All need to know about Omayra Sanchez, died in Armero tragedy in 1985 dgtl
Omayra Sanchez
ধেয়ে আসে ভয়ঙ্কর ‘লাহার’, মৃত্যু হয় ২০ হাজারের! ৬০ ঘণ্টা আটকে থাকা ছোট্ট ওমায়রাকে মরতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা
৬৯ বছর শান্ত থাকার পরে ১৯৮৫ সালের ১৩ নভেম্বর কলম্বিয়ার নেভাদো দেল রুইজ় আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়। অগ্ন্যুৎপাতের কবলে পড়ে আশপাশের ১৩টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:০৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
১৩ বছর বয়সি এক বালিকা। ধ্বংসস্তূপে জলকাদার মধ্যে আটকে। এক দিকে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অন্য দিকে, তার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন এক সাংবাদিক। সেই সাক্ষাৎকার দিতে দিতেই মৃত্যু হয়েছিল তার। কিশোরীর মৃত্যু চোখের সামনে দেখে নিজেদের সামলে রাখতে পারেননি প্রত্যক্ষদর্শীরা। এমনকি এই ঘটনা যাঁরা পড়েছেন বা শুনেছেন, চোখ ভিজে গিয়েছে তাঁদেরও।
০২২০
কথা হচ্ছে ওমায়রা সানচেজ গারজনের। ১৯৮৫ সালে প্রকৃতির কোপে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় কলম্বিয়ার নেভাদো দেল রুইজ় আগ্নেয়গিরির নিকটবর্তী একাধিক গ্রাম। সেই ঘটনা ইতিহাসে জায়গা পেয়েছে ‘আরমেরো ট্র্যাজেডি’ নামে। সেই ঘটনায় মৃত্যু হওয়া মানুষদের মধ্যে অন্যতম ছিল ওমায়রা। তার মৃত্যু বিশ্ববাসীর মনে গভীর দাগ কেটেছিল।
০৩২০
৬৯ বছর শান্ত থাকার পরে ১৯৮৫ সালের ১৩ নভেম্বর কলম্বিয়ার নেভাদো দেল রুইজ় আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়। অগ্ন্যুৎপাতের কবলে পড়ে আশপাশের ১৩টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্যোগের সতর্কবার্তা দু’মাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে দেশের সরকার আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি বাস করা মানুষজনকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে এবং সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়।
০৪২০
নেভাদো দেল রুইজ় আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছিল আরমেরো শহর। সেই সময় ওই শহরের মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২৯ হাজার। তার মধ্যে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ অগ্ন্যুৎপাতের কারণে মারা যান।
০৫২০
১৩ নভেম্বর স্থানীয় সময় রাত ৯টা নাগাদ আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল। পুরো এলাকা ঢেকে যায় আগ্নেয়গিরির লাভা এবং ছাইয়ের আস্তরণে। তবে শুধুমাত্র লাভার কারণে যে এত প্রাণ গিয়েছিল, তা নয়। বিপদ এসেছিল আরও এক পথে।
০৬২০
যখন নেভাদো দেল রুইজ় আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে গরম লাভা বেরোনো শুরু হয়, তখন নিকটবর্তী হিমবাহ গলে জল সমতলের দিকে গড়িয়ে আসে। এই জল নদীর তীরের পাথর এবং মাটির সঙ্গে মিশে সমতল এলাকায় বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। আগ্নেয়গিরির গরম লাভার সঙ্গে তুষারগলা জল এবং কাদার মিশ্রণ পরিচিত ‘লাহার’ নামে।
০৭২০
রাস্তায় থাকা সব গাছ ও গাড়ি তুলে নিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ২১ কিলোমিটার বেগে সমতলে আছড়ে পড়ে লাহার। লাহারের স্রোত প্রবেশ করে টলিমার আরমেরো শহরে। আরমেরোর প্রায় ৭০ শতাংশ বাসিন্দা লাহারের কবলে পড়ে মারা যান। এই ঘটনাই ‘আরমেরো ট্র্যাজেডি’ হিসাবে পরিচিত। সেই ঘটনায় মৃতদের মধ্যে এক জন ছিল ছোট্ট ওমায়রা।
০৮২০
