দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল পুজোর চার দিন। ঢাকের কাঠি থেমেছে, মণ্ডপে মণ্ডপে নেমে এসেছে বিষাদের সুর। দশমীর বিসর্জন শেষে মনটা একটু হলেও খারাপ, উৎসবের সেই রঙিন ঘোর যেন মুহূর্তেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে। বিজয়ার মিষ্টিমুখ আর শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর্ব চলছে ঠিকই, তবে সামনেই তো সেই কাজের রুটিনে ফেরার পালা।
আরও পড়ুন:
তবে এই মন খারাপ দূর করতে, শনি-রবিবারে ঝোলা কাঁধে কাছেপিঠে বেরিয়ে পড়তেই পারেন। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির মাঝে বা ইতিহাসের পাতায় সামান্য ডুব দিয়ে এলেই মনটা ফের ফুরফুরে হয়ে উঠবে। কলকাতা থেকে এক দিনেই ঘুরে আসা যায়, এমন কয়েকটি মন ভাল করা গন্তব্যের খোঁজ রইল।
দশমীর দুপুরে ইছামতী নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের দৃশ্য দেখতে ভিড় করেন বহু মানুষ। তবে সেই সময়টা পেরিয়ে গেলেও টাকি যাওয়ার আকর্ষণ কিন্তু একটুও কমে না। ছুটির দিন সকালে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় এই সুন্দর জায়গাটিতে। ইছামতী নদীর শান্ত পরিবেশে সময় কাটানো, গোলপাতার জঙ্গলে হেঁটে আসা—সব মিলিয়ে এক বেলাতেই মন ভরে উঠবে। নদীর ধারে বসে শেষ বিসর্জনের টুকটাক স্মৃতি দেখতে দেখতে কাটিয়ে দেওয়া যায় স্নিগ্ধ একটি বিকেল।
দিনের আলোয় এক ঝলকে শান্তিনিকেতনের সংস্কৃতি ও প্রকৃতির স্বাদ নিতে চাইলে এই সপ্তাহান্তের জন্য আদর্শ ঠিকানা এটা হতেই পারে। বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের উপাসনা গৃহ, ছাতিমতলা, কলাভবন, উত্তরায়ণ—সব কিছুই খুব পাশাপাশি থাকায় টোটো নিয়ে পাঁচ-ছয় ঘণ্টাতেই ঘুরে নেওয়া সম্ভব। মিউজিয়ামে রবীন্দ্র-স্মৃতিতে ডুব দিয়ে বিকেলে চলে যান সোনাঝুড়ি বন ও কোপাই নদীর ধারে। শিল্পগ্রাম বা অমর কুটিরে বাংলার লোকসংস্কৃতির ছোঁয়া আর হস্তশিল্প দেখতে পাবেন। কলকাতা থেকে ট্রেন বা সড়কপথে খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়।
পুজো শেষে বৃষ্টিস্নাত আবহাওয়া যদি মন ভার করে দেয়, তবে গাড়ি নিয়ে পাড়ি দিতে পারেন বিষ্ণুপুরের উদ্দেশ্যে। ইতিহাস আর কারুকার্যের এক অসাধারণ মেলবন্ধন এই জায়গা। এখানে টেরাকোটার মন্দিরগুলি দেখা, জয়পুরের জঙ্গলে শাল, সেগুন, মহুয়ার গন্ধও মনকে শান্তি দেয়। প্রকৃতির মাঝে দুপুরের খাবারের জন্য বনলতার মতো ইকো-ফ্রেন্ডলি জায়গায় ঢুঁ মারতে পারেন। অল্প সময়েই ইতিহাসের পাতা উল্টে সন্ধের মধ্যে ঘরে ফেরা সম্ভব।
অক্টোবর থেকে মার্চ মাস হল এই জায়গায় ঘোরার সেরা সময়। বকখালির কাছে এই ম্যানগ্রোভ বেষ্টনী আর সাদা বালির নির্জন সমুদ্র সৈকত, যেখানে দেখা মেলে লাল কাঁকড়ার কলোনি—এক দিনেই মনকে ‘ডিটক্স’ করার জন্য একে বারে আদর্শ। কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার হয়ে নামখানা পেরিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায়। যাঁরা পাখি ভালবাসেন, তাঁদের জন্য এখানে ‘বার্ডওয়াচিংয়ে’র বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। ‘সি-ফুড’ লাঞ্চ সেরে বকখালি বিচ বা ফ্রেজারগঞ্জ উইন্ড-ফার্ম ঘুরে এসে বিকেলে ফেরার পথ ধরলে এক দিনের সফর সম্পূর্ণ হয়।
কলকাতা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কৃষ্ণনগর। ভোরবেলা রওনা দিলে রাতের মধ্যেই ফিরে আসতে পারবেন। পথে ঘুরে নেওয়া যায় ফুলিয়া বা বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য, যেখানে হরিণের দেখা মিলতে পারে। কৃষ্ণনগরে ঘুরে দেখতে পারেন দুর্গা মন্দির বা রোমান ক্যাথলিক চার্চ। যদি সময় থাকে, তবে কৃত্তিবাসের গ্রাম বা বাবলা গ্রামেও যেতে পারেন। ঐতিহ্য আর ইতিহাসের স্বাদ নিয়ে ফিরতে পারবেন এই সফরে।
পুজো শেষ মানেই সব আনন্দ শেষ নয়। কাজের ফাঁকে ছোট ছোট এমন সফরই মনকে আবার তাজা করে তোলে। তাই সুযোগ পেলে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন।
‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।