প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

গোয়ার দেবী শান্তা কি আদতে দেবী দুর্গাই? কী বলছে লোককথা

মায়ের রূপ ভারী মনোরম। কোথাও তিনি উপরের দু’হাতে কুঠার ও সর্প ধারণ করে রয়েছেন। নীচের দুই হাতে ধরে রয়েছেন শিব ও বিষ্ণুকে।

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:২২
সংগৃহিত চিত্র

সংগৃহিত চিত্র

ছেলেবেলায় দুই ভাই বোনে ঝগড়া-মারামারি লাগলে, মাঝে মা এসে দাঁড়াতেন। দুই হাতে দুই জনকে নিরস্ত করতেন। কখনও টিকিতে পাক দিয়ে, কখনও মৃদু চপেটাঘাত করে। এই কাহিনিও কতকটা তেমন।

বিভিন্ন লোককথা, কিংবদন্তি এবং পুরাণে যেমন হরি ও হরের বন্ধুত্বের কথা সর্বজনবিদিত, তেমনই হরি ও হরের সংঘাতের কথাও জানা যায়।

এ গল্পের সূত্রপাত তেমনই এক সংঘাতের দিনে। হরি এবং হর অর্থাৎ বিষ্ণু ও শিব দু’জনে দারুণ সংঘাতে লিপ্ত।

এ দিকে জগতের দুই কর্তা যদি সংঘাতে মাতেন, তা হলে জীবকুলের যে অবস্থা হওয়া উচিত, ঠিক তেমনটাই ঘটেছে।

অবস্থা দেখে বড় চিন্তায় পড়লেন ব্রহ্মা। উপায়ান্তর না দেখে এক মনে মাতৃস্তব করতে লাগলেন তিনি। দেবী সাড়া দিলেন।

সংগৃহিত চিত্র

সংগৃহিত চিত্র

বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে দুর্গা উপস্থিত হয়ে দুই হাতে চেপে ধরলেন দু’জনকে।

ঠিক যেমন ভাবে মা সন্তানদের নিরস্ত করেন, ঠিক তেমন ভাবেই নিরস্ত করলেন হরি এবং হরকে। তাঁরা পুনরায় হরিহর আত্মা হলেন এবং দুর্গা দুই পাশে অবস্থান করলেন।

মায়ের মতো শান্তি প্রদান করলেন বলে তিনি হলেন শান্তি প্রদায়িকা দুর্গা, শান্তা দুর্গা।

দেবীর রূপ ভারী মনোরম। কোথাও তিনি উপরের দুই হাতে কুঠার ও সর্প ধারণ করে রয়েছেন। নীচের দুই হাতে ধরে রয়েছেন শিব ও বিষ্ণুকে। কোথাও দেবী মহিষাসুরমর্দিনী স্বরূপা, আয়ুধধারিণী, খড়গ, দণ্ড, শূল, পানপাত্র, ডমরু, বোধিপদ্ম ধারিণী, সর্পহস্তা। বর ও অভয় প্রদায়িনী বোধিপ্রিয়া।

স্কন্দপুরাণের সহাদ্রী খণ্ডে নাগাব্য মাহাত্ম্যে দেবীর উল্লেখ রয়েছে। গোয়া গ্রামের এক সাধক দেবীর এই রূপের সিদ্ধি বা দর্শন পান। তার পরে দেবী অদৃশ্য হয়ে গেলেন পিঁপড়ে মাটির ঢিবিতে। ওই যে পিঁপড়েরা মাটি তুলে পাহাড়ের মতো করে, তারই মধ্যে লীন হয়ে গেলেন তিনি। এই পিঁপড়েদের দেবী শান্তেরির সঙ্গে তিনি যেন একাকার হয়ে গেলেন। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব যাকে দেখলে মানুষ কেরোসিন তেল ঢেলে, কখনো জ্বালিয়ে দিয়ে নারকীয় হত্যা করত, তাদের তিনি দু’হাতে বুকের মধ্যে আগলে রক্ষা করলেন। তাই তিনি শান্তা দুর্গা। দুর্গত ত্রাণকারী দুর্গার শান্ত রূপ।

যথা নিয়মে শারদ নবরাত্রি, মার্গশীর্ষ শুদ্ধ পঞ্চমী, মা ললিতা পঞ্চমী, বসন্ত পঞ্চমী, মাঘ শুদ্ধ পঞ্চমীতে মাতৃপূজা হয়।

দেবীর সর্বাধিক প্রাচীন মন্দিরটি কেলসিতে। এই কেলসি ভূমির এক সুপ্রাচীন ইতিহাস রয়েছে।

কথিত, পিতৃহন্তার প্রতিশোধ নিতে পরশুরাম সমগ্র ভূমিকে ক্ষত্রিয় শূন্য করেছিলেন এবং ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজে সেখানে থাকেননি। পরিবর্তে কোঙ্কনের উপকূলে সহ্যাদ্রি পর্বতমালার গায়ে নিজের আবাস গড়লেন।

গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করলেন পরশুরাম।

সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন দশ গোত্রের গৌড়ীয় সারস্বত ব্রাহ্মণরা। আরাধ্য দেব-দেবীদেরও তাঁরা সঙ্গে এনেছিলেন।

কৌশিক গোত্রের ব্রাহ্মণ তাঁর আরাধ্যা দেবী শান্তদুর্গাকে নিয়ে কেলসিতে বাসস্থান গড়লেন। ব্যস, সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে দুর্গারূপী দেবী শান্তাদুর্গা আজও কল্যাণীয়া রূপে বিরাজমানা। ১৫৬৬ সনে দেবীর মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন গৌড় সারস্বত ব্রাহ্মণ পীঠস্থান কাভালে মঠে প্রতিমা স্থানান্তরিত করা হয়।

এই মঠ আদি শঙ্করাচার্যের গুরু গৌড়পদাচার্যের প্রতিষ্ঠা। তিনি ৭৪০ অব্দে দেবীর পুজো করতেন এই মন্দিরে। দুর্গা যে তাঁরও কুলদেবী। সেখানেই পাকাপাকি স্থান পেল দেবীর আদি বিগ্রহ।

বর্তমানে দুর্গার একাধিক মন্দির রয়েছে কোঙ্কণ অঞ্চল জুড়ে । দেবী রয়ে গিয়েছেন সকলের বরাভয় হয়ে। দেবী দুর্গা সর্বত্রগামী। এই বিশাল দেশে তিনি যে কত ভাবে কত রূপে ছড়িয়ে আছেন, তার ইয়ত্তা নেই।

Goddess Durga
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy