শরৎকাল মানেই এক অন্য রকম আবেগ, এক অন্য রকম উদ্যাপন। ঢাকে কাঠি পড়ার ঢের আগে থেকেই মনটা শুধু উড়ু উড়ু করে। শহর থেকে মফস্সল, উৎসবের মেজাজে একাকার হয়ে যায় চার দিক। বিশেষত বয়স্ক মানুষেরা পুজোর দিনগুলোর জন্য মুখিয়ে থাকেন। বছরের এই ক’টা দিন যেন আবার তাঁদের ফিরিয়ে দেয় তারুণ্যে। হাঁটু বা কোমরের ব্যথা, বাতের ব্যামো, ডায়াবেটিস, কিংবা হৃদরোগ— সব রকম অসুস্থতা ভুলে তাঁরাও মেতে উঠতে চান হই-হুল্লোড়ে। পরিবারের সঙ্গে রাত জেগে ঠাকুর দেখা, ভালমন্দ খাওয়া, নতুন জামাকাপড় পরা— সব আনন্দ ষোলো আনা উপভোগ করতে চান তাঁরাও।
তবে মনে রাখতে হবে, বয়সের ভারে শরীর অনেক সময়ে মনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। এখনকার দিনে ষাট পেরোলেই কমবেশি সবারই কোনও না কোনও অসুখ সঙ্গী হয়। তা সে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস হোক, কিংবা হৃদরোগ। তাই ঠাকুর দেখার নেশায় নিয়মকানুন ভুলে গেলে চলবে না।
আরও পড়ুন:
এই পুজোতে ষাটোর্ধ্ব হয়েও জমিয়ে পুজোর আনন্দ উপভোগ করুন কিছু সাবধানতা মেনে। সে রকমই কিছু উপায় বাতলে দিলেন চিকিৎসক আশিস মিত্র। তাঁর কথায়, ‘‘এখন ষাটোর্ধ্ব প্রায় প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু রোগ রয়েছে। কারও ডায়াবেটিস, কারও উচ্চ রক্তচাপ, আবার কারও হৃদ্রোগ। যাঁদের কিছুই নেই, তাঁরা চিন্তা না করলেও হবে। তবে একটা বড় সমস্যা হল জলশূন্যতা।’’ গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটলে শরীরে টান, ক্লান্তি আসা খুব স্বাভাবিক। তাই পরামর্শ, বাড়িতে বানানো ওআরএস সঙ্গে রাখা। বাজারে পাওয়া ইলেক্ট্রল বা ওআরএস প্যাকেটও ব্যবহার করা যায়। বাজারচলতি নরম পানীয় বা রাস্তার ধারের আখের রস এড়িয়ে যাওয়া ভাল। তার চেয়ে ঢের নিরাপদ বিকল্প হল ডাবের জল।
যাঁদের প্রেশার, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের সঠিক সময়ে ওষুধ খাওয়া জরুরি। যদি পুজোয় রাতে ঠাকুর দেখতে বেরোনোর জন্য ওষুধের সময় বদলাতে হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া দরকার। খাওয়াদাওয়ার দিকেও নজর দিতে হবে। রাত জেগে ঠাকুর দেখতে বেরনোর আগে খেয়ে নেওয়াই উচিত। তবে ভারী খাওয়া একেবারেই নয়, বিশেষ করে হৃদ্রোগীদের ক্ষেত্রে। ‘‘এনজাইনা, হার্ট ফেলিওর বা ইস্কেমিক হার্টের রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে হাঁটার সীমা ঠিক করতে হবে। আর খাওয়ার পরে অন্তত এক ঘণ্টা বিশ্রাম করে তবে বেরনো ভাল,’’ বলছেন চিকিৎসক মিত্র।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সতর্কতা আরও বেশি। বেশি তেল-মশলার খাবার এড়িয়ে চলবেন। পুজো বলে মন একটু লোভী হতেই পারে, কিন্তু সেই লোভে যেন শরীরের ক্ষতি না হয়ে যায়। ইনসুলিন বা ওষুধ যথাসময়ে খাওয়া জরুরি। মিষ্টি বা ‘কার্বোহাইড্রেটে’র দিকে টান বেশি হলেও সে দিকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। ‘প্রোটিন’ আর হালকা ‘ফ্যাট’ নির্ভর খাবার বেছে নিলে শরীর স্বস্তি পাবে।
পুজোর ভিড়ে আর এক সমস্যা বদহজম। বাড়ি হোক বা বাইরে, অতিরিক্ত তেল-মশলায় ভরা খাবার খেলেই সমস্যা বাড়তে পারে। সঙ্গে হজমের ওষুধ রাখলে উপকার মেলে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।