According to reports American debt reaches 37 Trillion dollar dgtl
America National Debt
আমেরিকার মাথায় ৩৭ লক্ষ কোটি ডলারের ঋণের বোঝা! শুল্কযুদ্ধের মধ্যে প্রকাশ্যে আমেরিকার হাঁড়ির হাল
২০২০ সালের জানুয়ারিতে, ‘কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (সিবিও)’ অনুমান করেছিল যে ২০৩০ সালের আগে আমেরিকার মোট ফেডারেল ঋণ ৩৭ লক্ষ কোটি ডলার পেরোবে না। কিন্তু তার অনেক আগেই সেই ঋণের বোঝা আমেরিকার উপর চেপেছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৫ ০৭:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
ভারত-সহ ৬০টিরও বেশি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে আমেরিকার এই শুল্কযুদ্ধ শুরুর কারণে নানা মহলে সমালোচিত হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
০২১৯
কিন্তু সেই সব সমালোচনা গায়ে মাখতে নারাজ ট্রাম্প। বরং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত একদম সঠিক। শেয়ার বাজারের ‘রেকর্ড-ভাঙা’ লাভ এবং সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য অনুঘটকের কাজ করেছে শুল্ক আরোপের বিষয়, এমনই মনে করেন ট্রাম্প। যদিও আমেরিকার শেয়ার বাজার ট্রাম্পের ভবিষ্যদ্বাণীকে এখনও পর্যন্ত সত্যি করেনি।
০৩১৯
ট্রাম্পের এই শুল্কযুদ্ধ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা অব্যাহত। তবে তার মধ্যেই প্রকাশ্যে এল আমেরিকার হাঁড়ির হাল। রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকার মোট জাতীয় ঋণের পরিমাণ ৩৭ লক্ষ কোটি ডলার ছাড়়িয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার আমেরিকার রাজস্ব বিভাগের একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
০৪১৯
এর আগে আমেরিকার উপর এত পরিমাণ ঋণের বোঝা কখনও চাপেনি। আর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই আমেরিকার ব্যালেন্স শিটে ঋণের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি এবং করদাতাদের উপর ব্যয়ের চাপ বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
০৫১৯
২০২০ সালের জানুয়ারিতে, ‘কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (সিবিও)’ অনুমান করেছিল যে ২০৩০ সালের আগে আমেরিকার মোট ফেডারেল ঋণ ৩৭ লক্ষ কোটি ডলার পেরোবে না। কিন্তু তার অনেক আগেই সেই ঋণের বোঝা আমেরিকার উপর চেপেছে।
০৬১৯
কিন্তু কেন এমন অবস্থা হল আমেরিকার? বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড অতিমারির সময় নজিরহীন সরকারি ঋণ এবং সাম্প্রতিক ব্যয় ব্যবস্থার কারণেই এই বিশাল ঋণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে আমেরিকা।
০৭১৯
২০২০ সালে শুরু হওয়া অতিমারি, ট্রাম্প এবং বাইডেন— উভয় প্রশাসনকেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কোটি কোটি ডলার জরুরি ত্রাণ অনুমোদন করতে বাধ্য করেছে।
০৮১৯
আমেরিকার ঋণ গ্রহণের এই ঢেউ ২০২৪ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এ বছরের শুরুতে বিতর্কিত ‘বড় ও সুন্দর’ বিলে সই করে তা আইনে পরিণত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই আইনের মাধ্যমে মার্কিন সরকার খরচে বিপুল কাটছাঁট করেছে। ‘কর এবং খরচ কাটছাঁটের আইন’-এ বদলেছে দেশের অভ্যন্তরীণ কর ব্যবস্থাও।
০৯১৯
তবে ওই বিলের কারণে আগামী এক দশকে আমেরিকার উপর আরও ৪.১ লক্ষ কোটি ডলারের ঋণ চাপবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
১০১৯
সে প্রসঙ্গে এক গবেষকের কথায়, ‘‘আইনটি নিশ্চিত করেছে যে আমরা ২০২৬ সালের মধ্যে অনেক ঋণ নেব। ২০২৭ সালের মধ্যে আমরা আরও ঋণ নেব এবং এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে।’’
১১১৯
