বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য খাদ্য, আশ্রয় ও প্রজননক্ষেত্র হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এটি। সাধারণত সারগাসো সাগরে পাওয়া যেত বলে এর নামকরণ করা হয়েছে সারগাসাম। সেই শৈবালই বর্তমানে নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক শৈবালে পরিণত হয়েছে। এই বেল্টের ওজন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টনে।
২০১১ সাল থেকে আটলান্টিকে এই দানবাকৃতির সারগাসামের দৌরাত্ম্য প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন গোটা আমেরিকা মহাদেশের প্রস্থের প্রায় দ্বিগুণ হয়ে সমুদ্রে বিরাজ করছে শৈবালটি। শৈবালটি জলের ওপর ভেসে থেকে ছোট মাছ, জলজ প্রাণীর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করে। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় যখন এই শৈবালটি নিজের মূল বাসস্থান ছেড়ে বেরিয়ে এসে আটলান্টিক জুড়ে বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করে।
ফ্লরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অফ মেরিন সায়েন্সের ডঃ চুয়ানমিন হু জানিয়েছেন, সাগরের জলে রাসায়নিকের উপস্থিতির হেরফের হওয়ার ফলে শৈবালগুলি দানবাকৃতির হয়ে উঠছে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বেল্টটি। অতিরিক্ত সামুদ্রিক শৈবালের উপস্থিতি প্রবালের বাড়বৃদ্ধি রুখে দেয় এবং সামুদ্রিক জলজ উদ্ভিদের জন্মকে দমিয়ে রাখতে পারে।
প্রবালপ্রাচীরের জন্য প্রয়োজনীয় সূর্যালোককে সমুদ্রের গভীরে প্রবেশে বাধা দেয় বাদামি বেল্টটি। প্রবালের সালোকসংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান না পেলে সেগুলির ধ্বংস অনিবার্য। কার্বন সিঙ্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। শৈবালের পচনের ফলে হাইড্রোজ়েন সালফাইড, মিথেন এবং অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। যখন এটি তীরে ভেসে যায়, তখন এটি উপকূল অঞ্চলের ক্ষতি করে। পর্যটন, মৎস্য এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে ব্যাঘাত ঘটায়।
১৯৯১ সালে ফ্লরিডা উপকূল জুড়ে সারগাসাম জমা হওয়ার ফলে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। আটলান্টিক মহাসাগরের এই বিশাল বাদামি ফিতেটি এখন আর কেবল দ্রষ্টব্য বস্তু হয়েই থাকছে না। বাস্তুতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত এটি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব কমানোর উপায় খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন।
পরিবেশগত প্রভাবের বাইরেও, সারগাসামের ফুল উপকূলীয় অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনছে। সৈকতে শৈবালের ব্যাপক উপস্থিতি পর্যটন, মাছ ধরার শিল্প এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। একসময় যে সৈকতগুলি পরিচ্ছন্ন ও নির্মল ছিল সেগুলি এখন পচা শৈবালে ভরে উঠছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটক উভয়ের জন্যই অপ্রীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে এই বিপদটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy