কী এই টরেস আর্থিক কেলেঙ্কারি? সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংস্থার নামে বিনিয়োগ স্কিম চালু করে মুম্বইয়ের সংস্থাটি। বিনিয়োগ করলে অনেক গুণ টাকা ফেরত দেওয়ার আকর্ষণীয় প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৩১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
বহু টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে গ্রাহকদের থেকে টাকা তুলেছিল এক গহনা সংস্থা। প্রায় সওয়া লক্ষ গ্রাহকের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠল সেই গহনা সংস্থা টরেস জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে। মনে করা হচ্ছে, প্রতারণা করা অর্থের পরিমাণ কয়েকশো কোটি পর্যন্ত হতে পারে।
০২১৮
যদিও সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, আর্থিক কেলেঙ্কারি এবং সংস্থার সম্মান নষ্ট হওয়ার নেপথ্যে রয়েছেন সংস্থার সিইও এবং অন্যান্য কয়েক জন কর্মচারী।
০৩১৮
‘টরেস জুয়েলার্স’-এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছিল, ‘‘সিইও তৌসিফ রেয়াজ এবং অ্যানালিস্ট অভিষেক গুপ্ত পুরো বিষয়টির সঙ্গে জড়িত। টরেসের নাম ডুবিয়েছেন তাঁরা।’’
০৪১৮
কিন্তু কী এই টরেস আর্থিক কেলেঙ্কারি? সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংস্থার নামে বিনিয়োগ প্রকল্প চালু করে মুম্বইয়ের সংস্থাটি। বিনিয়োগ করলে অনেক গুণ টাকা ফেরত দেওয়ার আকর্ষণীয় প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।
০৫১৮
ময়সানাইট পাথরে বিনিয়োগের জন্য সাপ্তাহিক ৬ শতাংশ অর্থ ফেরতের প্রস্তাবও দেওয়া হয় সংস্থার তরফে।
০৬১৮
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোনও গ্রাহক এক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলে তাঁকে ১০ হাজার টাকার মূল্যের ময়সানাইট পাথরের দুল উপহার দেওয়া হত।
০৭১৮
যদিও পরে দেখা যায় সেই পাথরগুলি নকল। তবে সংস্থার দাবি, দুলের পাথর যে নকল তা নিয়ে আগেই জানানো হয়েছিল গ্রাহকদের এবং দুলটি কেবল টোকেন হিসাবে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
০৮১৮
প্রাথমিক ভাবে, প্রচুর ফেরত পাওয়ার আশায় অনেকে টোরেসে বিনিয়োগ করেন। অনেকে আবার বিনিয়োগ করেছিলেন সংস্থার ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’র কথা ভেবে।
০৯১৮
সোনায় বিনিয়োগে বার্ষিক ৪৮ শতাংশ, রুপোয় বিনিয়োগে ৯৬ শতাংশ এবং ময়সানাইট কেনাকাটায় ৫২০ শতাংশ ফেরতের প্রতিশ্রতি দেওয়া হয়েছিল সংস্থার তরফে। তবে তার কিছুই হয়নি। প্রতারণার শিকার হন গ্রাহকেরা।
১০১৮
প্রথমে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বরের পরে গ্রাহকদের টাকা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সংস্থার এজেন্টরাও ফোন ধরতে চাইছিলেন না। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূল আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছিল ২১ জুন থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে।
১১১৮
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রভাবিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির। প্রচুর লাভের আশায় হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন টরেসে। বিত্তশালীদের কেউ কেউ কোটি টাকাও বিনিয়োগ করেন।
১২১৮
আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ তুলে পুলিশের দ্বারস্থ হন অনেকেই। তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ইডিও ওই মামলায় মুম্বই এবং জয়পুরের মোট ১০টি জায়গায় অভিযান চালায়।
১৩১৮
আর্থিক জালিয়াতির তদন্ত চালিয়ে দক্ষিণ মুম্বইয়ের উমরখান্দির বাসিন্দা সারভেহ অশোক সার্ভে, উজবেকিস্তানের নাগরিক তানিয়া ওরফে তাজাগুল কারাক্সানোভনা জাসাতোভা এবং রাশিয়ান নাগরিক ভ্যালেন্তিনা গণেশ কুমার নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।
১৪১৮
তবে বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা শুরু হতেই নাকি ভারত ছেড়ে পালিয়ে যান কেলেঙ্কারির ‘মাস্টারমাইন্ড’ ইউক্রেনীয় নাগরিক জন কার্টার এবং ভিক্টোরিয়া কোওয়ালেঙ্কো। ওই মামলায় আট ইউক্রেনীয় ও এক জন তুর্কি নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল ব্লু কর্নার নোটিস জারি হয়েছে।
১৫১৮
সিইও তৌসিফকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তৌসিফের দাবি ছিল, তিনিই পুরো কেলেঙ্কারির পর্দাফাঁস করেছেন। কিন্তু পুলিশের সন্দেহ হয় যে, তৌসিফ অন্যতম মূলচক্রী। তবে তত দিনে তিনি ফেরার। তাঁর বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি হয়। পরে ফাঁদ পেতে পুণে থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তদন্তে আরও উঠে আসে, তৌসিফই আদতে জন কার্টার। ওই নামেই কেলেঙ্কারি চালাচ্ছিলেন তিনি।
১৬১৮
যদিও তৌসিফ দাবি করেন যে, তিনি ‘টরেস জুয়েলারি’র মূল সংস্থা ‘প্লাটিনাম হার্ন প্রাইভেট লিমিটেড’-এর সিইও নন। টরেসের মালিক বা সংস্থার অংশীদারও নন। ইউক্রেনীয় মূলচক্রীরা তাঁকে ফাঁসাচ্ছেন বলেও তাঁর দাবি।
১৭১৮
বর্তমানে আর্থিক কেলেঙ্কারির ওই মামলার তদন্ত করছে অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখা। প্রতিবেদনে অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রের আমানত সংরক্ষণ আইন এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) একাধিক ধারার অধীনে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
১৮১৮
অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখা আদালতকে জানিয়েছে, টরেস জুয়েলারির কেলেঙ্কারিতে প্রায় ১১ হাজার বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছে তারা। সব মিলিয়ে শতাধিক কোটি হারিয়েছেন ওই বিনিয়োগকারীরা।