রাজস্ব বিশেষজ্ঞেরাও সতর্ক করেছেন যে, এর ফল সুদূরপ্রসারী। বিশেষজ্ঞদের একাংশ সতর্ক করেছেন যে, বেশি ঋণের বোঝা চাপলে তা সুদের হার বাড়ায়, পরিবার এবং ব্যবসার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করে এবং মূল সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে।
১২১৯
আমেরিকার ক্রমবর্ধমান ঋণের জন্য সে দেশের নাগরিকদের উপর কী প্রভাব পড়বে তা-ও তালিকাভুক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। এর মধ্যে রয়েছে বন্ধক এবং গাড়ি ঋণের হার বৃদ্ধি, ব্যবসায়িক বিনিয়োগ হ্রাসের ফলে মজুরি কম হওয়া এবং পণ্য ও পরিষেবা ব্যয়বহুল হওয়া।
১৩১৯
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে আমেরিকার সরকারি ঋণ বৃদ্ধি সুদের হারের উপর ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি করবে। মুদ্রাস্ফীতিও দেখা যেতে পারে। ওই বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়ন্ত্রিত ঋণ মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে যদি সরকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বেশি বেশি করে টাকা ঢালে।
১৪১৯
রিপোর্ট বলছে, আমেরিকার ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপছে খুব দ্রুত গতিতে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আমেরিকার উপর ঋণ ছিল ৩৪ লক্ষ কোটি ডলারের। জুলাই মাসে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩৫ লক্ষ কোটি ডলার। নভেম্বরে বেড়ে তা হয় ৩৬ লক্ষ কোটি। অর্থাৎ হিসাব অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ মাসে এক লক্ষ কোটি করে ঋণের বোঝা চেপেছে আমেরিকার উপরে।
১৫১৯
আমেরিকার অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে আইনসভার সদস্যদের দ্রুত পদক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। আমেরিকার রাজস্ব বিভাগের রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্রমবর্ধমান ঋণ ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতির সঙ্গেও জড়িত, যা গত অর্থবর্ষের একই সময়ের তুলনায় জুলাই মাসে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৬১৯
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের কারণে রেকর্ড রাজস্ব আসা শুরু হয়েছে আমেরিকায়। কেবল জুলাই মাসেই ২১০০ কোটি ডলার আয় করেছে সে দেশের সরকার, যা গত বছর এই সময়ের তুলনায় ২৭৩ শতাংশ বেশি। তা সত্ত্বেও ঋণ বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে আমেরিকায়।
১৭১৯
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে ট্রাম্প শুল্ককে মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ‘হাতিয়ার’ হিসাবে ব্যবহার করলেও এখনও সরকারি ব্যয় রাজস্বের চেয়ে বেশি হচ্ছে। ঋণের বোঝাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওই বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, আরও পণ্য আমদানি করে শুল্ক আদায় বৃদ্ধি করলেও ঘাটতি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাবে না।
১৮১৯
২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৭৭ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন ট্রেজ়ারি সিকিউরিটি ছিল চিনের কাছে। জাপানের পর মার্কিন বন্ডের বিনিময়ে আমেরিকাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণপ্রদানকারী দেশ হল চিন।
১৯১৯
মোট বিদেশি ঋণের ১১ শতাংশ চিন থেকে নিয়েছে আমেরিকা, যা মোট জাতীয় ঋণের ২ শতাংশ। মার্কিন বন্ডের বিনিময়ে ২০১১ সালে আমেরিকাকে ১.৩ লক্ষ কোটি ঋণ দিয়েছিল বেজিং। গত কয়েক বছরে সেই প্রবণতা কমেছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে মার্কিন বন্ড কেনা কমিয়েছে ড্রাগন সরকার।