শিঙাড়ার পরিচয় নিয়ে একটা দারুণ গল্প আছে। জানেন, কী ভাবে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে বাংলায় এই মুখরোচক পদের রাজপাট শুরু?

মিঠুন অধিকারী

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ১৭:৪২
প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

তিনকোনা ময়দার পুঁটলির পেটের মধ্যে পুর ঠাসা। ঘি বা তেলে ফেলে সোনালি করে ভেজে নেওয়া। একখানা কামড় তাতে পড়লে যেন পেটের ভিতর থেকেই বেরিয়ে আসে ধোঁয়া! বাঙালি বাড়ির সান্ধ্য আড্ডার মৌতাত হোক বা অতিথি আপ্যায়নের রসদ– উৎসবে-অনুষ্ঠানে একটু নোনতা নোনতা, ঝাল-ঝাল বললেই যার চাহিদা সব থেকে বেশি থাকে, তারই নাম শিঙাড়া।

এই বাংলার সঙ্গে শিঙাড়ার পরিচয় নিয়ে একটা দারুণ গল্প মুখে মুখে ফেরে। সাল ১৭৬৬। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রর মুখে কোনও স্বাদ নেই। রক্তে চিনির গুঁতোয় একে মিষ্টি খাওয়া বন্ধ, তাতে নাস্তায় ঠান্ডা লুচি পেয়ে হালুইকরের উপর গেলেন বেজায় চটে। হালুইকর রাজাকে শান্ত করতে মিষ্টান্ন বানিয়ে দিতে চাইলেন। মিষ্টির নাম শুনে রাজা আরও অগ্নিশর্মা। হালুইকরকে শূলে চরানোর আদেশ দিলেন। কেঁদেকেটে, পায়ে পড়ে সে প্রাণদণ্ড থেকে রক্ষা পেলেও রাজার হুকুম হল তিন রাতের মধ্যে দেশত্যাগ করতে হবে।

এদিকে হালুইকরের বউ ধরিত্রী বেহরা বললেন– যেতে যখন হবেই, এক বার শেষ চেষ্টা করতে ক্ষতি কী! দ্বিতীয় দিন সকালে পৌঁছোলেন রাজদরবারে। রাজাকে বললেন, তিনি এমন কৌশলে লুচি তরকারি বানাবেন যে, আধ ঘণ্টা পরেও তা গরম থাকবে। রাজা বললেন, তাই হোক। কিন্তু যখনই বলা হবে, তখনই উপস্থিত করতে হবে।

কোমরে আঁচল পেঁচিয়ে ধরিত্রী কাজে লেগে পড়লেন। পাচককে বললেন তরকারি বানাও। আর নিজে বসলেন ময়দার তাল নিয়ে। ছোট ছোট গোল গোল লেচি কেটে দশটা লুচি বেললেন। কাঁচা লুচির মধ্যে তরকারি ভরে তাকে ত্রিভুজের আকৃতি দিলেন। এ বার গরম ঘিয়ে ফেলে সোনালি করে তাদের ভাজা হল। রাজার আদেশ পেয়ে অদ্ভুত দর্শন নতুন এই খাবার পরিবেশন করা হল সোনার থালায়। রাজা হাতে নিলেন একটি। ধরিত্রী দেবী বললেন, “উঁহু, একবারে নয়। ছোট্ট করে একটা কামড় দিন। জিভ পুড়ে যাবে নইলে। আর খেয়ে বলুন, কেমন স্বাদ হয়েছে।

রাজা স্বাদের কথা কিছু বললেন না বটে, তবে ৬ মাস পর সেই দিন প্রথম বার রাজার মুখে রসনাতৃপ্তির হাসি দেখা দিল। খুশি হয়ে তিনি তিন ছড়া মুক্তোর মালা দিলেন ধরিত্রীর হাতে। ধরিত্রী এই খাদ্যের নাম বললেন সমভুজা। ভাষা গবেষকেরা মনে করেন, এই সমভুজাই ভাষার বিবর্তনের ফলে শিঙাড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলা তথা ভারতে যে শিঙাড়া পাওয়া যায়, তার মধ্যে আলু আর অন্যন্য সবজির পাশাপাশি ঝাল লঙ্কা এবং কিছু মশলা ব্যবহার করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজদের আগমনের পর থেকেই এ দেশে আলুর বহুল ব্যবহার শুরু হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বঙ্গভূমিতে পুর হিসেবে সাধারণত আলু, মটরশুঁটি, লঙ্কা ও বিভিন্ন সব্জির তরকারি দেওয়া হয়। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আলাদা আলাদা স্বাদের শিঙাড়া পাওয়া যায়। কোথাও তাতে পনির ব্যবহার করা হয়, তো কোথাও শুকনো ফল। মাছের পুর, মাংসের কিমা ভরা শিঙাড়া তৈরিরও রেওয়াজ হয় পরবর্তী কালে। ক্ষীরের পুর দেওয়া মিষ্টি শিঙাড়ারও চল আছে। এখন আবার চাউমিনের পুর দিয়েও শিঙাড়া তৈরি করা হয়।

তবে ভারতে শিঙাড়ার আবির্ভাব হল কী ভাবে, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। যেমন, বলা হয়, ফার্সি শব্দ ‘সংবোসাগ’ থেকেই এই শিঙাড়া শব্দের উৎপত্তি। আবার কোনও কোনও ইতিহাসবিদের দাবি, গজনবী সম্রাটের দরবারে এক ধরনের নোনতা পেস্ট্রি পরিবেশন করা হতো। তার মধ্যে পুর হিসাবে কিমা ও শুকনো বাদাম গোছের কিছু দেওয়া হত। আবার কোথাও বলা হয়, শিঙাড়ার আবিষ্কার হয় পারস্যে। বিরিয়ানি-মোগলাই খাবারের মতোই শিঙাড়াও ভারতে এসেছে মোগল দরবারের হাত ধরে। সেখানে এর নাম ছিল ‘সমুচা’। তার পরে এক ভারতীয় নাস্তা কারিগরের হাত ধরে সারা দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। পনেরোশো খ্রিস্টাব্দে পঞ্জাবের চণ্ডীগড়ে জনৈক সিং সমুচার মতো সুস্বাদু একটা খাদ্যবস্তু বানান, নাম দেন শিঙাড়া। এই শিঙাড়া ছিল নিরামিষ। তার দেখাদেখি দিল্লির নিজামে আমিষ-নিরামিষ, দুই ধরনের শিঙাড়াই চালু করেন ওই এলাকার মুসলিম নাস্তার দোকানিরা। সেখানে আমিষ পুর তৈরির জন্য কলিজা, আর নিরামিষ পুরের জন্য চিনা বাদাম ও আলুর ব্যবহার ছিল। অপূর্ব স্বাদের কারণে দ্রুত সারা ভারতে সমোসার নাম ছড়িয়ে পড়ে। ভাষাতাত্ত্বিকেরা বলেন, এই সমুচাই নাম বদলে সমোসা হয়ে গিয়েছে।

আর এক মত অনুযায়ী, আজকের শিঙাড়া আসলে ‘সাম্বুসা’ নামের একটি ইরানি খাবার, যা পরে ভারতীয় উপমহাদেশে আসে।

নামে কী বা আসে যায়! সমভুজা, সমুচা, সমোসা বা শিঙাড়া— যে নামেই ডাকা হোক, লাল চাটনির সাথে জুড়িদার এই পদই আজও বাঙালির কাছে সেরা মুখরোচক।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Bengali Snacks
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy