মাটি দিয়ে গড়া মূর্তি, তার গায়ের সিংহভাগ গয়না রুপোর। ঘোর কৃষ্ণবর্ণা, চতুর্ভুজা দেবী সিদ্ধেশ্বরীর কালীমন্দিরের ইতিহাস লোকমুখে বহু প্রচলিত। জাগ্রত এই মন্দিরকে ভক্তরা চেনেন ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি নামেই। কিন্তু জানেন কি, এই মন্দিরে মানত করেছিলেন স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণও? সেই থেকেই নাকি দেবীর ভোগে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত আহার হল ডাব-চিনি।
সে অনেক কাল আগের কথা। রামকৃষ্ণের ঠিকানা তখন ঝামাপুকুর। প্রথম জীবনে মাঝেমধ্যেই এই মন্দিরে গিয়ে দেবীর সঙ্গে দেখা করতেন তিনি। গান শুনিয়ে প্রসন্ন করতেন দেবীকে। এমনকি পরবর্তীতে দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে থিতু হলেও ভোলেননি পুরনো সিদ্ধেশ্বরী দেবীকে। সময়বিশেষে এই মন্দিরে এসে পুজো দিয়ে যেতেন তিনি।
আরও পড়ুন:
শোনা যায়, শিষ্য কেশবচন্দ্র সেন এক বার ঘোরতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর আরোগ্য কামনাতেই দেবী সিদ্ধেশ্বরীর কাছে ডাব ও চিনি দিয়ে পুজো নিবেদন করেছিলেন রামকৃষ্ণদেব। সুস্থও হয়ে ওঠেন কেশবচন্দ্র। সেই বিশ্বাসে আজও দেবীর কাছে ডাব ও চিনির ভোগ দেওয়া হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, এই ভাবে ভোগ নিবেদন করলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে।
বিধান সরণির উপরে কলেজ স্ট্রিটের কাছে দেবীর এই মন্দিরে সারা বছরই লেগে থাকে ভক্তদের ভিড়। ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারীর হাতে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। উদয়নারায়ণ নিজেও ছিলেন একজন তন্ত্রসাধক। কলকাতার তখনও ‘কলকাতা’ হয়ে ওঠা হয়নি। সুতানুটি-গোবিন্দপুরের বেশির ভাগ অংশই ঢাকা জল ও জঙ্গলের চাদরে। সেই ঘন জঙ্গলের মধ্যে উদয়নারায়ণ স্বহস্তে মাটি দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন এক কালীমূর্তি। যাকে এখনও পুজো করা হয় সিদ্ধেশ্বরী দেবী হিসেবে।
ডাব-চিনি নিরামিষ ভোগ প্রচলিত হলেও, সারা বছরই এই মন্দিরে আমিষ ভোগের রীতি আছে। ব্যতিক্রম শুধু ফলহারিণী পুজো ও দীপান্বিতা অমাবস্যা। বছরের এই বিশেষ দিনগুলিতে সকাল থেকেই মন্দির চত্বরে উপচে পড়ে দর্শনার্থীদের ঢল।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।