প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

কালীপুজোর আগে শব্দদানবের ভয়ে জবুথবু? সুস্থ থাকতে কী পরামর্শ বিশেষজ্ঞের?

কালীপুজোর কয়েক দিন আগে থেকেই শহর জুড়ে শুরু হয়ে যায় শব্দদানবের দাপাদাপি।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:২২
সংগৃহীত চিত্র।

সংগৃহীত চিত্র।

কালীপুজোর কয়েক দিন আগে থেকেই শহর জুড়ে শুরু হয়ে যায় শব্দদানবের দাপাদাপি। রাত বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে শব্দবাজি ফাটানোর হিড়িক। এতে সুস্থ মানুষ তো বটেই, বয়স্ক, শিশু, যাঁদের হৃদ্‌রোগের সমস্যা রয়েছে তাঁদেরও নানা সমস্যা দেখা যায়। এই সময় সাবধান থাকতে কী বার্তা দিলেন চিকিৎসক দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় এবং আশিস মিত্র জেনে নিন।

অল ইন্ডিয়া ইএনটি অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট তথা নাক-কান-গলার চিকিৎসক দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, "কালীপুজো, ভাইফোঁটার সময় যে শব্দদূষণটা হয় সেটা বাজির জন্যই হয়। যখন বোম ফাটানো হয় তখন ১৩০ ডেসিবেলের কাছাকাছি নয়েজ লেভেল তৈরি করে, অর্থাৎ যা কিনা একটি জেট ইঞ্জিনের শব্দের সমান। ফলে বুঝতেই পারছেন, যখন হঠাৎ করে কোনও বোম বা শব্দ বাজি কোনও মানুষের সামনে ফাটে তা হলে তাঁর কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে হঠাৎ করে শব্দের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে। কানের পর্দা কেবল ফুটো হয়ে যাওয়া নয়, কানে থাকা অডিটরি নার্ভ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। রোগী কী ভাবে এটা বুঝতে পারেন? হঠাৎ করে কানের কাছে শব্দবাজি বা বোম ফাটার পর তিনি কানে কম শুনতে শুরু করেন, মনে হয় যেন কেমন কান বন্ধ হয়ে গেল।"

কিন্তু কেউ যদি বিপদ এড়াতে, বিশেষ করে অতিরিক্ত শব্দে যাঁদের সমস্যা হয় তাঁরা যদি বাড়ি থেকে না বেরোনোর সিদ্ধান্ত নেন, তাতে কি কাজ হবে? এই বিষয়ে তাঁর জবাব, "হ্যাঁ অনেকে মনে করতেই পারেন যে আমি বাড়িতেই থাকব। বেরোব না এই সময় বাইরে, তা হলে আর আমার কানের কাছে বোম ফাটার সুযোগ থাকবে না। সে ক্ষেত্রে বলে রাখি আমাদের শহরের বসবাসকারী জায়গাগুলোতে শব্দের সহনশীল মাত্রা হল ৫৫ ডেসিবেল পর্যন্ত। এটাকে পেরিফেরাল অ্যাম্বিয়েন্ট নয়েজ বলে। এটা নির্দিষ্ট কোনও জায়গার নয়, ১ বা ১০ স্কোয়ার কিলোমিটার জায়গার সহনশীল শব্দের মাত্রা হল ৫৫ ডেসিবেল পর্যন্ত। সমস্যা হল, যখন অনেক জায়গা জুড়ে এ ভাবে বাজি ফাটতে থাকে তখন, যে জায়গায় সেটা ফাটছে সেখানে ১৩০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ২ বা ৫ স্কোয়ার কিলোমিটারের মধ্যে যদি এ ভাবে অনেকে বাজি ফাটাতে থাকেন তা হলে একটা বিশাল জায়গা জুড়ে এই পেরিফেরাল আয়াম্বিয়েন্ট নয়েজ লেভেল বেড়ে যাচ্ছে। তার ফলে যেটা ৫৫ থাকার কথা রেসিডেন্সিয়াল এরিয়াতে সেটা দেখা যাচ্ছে ৭৫-৮৫ হয়ে যাচ্ছে। এখানেই আপনার প্রশ্নের জায়গা চলে আসছে, কোনও বয়স্ক মানুষ বা কেউ যদি এই সময় বাড়ি থেকে নাও বেরোন, তাঁর কানের সামনে পটকা নাও ফাটে, তাও তাঁর কানের ক্ষতি হতে পারে। কানের কাছে বোম ফাটলে ক্ষতিটা সঙ্গে সঙ্গে হবে, কানের পর্দা ফুটো হওয়া থেকে কম শোনা, নার্ভ নষ্ট হওয়া তৎক্ষণাৎ ঘটবে। আর এ ক্ষেত্রে ক্ষতি হলেও সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যাবে না। কিন্তু এক, দুই বা তিন বছর গেলে আস্তে আস্তে বোঝা যাবে, যেখানে এই সমস্যা নেই, সেখানেও সেই ব্যক্তি কম শুনছেন।"

বাজির দাপটে বেজায় ভোগেন হৃদ্‌রোগের রোগীরাও। এই বিষয়ে ডায়াবেটোলজিস্ট আশিস মিত্র বলেন, "হৃদ্‌রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগেন। এত জোর আওয়াজে তাঁদের ঘুমের ব্যাঘাত হয়, বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।"

সমস্যা যখন আছে, নিশ্চয় প্রতিকারও রয়েছে? সাবধানতা অবলম্বন করতে কী করণীয় এই ক্ষেত্রে? চিকিৎসক দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় বললেন, "একক ব্যক্তি হিসেবে সাবধানতা নিলে হবে না। সকলকে মিলে উদ্যোগ নিতে হবে এটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পুলিশ, প্রশাসন, সংবাদমাধ্যম, ডাক্তার সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসন একা কিন্তু সব একা করতে পারবে না। তারা নিয়ম আনবে, সেটা কার্যকর হল কিনা সেটা দেখবে। পুলিশ আইন ভাঙা হচ্ছে কিনা যেমন দেখে তেমনই সচেতনতা প্রচার করে। এটা পুলিশের তরফে প্রতি বছরই কালীপুজোর আগে করা হয়ে থাকে। ডাক্তার এবং সাংবাদিকদের কাজ বিজ্ঞানসম্মত ভাবে জনগণকে বোঝানো যে এই বাজি ফাটার থেকে কী কী ক্ষতি হতে পারে এবং কেন এটার থেকে বিরত থাকা উচিত উচিত। তবে যাঁদের ভূমিকা সব থেকে বেশি, তাঁদেরই অবদান সবথেকে কম থাকে, সাধারণ মানুষের। যতই সরকার নিয়ম বানাক, যা করুক সেটা মানার দায়িত্ব কিন্তু মানুষের। যে বহুতল আবাসনগুলোতে বেশি বাজি ফাটে সেখানে মিটিং ইত্যাদি করে এই সময় একটা নির্দেশিকা জারি করা উচিত। বয়স্করা মানুষেরা দেখেন যে রাতের দিকে শব্দ বেশি হচ্ছে, সমস্যা হচ্ছে তা হলে তাঁরা যেন কানে ইয়ার প্লাগ লাগিয়ে ঘুমাতে যান। ছোটদের বাজি ফাটানোর সময় সুতির জামা পরানো উচিত, শব্দবাজি যেখানে ফাটছে সেই জায়গার থেকে দূরে রাখা ভাল। প্রয়োজনে দরজা, জানালা বন্ধ রাখতে হবে। তাতে শব্দের মাত্রা কিছুটা হলেও কমবে। আর কানের কাছে এই সময় খুব জোরে শব্দ হওয়ার পর কোনও রকম সমস্যা হলে সেটা যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ পত্র খেয়ে চিকিৎসা শুরু করা যায় তাহলে অনেকাংশেই সেটা ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা টপকে যাওয়ার পর যদি চিকিৎসকের কাছে যান তা হলে কিন্তু তত ক্ষণে নার্ভটার পুরোপুরি ক্ষতি হয়ে যায় যা হওয়ার। তাই এই সময় যদি কোনও মানুষের কিছু সমস্যা হয় তাঁরা যেন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।"

শব্দদানবের হাত থেকে বাঁচতে প্রায় একই সমাধান দিলেন চিকিৎসক আশিস মিত্র। তাঁর কথায়, "নয়েজ ক্যানসেলেশন ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। নতুন যাঁদের বাড়িতে হৃদ্‌রোগের রোগী রয়েছেন, তাঁরা পারলে বাড়ির জানালা, দরজা অত্যাধুনিক সাউন্ডপ্রুফ বানাতে পারেন, এতে রেহাই পাবেন কিছুটা।"

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy