প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

ঝিঙে ষষ্ঠীতে ঝিঙে উৎসর্গ করা হয় মা ষষ্ঠীকে! জানুন কেন

বারো মাসের বারোটি ষষ্ঠী প্রতি মাসে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে পালন হয়। এবং পালিত হয় কোনও রকম ষষ্ঠী তিথি ছাড়াই।

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৫ ১৫:৫১
সংগৃহিত চিত্র

সংগৃহিত চিত্র

— ক'টা ঝিঙে দেবো মা?

— বড় বৌমা তুমি দেবে দুটো। মেজো বৌমা তুমি দেবে একটা।

— এমন ভাগের কী কারণ মা?

— সন্তানের সংখ্যা দিয়ে ঝিঙের সংখ্যা হয় বউমা। ভাদ্র মাসের শ্রেষ্ঠ ফসল ঝিঙে হল ক্ষেতের সন্তান স্বরূপ। তোমার পুত্র-কন্যা তোমার সন্তান...

কঠিন হয়ে যাচ্ছে? তা হলে, শুরু থেকেই গুছিয়ে বলছি ব্রত কথা। শাশুড়ি মা পুকুর ঘাটে বসে শুরু করলেন ভাদ্র ষষ্ঠী তথা ঝিঙে ষষ্ঠী বা চাপড়া ষষ্ঠীর ব্রতকথা।

বারো মাসে তেরো পার্বণ বাঙালির শাশ্বত সত্য। এর অর্থ বারো মাসে বারোটি ষষ্ঠী এবং তেরোতম হলো নীল ষষ্ঠী। বারো মাসের বারোটি ষষ্ঠী প্রতিমাসে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে পালন করা হয়। এবং পালিত হয় কোনও রকম ষষ্ঠী তিথি ছাড়াই।

ষষ্ঠী পুজো মূলত করা হয় সন্তানের কল্যাণার্থে। পরিবারের মঙ্গল কামনায় মা ষষ্ঠীকে চিরন্তন মাতৃরূপে কল্পনা করা হয়। মায়েরা উপোস করে ষষ্ঠী দেবীর ব্রত করেন এবং পুজো শেষে তাঁর ব্রত কথা শুনে তবে প্রসাদ গ্রহণ করেন।

মাস ভিত্তিক বারোটি ষষ্ঠী -

বৈশাখ মাস: ধূলা ষষ্ঠী বা চান্দনী ষষ্ঠী

জ্যৈষ্ঠ মাস: জামাই ষষ্ঠী বা অরণ্য ষষ্ঠী

আষাঢ় মাস: শাঁখ বা পালঙ্ক ষষ্ঠী

শ্রাবণ মাস: লুণ্ঠন বা লোটন ষষ্ঠী

ভাদ্র মাস: ঝিঙে বা চাপড়া বা মন্থন ষষ্ঠী

আশ্বিন মাস: দুর্গাষষ্ঠী বা বোধনষষ্ঠী

কার্তিক মাস: জামদানি বা কুশষষ্ঠী

অগ্রহায়ণ মাস: মূলাষষ্ঠী

পৌষ মাস: পাটাইষষ্ঠী

মাঘ মাস: শীতলষষ্ঠী

ফাল্গুন মাস: অশোকষষ্ঠী

চৈত্র মাস: বুড়ির ষষ্ঠী বা নীলষষ্ঠী

প্রতিটি ষষ্ঠী ব্রত সন্তানের গল্পকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। যেমন আজকের দিনের এই বিশেষ ষষ্ঠী। আজ ভাদ্র শুক্লের ষষ্ঠী তথা ঝিঙে বা চাপড়া বা মন্থন ষষ্ঠী।

কাহিনি:

কোনও এক দেশে এক সওদাগর বসবাস করত। তার ভরা সংসার। ঘরে অর্থের অভাব নেই। সওদাগরের তিন ছেলে, তিন ছেলের ঘরে নাতি। সব মিলিয়ে সব সময়ে হাসিখুশি। কিন্তু যা হয়! অর্থ এবং সুখ থাকলে মানুষের মনে অহঙ্কারের বাষ্প জন্মায়। সওদাগরের মনেও তাই হল।

হঠাৎই এক দিন তার মনে হল, এত সম্পত্তি থাকতে তার স্ত্রী ও বধূরা কেন অন্য লোকের পুকুরে ষষ্ঠী করতে, ব্রত সারতে যাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ! লোক লাগিয়ে বাড়ির সামনে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হল।

এক দিন যায়, দু'দিন যায়, তিন দিন যায়। মাস পেরিয়ে যায়। আর একটি ষষ্ঠীব্রত করার সময় চলে আসে। পুকুর গভীর হয়ে অতলান্ত দেখা যায় না। তবু জল আর ওঠে না।

পাড়ার লোকে দূর ছাই করে, একঘরে করে পরিবারকে। বলে, নিশ্চয়ই এর কোন পাপ আছে! না হলে এমন গভীর পুকুর, অথচ জল ওঠে না কেন! সওদাগর মা ষষ্ঠীর কাছে কেঁদে পড়ে।

সেই রাতেই সওদাগর স্বপ্ন দেখে। মা ষষ্ঠী এসে দাঁড়িয়েছেন পুকুর পাড়ে। তাঁর অমন স্নেহময়ী মুখে ক্রোধের ছায়া পড়েছে। মা রুষ্ট হয়ে বলেন, জল হচ্ছে জীবন। জীবনকে আহ্বান করতে হলে আগে মাতৃরূপী জীবনদাত্রীকে আহ্বান করতে হয়। কিন্তু তুমি অহঙ্কারকে আহ্বান করেছ। অহঙ্কার, লোভ-- এরা অতলান্ত এবং শুষ্ক। মানুষকে ভিতর থেকে শুকিয়ে দেয়। তোমার পুকুরটি তোমার অহঙ্কারের বহিঃপ্রকাশ, তাই অমন শুষ্ক।

এর শাস্তি একটি বলিদান। প্রিয় জিনিস ত্যাগ। তোমার সর্বপ্রিয় কনিষ্ঠ নাতিটিকে ওই পুকুরের মাটিতে বলিদান দাও। তা হলেই পুকুরে জল উঠবে। শুনে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে সওদাগর। কিন্তু মা মুখ কঠিন করে থাকেন।

পরদিন চোখের জলে বুক ভাসিয়ে, হাহাকার করে সওদাগরের পরিবার পুকুরের মাটিতে বলিপ্রদান করে নাতিটিকে। অমনি পুকুরের তলদেশ থেকে ভরে আসে জলে। ভীষণ মেঘ গর্জনে শুরু হয় তুমুল বর্ষণ। পুকুরের জলে সাঁতার কেটে শিশু মা বলে মায়ের আঁচল ধরে...

মা ষষ্ঠী প্রসন্ন মুখে সওদাগরের সামনে এসে উপস্থিত হন। বলেন, আদৌ সন্তানটির কিছু হয়নি। আমি ষষ্ঠী মাতা, সন্তানের প্রাণ নিতে পারি না। ওই স্নেহের বস্তু তোমার মনের নিরাপত্তা এবং অহঙ্কারের রূপক ছিল।

তাকে চূর্ণ করলাম। আসলে বলি হল তোমার অহঙ্কারের। জয়ধ্বনি উঠল মা ষষ্ঠীর নামে।

পুকুর প্রতিষ্ঠা হল। গ্রামবাসী সাড়ম্বরে পালন করলেন মা ষষ্ঠীর ব্রতকথা। যেহেতু শিশুটিকে বলি দেওয়ার কথা হয়েছিল, তাই সেই রূপককে ধরে চাপড়া অর্থাৎ সন্তানের রূপক পিটুলি গোলার পুতুল তৈরি করে তাকে কেটে জলে ভাসানো হয় নৈবেদ্যের সাথে। নৈবেদ্য রূপে বিবিধ ফলমূলের সঙ্গে দেওয়া হয় ঝিঙে।

কোথাও চাপড়ার বদলে সন্তানকে ঝিঙের রূপে কল্পনা করা হয়। যেমন, একটি সন্তান হলে একটি ঝিঙে, দু'টি সন্তান হলে দু'টি ঝিঙে। সে ক্ষেত্রে পিটুলি, চিনি, নারকেল কোরা দিয়ে চাপড়া পিঠে করে মায়ের ভোগ দেওয়া হয়। প্রসাদী সেই পিঠে আহার্য্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

অর্থাৎ এই সমস্ত ষষ্ঠীব্রত একটি কথাই বলে। সারা বছর মা সংসারে নানা কাজকর্মে ব্যস্ত থাকলেও তাঁর আসল চিন্তা কেবল তাঁর সন্তানকে ঘিরেই। সন্তানের মঙ্গলের জন্য এক জন মা সব করতে পারেন। ষষ্ঠীব্রত বারবার সেই কথাকেই স্মরণ করায়।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy