Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
bally bridge

Bengal Polls: বালিতে পরিবর্তন নাকি প্রত্যাবর্তন

বিজেপিও অবশ্য পাল্টা দাবি করছে, তাঁদের প্রার্থী বৈশালী ডালমিয়াও ‘ভূমিকন্যা’।

— ছবি সংগৃহীত

— ছবি সংগৃহীত

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪৬
Share: Save:

পরিবর্তন, প্রত্যাবর্তন, বহিরাগত—যে সব শব্দ এ বারের নির্বাচনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বালির ভোটে বোধ হয় তার সব ক’টিই প্রযোজ্য!

আগামী ১০ এপ্রিল রাজ্যের চতুর্থ দফার নির্বাচনের তালিকায় রয়েছে ‘গঙ্গার পশ্চিমকূল বারাণসী সমতুল’ বালি বিধানসভা। সেই দিনই ‘পরিবর্তন’ না ‘প্রত্যাবর্তন’ তারই ছোট পরীক্ষা হবে বালিতে। তবে এখানে প্রত্যাবর্তন মানে মুখের, দলের নয়। বালির বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, তাঁরা ‘পরিবর্তন’ চেয়েছিলেন। তবে সেটা বিধায়ক প্রার্থীর। মানুষের সেই দাবিকেই এ বার মর্যাদা দিয়েছে তৃণমূল। বালিতে প্রার্থী করা হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা তথা পরিচিত শিশু চিকিৎসক রানা চট্টোপাধ্যায়কে। বিজেপিও অবশ্য পাল্টা দাবি করছে, তাঁদের প্রার্থী বৈশালী ডালমিয়াও ‘ভূমিকন্যা’। কারণ, বছর খানেক আগে বালিতে একটি বাড়ি কিনেছেন প্রয়াত ক্রিকেট প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়ার কন্যা।

যদিও বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘গত পাঁচ বছরে বিধায়ককে সব সময়ের জন্য পাওয়া যায়নি। কলকাতা থেকে যাতায়াত করতেন। বালিতে বাড়ি কিনেছেন শোনা গেলেও, সেখানে থাকেন তাঁর এক ঘনিষ্ঠ কর্মী।’’ তাই মাস কয়েক আগে দলবদল করে বৈশালীর পদ্ম শিবিরে যোগ দিয়ে ফের বালিতেই প্রার্থী হওয়াকে ‘নতুন বোতলে পুরনো পানীয়’-র সঙ্গেই তুলনা করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘তৃণমূলে থাকার সময়েই যদি ব্যক্তি বৈশালীর গ্রহণযোগ্যতা না থাকে, তা হলে বিজেপি হিসেবে তাঁকে মানুষ কতটা গ্রহণ করবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, পতাকার রং বদলালেই তো অতীত মুছে যায় না।’’

‘নিন্দুক’দের কথায় কান দিতে নারাজ বৈশালী। ২২ গজের পিচে দাঁড়িয়ে ছক্কা হাঁকানোর ঢঙে তাঁর দাবি, ‘‘পাঁচ বছর ধরে বালির মানুষ আমায় চেনেন, জানেন। যখনই বিপদে পড়ে ফোন করেছেন, আমাকে
পাশে পেয়েছেন। দুঃস্থ মেয়ের বিয়ে দেওয়া থেকে মানুষের চিকিৎসা এমনকি, লকডাউন, আমপানেও নিজে মানুষের পাশে থেকেছি।’’ কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বালিতে তৃণমূল মাত্র ২৯৫ ভোটে জিতেছিল। ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে শাসকদলের হার হয়েছিল ৭টি ওয়ার্ডে। অর্থাৎ লোকসভা ভোটের নিরিখে বালিতে তৃণমূলের ভিত অনেকটা দুর্বল। প্রশ্ন উঠেছে, এর পিছনে কি অতীতের বিধায়কের জায়গা থেকে কোনও খামতি ছিল?

তৃণমূল যুব’র রাজ্য সম্পাদক তথা বালির নির্বাচনের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান কৈলাস মিশ্র বলছেন, ‘‘বিধায়ক তো দায় এড়াতে পারেন না। কারও সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ ছিল না। নিজের গোষ্ঠী নিয়ে চলতেন। সে জন্য এ বারে প্রার্থী বদল করে স্থানীয় স্বচ্ছ মুখ আনা হয়েছে। ফলে আমাদের লড়াই সহজ হবে। বালির মানুষ বুঝবেন, আমরাও সেই বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলাম।’’ বৈশালীর অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘‘লোকসভায় খারাপ ফলাফলের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরদের ভাবমূর্তিই দায়ী।’’ কাউন্সিলরদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ কিন্তু অমূলক নয়। লিলুয়ার ভাঙাচোরা রাস্তার পাশের এক দোকানি বললেন, ‘‘বিধায়ক করেননি মানলাম। কিন্তু কাউন্সিলরেরা তিন বছর ক্ষমতায় থেকে কী করেছেন?’’

লিলুয়ার ভট্টনগর বাজারের কাছে এবড়োখেবড়ো রাস্তাতেই চলছিল মিছিলের প্রস্তুতি। সেখানে দাঁড়িয়ে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী দীপ্সিতা ধর বললেন, ‘‘এত গরমেও লিলুয়ার একটা অংশে জল জমে রয়েছে। উন্নয়ন যে হয়নি তার ছাপ সর্বত্র। তাই স্বাস্থ্য, নাগরিক পরিষেবার উপর প্রচারে জোর দিচ্ছি। খেলার মাঠেও তো এখন বহুতল মাথা তুলছে। এগুলি বাঁচাতে হবে।’’ বালির উন্নয়ন নিয়ে কমবেশি ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয় মহলেও। তবে সম্প্রতি বাসিন্দাদের বড় ক্ষোভে আশ্বাসের মলম লেগেছে। হাওড়া পুরসভার থেকে ফের বালিকে আলাদা করার কথা ঘোষণা হয়েছে। বেলুড়ের এক প্রবীণের মন্তব্য, ‘‘না আঁচালে কিছুই বিশ্বাস নেই! তবে এত দিনে বালির কেউ প্রার্থী হলেন এটাই বেশ ভাল।’’

খোদ বালির বাসিন্দা না হলেও প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে দিনরাত এক করে দৌড়চ্ছেন জেএনইউ-ছাত্রী দীপ্সিতা। কিন্তু লোকসভাতে তো বালিতে সিপিএমের প্রাপ্ত ভোট মাত্র ১৩, ১২৫। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শঙ্কর মৈত্রের দাবি, ‘‘লোকসভা, বিধানসভা এক নয়। ২০১৬-তে ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিলাম। তার থেকে ৫-৭ শতাংশ ভোট বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, বিরোধীদের সম্পর্কে মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে।’’ প্রতি দিন চেম্বার করেও প্রচার-জনসভায় হাজির হয়ে বালির মানুষের কাছে তিনি কতটা জনপ্রিয়, তা বুঝতে পারছেন বলেই জানালেন রানা। বললেন, ‘‘দলমত নির্বিশেষে অধিকাংশ শিশুকে যে পরিষেবা দিয়েছি, সেটা তো বিফলে যেতে পারে না।’’ ২০১১, ২০১৬ পরপর দু’বারই বালির বিধায়ক ছিলেন বহিরাগত। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন, ‘‘শুধু সামাজিক পরিচিতি নয়, রানা স্থানীয় ছেলে। এটাই আমাদের বড় অস্ত্র।’’

সব মিলিয়ে বালিতে ‘পরিবর্তন’ না ‘প্রত্যাবর্তন’ জয় কার হবে, তা বলবে জনতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE