Advertisement
Baba Baro Kachari Temple

কাগজে লিখুন মনের বাসনা, মেটাবেন বাবা ভূতনাথ!

কলকাতার কাছেই বড় কাছারির মন্দির। কাগজের টুকরোয় মনোবাসনা লিখে গাছে বেঁধে আসেন ভক্তরা।

বড় কাছারির মন্দির

বড় কাছারির মন্দির

আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:০০
Share: Save:

হাজার হাজার কাগজের টুকরো। লাল দড়ি দিয়ে বাঁধা রয়েছে রেলিংয়ে। কলকাতার কাছেই বড় কাছারির মন্দিরে রোজকার চেনা দৃশ্য।

এই কাগজে নিজের নিজের মনের বাসনা লিখে বাবা ভূতনাথ এর কাছে সমর্পণ করেন ভক্তেরা। বিশ্বাস করেন, বাবার কাছারিতে দেওয়া এই লিখিত আবেদন ঠিকই গৃহীত হবে। রীতি অনুযায়ী, মানত পূরণ হলে যদি ছেলে হয়, তা হলে মন্দিরে দিতে হয় একটা মাটির গোপাল। আর মেয়ে হলে দিতে হয় একটা মাটির সীতা।প্রেম সফল হলেও কিছু না কিছু উপহার দিয়ে যান প্রেমিক-প্রেমিকারা।

বড় কাছারি কথাটির অর্থ হল বড় কোর্ট। জায়গাটি কিন্তু কলকাতা থেকে কুড়ি কিলোমিটারের বেশি বেশি দূরে নয়। এর আর এক নাম ভুতের কাছারি। এখানে শিব পুজো পান ভূতনাথ হিসেবে।

বিরাট এক অশ্বত্থ গাছের নীচে মন্দির। গাছের গায়েই রয়েছে একটি শিবলিঙ্গ। হিন্দু-মুসলিম সব ধর্মের মানুষ এখানে পুজো দিয়ে বাবা ভূতনাথের কাছে প্রার্থনা করতে পারেন। ফলে বড় কাছারি হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অন্যতম দৃষ্টান্ত।

জনশ্রুতি বলে, বড় কাছারি মন্দির বিখ্যাত নিঃসন্তানদের সন্তানসুখের ইচ্ছা পূরণের জন্য। এ ছাড়াও জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যা, অসুখ, প্রেমে বাধা, এবং বিয়ে না হওয়া-- সবের জন্যই এখানে লোকে পূজা দিতে আসেন।

এ মন্দিরে জড়িয়ে আছে ইতিহাসও। শোনা যায়, নবাব আলীবর্দি খানের শাসনকালের শেষ দিকে মারাঠা বর্গীরা আক্রমণ করেছিল বাংলা। তাদের দৌরাত্ম্যে স্থানীয় গ্রামের লোকজন বাধ্য হয় কাছের একটি জঙ্গলে আশ্রয় নিতে। এই জঙ্গলটি আসলে ছিল শ্মশান। মারাঠা বর্গীরা হিন্দু হওয়ায় ভুতের ভয়ে জঙ্গলে ঢুকতে রাজি হয়নি। এর কিছু দিন বাদে এই শ্মশানে এসে উপস্থিত হন এক জন সাধু। নিজের অলৌকিক ক্ষমতাবলে গ্রামের লোকজনদের সমস্যা এবং শারীরিক অসুস্থতা সারিয়ে দেন তিনি। এর কয়েক বছর পরে নাকি মারাঠাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়ে যায়। তখন গ্রামটি আবার সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে।

পরবর্তীকালে সাধুর মৃত্যুর পর পর এখানেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তার কিছু দিনের মধ্যেই কবর থেকে একটি অশ্বত্থ গাছ গজিয়ে ওঠে। স্থানীয় সকলের ধারণা হয়, ওই সাধু শিবের অংশ ছিলেন এবং মৃত্যুর পরেও অশ্বত্থ গাছের রূপে গ্রামবাসীদের রক্ষা করার জন্য ফিরে এসেছেন। তার পর থেকেই এই জায়গাটি পূজিত হতে থাকে ভূতনাথের কাছারি হিসেবে।

পরবর্তী কালে অবশ্য আর একটা মতও শোনা যায়। তা অনুযায়ী, ১৯৭৮ সালের বিধ্বংসী বন্যায় প্রাচীন অশ্বত্থ গাছটি ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় লোকজন সেই গাছটির পাশে আর একটি নতুন অশ্বত্থ গাছ লাগিয়ে দেন। সময়ের সঙ্গে সেই নতুন গাছটি বড় হয়ে পুরনো গাছটির জায়গা নিয়ে নেয়।

অবস্থান: হাওড়া স্টেশন থেকে এনএইচ ১২ ধরে ঠাকুরপুকুর বাখরাহাট হয়ে রায়পুরের কাছে এই মন্দির। দূরত্ব ৩৪ কিমি। আর হাওড়া থেকে ঠাকুরপুকুর হয়ে গেলে ২০ কিমি।

(এই মন্দির সম্পর্কে প্রচলিত কাহিনিতে জীবন যাপন নিয়ে যে দাবি করা হয়ে থাকে, তা নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন দায়ী নয়। )

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE