চতুর্থী থেকেই এখন ‘মহা’ অভিধা জুড়ে দেওয়া হয়। ‘মহাচতুর্থী’, ‘মহাপঞ্চমী’, ‘মহাষষ্ঠী’... ইত্যাদি। দুর্গাপুজোর সব তিথি কি ‘মহা’ আখ্যা পাওয়ার যোগ্য? একে বারেই নয়। চতুর্থী, পঞ্চমীর মতো তিথিগুলোর সঙ্গে পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। ষষ্ঠীতে বেলতলায় দেবীর বোধন হয়। শাস্ত্র মতে পুজো আরম্ভ হয় সপ্তমীতে। পঞ্জিকাতেও ষষ্ঠী, সপ্তমীর সঙ্গে ‘মহা’ যোগ করা হয় না। তা কেবল অষ্টমী ও নবমীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
কালিকাপুরাণে রয়েছে, ‘বোধয়েদ্বিল্বশাখাসু ষষ্ঠ্যাং দেবী ফলেষু চ’ অর্থাৎ ষষ্ঠী তিথিতে বিল্বশাখার বা বেল গাছের দ্বারা দেবীর বোধন করতে হবে। আরও রয়েছে, ‘সপ্তম্যাং বিল্বশাখাং তামাহৃত্য প্রতিপূজয়েৎ’ সপ্তমী তিথিতে ফের দেবীর পুজো হবে। ষষ্ঠী ও সপ্তমী তিথির সঙ্গে ‘মহা’ যোগ করা হচ্ছে না।
স্মার্ত পণ্ডিত রঘুনন্দন ভট্টাচার্য বলে গিয়েছেন, ‘দুর্গোৎসবের সকল তিথির পূর্বে মহা বিশেষণটি যোগ করা যায় না।’ ‘মহাষষ্ঠী’ ও ‘মহাসপ্তমী’ বলা কোনও মতেই শাস্ত্রসম্মত নয়। রঘুনন্দনের মতে, কেবল অষ্টমী ও নবমী তিথি দুটি ‘মহা’ অভিধা পাওয়ার যোগ্য। তাঁর মতে, “মহাবিপত্তারকত্বাদ্ গীয়তেহসৌ মহাষ্টমী।/ মহাসম্পাদ্দায়কত্বাৎ সা মহানবমী মতা”। অর্থাৎ দেবী দুর্গার আবির্ভাবে ত্রিলোকের মহাবিপদ নাশ হয় বলে অষ্টমী তিথি মহাষ্টমী এবং নবমী তিথি মহাসম্পদ লাভের তিথি বলে মহানবমী।
কালিকাপুরাণ অনুযায়ী, ‘আশ্বিনস্য তু শুক্লস্য ভবেদ্ যা অষ্টমী তিথিঃ। মহাষ্টমীতি সা প্রোক্তা দেব্যাঃ প্রীতিকরী পরা।।’ যার অর্থ আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথি দেবীর প্রীতিকরী। তাই সেটি ‘মহাষ্টমী’ নামে পরিচিত। আরও রয়েছে, ‘ততেঽ নু নবমী যা স্যাৎ সা মহানবমীস্মৃতা। সা তিথিঃ সর্ব্বলোকানাং পূজনীয়া শিবপ্রিয়া।।’ মহাষ্টমী পরবর্তী নবমী তিথি হল সর্বলোকের পূজনীয়া শিবপ্রিয়ার পুজোর তিথি ‘মহানবমী’। শাস্ত্রমতে মহানবমীতেই দেবী সর্বজনের আরাধ্যা হিসেবে ধরা দিয়েছিলেন। শাস্ত্রমতে এই মহাতিথিতেই পুজোর সমাপ্তি। দশমীতে বিসর্জন। সে তিথির পূর্বে ‘বিজয়া’ বসে যাওয়ার কল্যাণে ‘মহা’ যুক্ত করার অবকাশ পায়নি হালের বাঙালি।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।