ভেবে দেখুন তো, 'নিরামিষ মাংস' কথাটা শুনলে কেমন একটা খটকা লাগে না? মাংস, তা-ও আবার নিরামিষ? আসলে ‘নিরামিষ’ শব্দটির অর্থ শুধুমাত্র পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া রান্না নয়। মাছ-মাংস-ডিম তো আমিষ বটেই, তার সঙ্গে পেঁয়াজ-রসুনও এই গোত্রেই পড়ে। এমনকী, বাঙালি হেঁশেলে মসুর ডালও অনেক সময়ে নিরামিষের তালিকায় জায়গা পায় না। আর সেই নিরামিষের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক আশ্চর্য রেসিপি—নিরামিষ পাঁঠার মাংসের ঝোল।
একটা সময় ছিল, যখন পুজো-পার্বণে পাঁঠাবলি দেওয়া হতো। সেই পাঁঠার মাংস নিজের হাতে রান্না করতেন মন্দিরের পুরোহিত, যা দেবতাকে ভোগ হিসাবে অর্পণ করা হতো। সেই রান্নায় পেঁয়াজ-রসুনের ব্যবহার ছিল একেবারেই নিষিদ্ধ। আর তার সূত্র ধরেই এই নিরামিষ পাঁঠার মাংসের ঝোল আজও টিকে আছে। এই মাংস রান্নার মূল কারিগরেরা জানতেন, রান্নায় রসুন-পেঁয়াজ না থাকলে অনেকেই হয়তো কাঁচা মাংসের গন্ধের ভয়ে পিছিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু আসল রহস্য লুকিয়ে আছে আদা আর টোম্যাটোর নিখুঁত ব্যবহারে। এতে মাংসের বুননটা এমন ভাবে ধরা পড়ে যে, স্বাদ-গন্ধ সব কিছুই একদম অন্য রকম লাগে।
রেসিপিটা কিন্তু বেশ সহজ। আলাদা করে মাংস ম্যারিনেট করার দরকার নেই। প্রথমে হলুদ, নুন আর গোলমরিচ দিয়ে মাংস সেদ্ধ করে নিন। অন্য দিকে, তেল-ঘি গরম করে তেজপাতা, জিরে, দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ আর কিছুটা হিং ফোড়ন দিন। এ বার এর মধ্যে আদা আর টোম্যাটোর পেস্ট দিয়ে কষাতে থাকুন। যখন তেল ছাড়তে শুরু করবে, তখন সেদ্ধ করে রাখা মাংস মিশিয়ে দিন। স্বাদ অনুযায়ী নুন, লাল লঙ্কার গুঁড়ো আর গরম মশলা মিশিয়ে প্রয়োজন মতো জল দিয়ে দিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল এই ঐতিহাসিক পদ।
অনেকে ভাবেন, পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া মাংসে বুঝি গন্ধ থেকে যাবে, বিস্বাদ ঠেকবে। বাস্তবে হয় ঠিক উল্টো— এই ঝোলে মাংসের আসল স্বাদটাই ফুটে ওঠে। ঝামেলাহীন, ম্যারিনেশনবিহীন, অথচ এমন এক ঝোল, যা এক বার খেলে বারবার রান্নাঘরে ডেকে আনে।
বাঙালি হেঁশেলের সেই পুরনো ঐতিহ্য আজও টিকে আছে এই রেসিপির মধ্যে। নামে নিরামিষ হলেও স্বাদে তা একেবারেই ভিন্ন মাত্রার। যেন বৈপরীত্যেই লুকিয়ে এই রেসিপির আসল জাদু।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।