Advertisement
E-Paper

bengal polls: শোকে জ্ঞান হারাচ্ছেন আনন্দের মা

শীতলখুচির পাঠানটুলি গ্রামের টিনের বেড়ার এক চিলতে বাড়িতে শয্যাশায়ী বাসন্তী দেবী কথা বলার মতো অবস্থাতেও নেই।

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৪
 কান্নার রোল বাড়িতে। (নীচে) নিহত আনন্দ বর্মনের মা বাসন্তী বর্মন। রবিবার।

কান্নার রোল বাড়িতে। (নীচে) নিহত আনন্দ বর্মনের মা বাসন্তী বর্মন। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

বিছানায় শুয়ে ডুকরে কেঁদে উঠছেন মা। মাঝেমধ্যে জ্ঞান হারাচ্ছেন এখনও। কয়েক জন মহিলা তাঁকে ঘিরে রয়েছেন। কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছেন, কেউ শুশ্রুষা করছেন। শনিবার ছেলে আনন্দ বমর্নের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে এমনভাবেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন বাসন্তী দেবী। পরিবারের লোকেরা জানান, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন তিনি। স্যালাইনও দিতে হয়েছে। তরতাজা ছেলের মৃত্যুর খবরটা যেন এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে
না তাঁর।

শীতলখুচির পাঠানটুলি গ্রামের টিনের বেড়ার এক চিলতে বাড়িতে শয্যাশায়ী বাসন্তী দেবী কথা বলার মতো অবস্থাতেও নেই। অস্ফুটে শুধু বললেন, “ছেলেটা আর কোনও দিন

মা বলে ডাকবে না। এ বার ভোটের পরে আবার হায়দরাবাদ যাবে বলেছিল। সেটাও আর হল না!” আবার কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন সেখানে উপস্থিত প্রতিবেশী, আত্মীয়ারা। তাঁদেরই একজন বলছিলেন, “এমন ঘটনা যেন কারও ঘরেই না হয়।”

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবা জগদীশ বর্মন, মা বাসন্তী দেবীর দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার। ছোটছেলের মৃত্যুতে প্রায় বাকরুদ্ধ বাবা। শুধুই কাঁদছেন তিনি। কৃষিকাজের ব্যস্ততা না থাকলে আনন্দ হায়দরাবাদ যেতেন ‘পরিযায়ী’ শ্রমিক হয়ে। ওই এলাকার জোড়পাটকিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে অন্য একটি ঘটনায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়। ঘটনাচক্রে তাঁরাও পরিযায়ী শ্রমিক। কেরল থেকে ফিরেছিলেন। আনন্দ হায়দরাবাদ থেকে মাসখানেক আগে বাড়ি ফেরেন। শনিবার সেই আনন্দই পরিবারের সব আনন্দ নিয়ে চলে গেলেন। দাদা গোবিন্দ বলেন, “ভাই নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বাড়িতে থাকলে কৃষিকাজ করত। হায়দরাবাদে রাজমিস্ত্রি, শ্রমিকের কাজ করত।”

ঘরে ঢোকার মুখে আরও কয়েকজন আত্মীয়ের জটলা। গোবিন্দ বর্মনের চোখ ছলছল। ভাইয়ের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তিনিও। কান্না জড়ানো গলায় গোবিন্দ বলেন, “আমিই সকালে ভাইকে বলেছিলাম ভোটার পরিচয়পত্রটা সঙ্গে নিয়ে ৫/২৮৫ নম্বর জায়গির গোলেনাওহাটি ফিফথ প্ল্যান প্রাইমারি স্কুলের বুথে গিয়ে ভোটটা দিয়ে আসতে। ভাই গিয়েছিল। ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিল। ভোটটা দিতে পারল না। তার আগেই তার গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে।” ওই ঘটনায় তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ বলছে, তদন্ত হচ্ছে।

রবিবার দুপুরের শীতলখুচির বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পাঠানটুলির অনেকেই অবশ্য রাজনৈতিক গোলমাল, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ থেকে দূরে। সেখানে শুধুই কান্নার রোল আর শূন্যতা। গ্রামে ঢোকার রাস্তায় এক বাসিন্দা প্রশ্ন করলেন, ‘‘গণতন্ত্রের উৎসবই যদি হবে, তবে কেন প্রাণ ঝরবে? মায়ের কোল খালি হবে? তা সে রং যাই হোক না কেন।’’

Election Violence West Bengal Assembly Election 2021 Sitalkuchi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy