All need to know about Nellie Massacre in Assam and why the incident resurfaces after more than 40 years dgtl
Nellie Massacre
সাত ঘণ্টায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী নির্মমতম হত্যাকাণ্ড, অসমে নির্বাচনের আগে কেন আবার চর্চায় নেলি গণহত্যা?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে নির্মম গণহত্যার তকমা পেয়েছিল নেলি গণহত্যাকাণ্ড। দেশভাগ-পরবর্তী ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে মারাত্মক গণহত্যা হিসাবেও বিবেচিত হয় সেই ঘটনা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
২০২৬ সালের অসম বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবার চর্চায় শিউরে ওঠা নেলি গণহত্যাকাণ্ড। সেই হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী তিওয়ারি কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতে তৎপর হয়েছে সে রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।
০২২৪
রাজনীতির অলিন্দে ঘোরাফেরা রয়েছে এমন অনেকেরই বিশ্বাস, আসন্ন নির্বাচনের আগে বিশেষ গুরুত্ব পাবে নেলি গণহত্যার সেই রিপোর্ট। ভোটের আগে এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনে বিজেপি মেরুকরণের রাজনীতি করতে চাইছে বলেও দাবি করছেন অনেকে।
০৩২৪
কিন্তু কী এই নেলি গণহত্যাকাণ্ড? কেনই বা ভারতের ইতিহাসে অন্যতম অন্ধকার অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত হয় এই ঘটনা?
০৪২৪
১৯৮৩ সাল। অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত, ভোটাধিকার সংশোধন, বাতিল এবং নির্বাসনের দাবিতে অসম তখন উত্তাল।
০৫২৪
‘অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএএসইউ)’ এবং ‘অল অসম গণ সংগ্রাম পরিষদ (এএজিএসপি)’-এর নেতৃত্বে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ সাল— ছ’বছর ধরে চলেছিল এই আন্দোলন, যা বিদেশি-বিরোধী আন্দোলন নামেও পরিচিত হয়েছিল।
০৬২৪
এই আন্দোলন ছ’বছরের দীর্ঘস্থায়ী আইন অমান্য অভিযান, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ব্যাপক জাতিগত হিংসার সময়কালকে সংজ্ঞায়িত করে। ১৯৮৫ সালে অসম চুক্তির মাধ্যমে এই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে।
০৭২৪
এই অসম আন্দোলনেরই অন্যতম অন্ধকার দিন ১৯৮৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন সকালে মধ্য অসমের নগাঁও-মরিগাঁও বেল্টে তিওয়ায়ের (লালুং) গ্রামবাসী এবং এলাকার বাংলাভাষী মুসলিমদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনায় নেলির আশপাশের ১৪টি গ্রামে হিংসার সূত্রপাত হয়।
০৮২৪
দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাত চলেছিল প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে। আর এই সাত ঘণ্টার মধ্যেই নগাঁও জেলার আলিসিংহা, খুলাপাথর, বসুন্ধরী, বাগডুবা বিল, বাগডুবা হাবি, বোরজোলা, বুটুনি, ডোঙ্গাবরি, ইন্দুরমারি, মাটি পর্বত, মুলাধারী, মাটি পর্বত নং ৮, শিলভেটা, বরবুড়ি এবং নেলি— এই ১৪টি গ্রামের ২০০০-৩০০০ মানুষ প্রাণ হারান। তবে বেসরকারি হিসাবে সেই সংখ্যা ছিল ৫০০০-এরও বেশি। সেই ঘটনাই নেলি গণহত্যা নামে পরিচিত।
০৯২৪
বলা হয়, নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন বাংলাভাষী মুসলিম। এ-ও বলা হয়, মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল শিশু, মহিলা এবং বয়স্ক। কিছু পরিবারের সব সদস্যকেই খুন হতে হয়েছিল।
১০২৪
সংবাদমাধ্যমের তিন জন কর্মী সেই গণহত্যার সাক্ষী ছিলেন। মাঠের মধ্যে মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখেছিলেন তাঁরা। নিহতদের বিদেশি এবং বাংলাদেশি বলা হলেও অনেকেই ওই গ্রামগুলিতে বাস করছিলেন ১৯৩০ সাল থেকে।
১১২৪
অভিযোগ উঠেছিল, নেলিতে যে হিংসা ছড়িয়েছিল, তার কান্ডারি ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা, মূলত কৃষকেরা। বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, ১৯৮৩ সালে অসমে বিতর্কিত নির্বাচনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ৪০ লক্ষ বাংলাভাষী মুসলিমকে ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর আন্দোলন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল।
১২২৪
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে নির্মম গণহত্যারও তকমা পেয়েছিল নেলি গণহত্যাকাণ্ড। দেশভাগ-পরবর্তী ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে মারাত্মক গণহত্যা হিসাবেও বিবেচিত হয় সেই ঘটনা।
১৩২৪
নেলি হত্যাকাণ্ডের কারণ খুঁজতে দু’টি প্রধান তদন্ত হয়েছিল সেই সময়। বিবরণও ছিল দু’টি। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে গৌহাটি হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ত্রিভুবন প্রসাদ তিওয়ারির নেতৃত্বে তিওয়ারি কমিশনকে অসম সরকার তদন্ত কমিশন আইনের অধীনে নিযুক্ত করেছিল।
১৪২৪
ঘটনা পূর্ববর্তী অস্থিরতার কারণ খুঁজে বার করা, প্রশাসনিক ত্রুটি চিহ্নিত করা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিওয়ারি কমিশনকে।
১৫২৪
আবার ১৯৮৪ সালে সেই হত্যাকাণ্ডের কারণ যাচাই করার দায়িত্ব হিমাচল প্রদেশ হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি টিইউ মেহতার নেতৃত্বে গঠিত মেহতা কমিশনের হাতে তুলে দেয় অসম রাজ্যিক মুক্তিযোদ্ধা সমিতি।
১৬২৪
মেহতা কমিশন ছিল একটি বেসরকারি, নাগরিক সমাজের নেতৃত্বে তৈরি বিচার বিভাগীয় তদন্ত, যা তিওয়ারি রিপোর্ট প্রকাশে সরকারের অস্বীকৃতি এবং নিরপেক্ষ তদন্তের অভাবের প্রতি ব্যাপক অসন্তোষের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছিল।
১৭২৪
উভয় কমিশন ১৯৮৩ সালের নির্বাচনের আগে, সময় এবং পরের হিংসার কারণ এবং পটভূমি পরীক্ষা করে দেখলেও, তাদের রিপোর্টে ফারাক ছিল বিস্তর।
১৮২৪
তিওয়ারি কমিশন যেখানে নেলি-সহ বিভিন্ন জেলায় হিংসার ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং পদ্ধতিগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিল, সেখানে মেহতা কমিশনের রিপোর্ট একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর জোর দিয়েছিল।
১৯২৪
মেহতা কমিশনের যুক্তি ছিল, তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের অসংশোধিত তালিকার অধীনে নির্বাচন পরিচালনার সিদ্ধান্ত এবং বৃহৎ আকারের রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন নেলির মতো গণহত্যার পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।
২০২৪
আসন্ন অসম নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রায় ৪৩ বছর পর আবার চর্চায় সেই নেলি গণহত্যা। তিওয়ারি কমিশনের রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল বিজেপি সরকার। অসমের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার দীর্ঘ দিন ধরেই অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। সম্প্রতি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযানও চালিয়েছে সে রাজ্যের সরকার।
২১২৪
ইতিমধ্যেই নেলি গণহত্যার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অসম সরকার। বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনার নেপথ্যে ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশ্য নিয়ে জল্পনা এবং বিতর্কও শুরু হয়েছে।
২২২৪
এত দিন পর্যন্ত নেলি গণহত্যার রিপোর্ট দু’টি জনসাধারণের নাগালের মধ্যে ছিল না। গত ২৫ নভেম্বর অসম বিধানসভায় রিপোর্ট দু’টি পেশ করা হয়। ডিজিটাল এবং মুদ্রিত কপিও প্রকাশ করা হচ্ছে।
২৩২৪
বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সেই রিপোর্টগুলি প্রকাশের সিদ্ধান্ত বিরোধী দলগুলির সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, সঙ্গীতশিল্পী জ়ুবিন গার্গের মৃত্যুর বিতর্ক থেকে জনসাধারণের মনোযোগ সরাতে অসমের রক্তাক্ত অধ্যায় পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার।
২৪২৪
নেলি গণহত্যা অসমের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়গুলির মধ্যে একটি। আগামী বছরের এপ্রিলে অসমে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ অসমের একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে রাজ্যের প্রতিটি নির্বাচনের আগেই এই সমস্যার কথা উঠে আসে। তাই সেই নির্বাচনের আগে নেলির রিপোর্ট প্রকাশের সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।