কলম্বিয়ান কন্যা ওমায়রার জন্ম ১৯৭২ সালের ২৮ অগস্ট। তার বাবা আলভারো এনরিক এবং মা মারিয়া আলেদা। স্থানীয় একটি স্কুলে পড়াশোনা করত ওমায়রা। পরিচিতি ছিল মেধাবী ছাত্রী হিসাবে।
০৯২০
আরমেরোয় যে রাতে লাহার আছড়ে পড়ে, সেই রাতে বাবা, ভাই এবং পিসির সঙ্গে বাড়িতেই ছিল ওমায়রা। মা ব্যবসার কারণে কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটাতে ছিলেন। লাহারের স্রোত যখন ওমায়রাদের বাড়িতে আঘাত হানে, তখন বাড়ির বাকি সদস্যদের সঙ্গে ওমায়রাও ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে।
১০২০
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে উদ্ধারকারী এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা আরমেরোয় পৌঁছোন। ধ্বংসস্তূপ খতিয়ে দেখা শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু ওমায়রাদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপ সরানোর পরেই মর্মাহত হন উদ্ধারকারীরা।
১১২০
উদ্ধারকারীরা দেখেন, ওমায়রা কোনও রকমে তার হাত জলকাদার উপরে তুলে রেখেছে। উদ্ধারকারীদের হাত তুলে কিশোরী জানায় যে, সে বেঁচে আছে। উদ্ধারকারীরা ওমায়রাকে সাহায্যের জন্য ছুটে এলেও খুব শীঘ্রই বুঝতে পারেন, তাকে উদ্ধার করা সহজ নয়।
১২২০
উদ্ধারকারীরা দেখেন, ওমায়রার কোমর থেকে নীচের অংশ জলের তলায় থাকা কংক্রিটের নীচে চাপা পড়েছে। স্বেচ্ছাসেবকেরা অনেক চেষ্টার পর ওমায়রার শরীরের উপরের অংশ কংক্রিটের বাঁধন থেকে মুক্ত করেন।
১৩২০
কংক্রিট থেকে ছোট্ট ওমায়রাকে মুক্ত করার মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম উদ্ধারকারীদের কাছে ছিল না। ওমায়রাকে জলে ভাসিয়ে রাখতে উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা তার শরীরের চারপাশে কাঠের মঞ্চ তৈরি করেন। তার শরীরে একটি টায়ারও লাগানো হয়।
১৪২০
ডুবুরিরা জলের তলায় গিয়ে ওমায়রার শরীর ধ্বংসস্তূপ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। তাঁরা দেখেন, ওমায়রার পা দু’টি ইটের দেয়ালের নীচে চাপা পড়েছে এবং একটি পা বেঁকে গিয়েছে। ওমায়রার পা না কেটে তাকে সম্পূর্ণ ভাবে মুক্ত করা সম্ভব নয় বলেও বুঝতে পারেন উদ্ধারকারীরা।
১৫২০
উদ্ধার করার প্রক্রিয়া চলাকালীন জার্মান সাংবাদিক সান্তা মারিয়া ব্যারাগানের সঙ্গে কথা বলে ওমায়রা। মারিয়ার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি সে গান গেয়ে, লজেন্স এবং সোডা খেয়ে নিজেকে উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা করে।
১৬২০
তবে আটকা পড়ার দ্বিতীয় দিনে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে শুরু করে ওমায়রার শরীর। তৃতীয় দিনে ভুল বকতেও শুরু করে। বার বার বলতে থাকে একটাই কথা— ‘‘আমি স্কুলে দেরি করে পৌঁছোতে চাই না।’’ এমনকি স্কুলে আসন্ন গণিত পরীক্ষার কথাও উল্লেখ করে কিশোরী।
১৭২০
জল এবং ধ্বংসস্তূপের চাপে ওমায়রার চোখ প্রথমে লাল এবং ধীরে ধীরে কালো হতে থাকে। চিকিৎসকেরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে থাকেন। ওমায়রার অঙ্গচ্ছেদ করে নিরাপদ ভাবে তাকে মুক্ত করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সেই মুহূর্তে চিকিৎসকদের কাছেও ছিল না।
১৮২০
সময় আরও গড়ালে যন্ত্রণায় কাতরাতে শুরু করে ওমায়রা। অনেক চেষ্টার পরও যখন উদ্ধারকারী এবং চিকিৎসকেরা তাকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন, তখন তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, ওমায়রাকে শান্ত রাখা এবং তাকে মরতে দেওয়াই হবে সবচেয়ে মানবিক কাজ।
১৯২০
উদ্ধারকারীরা মনে করেন, ওমায়রাকে উদ্ধারের জন্য আরও টানাহ্যাঁচড়া করলে তার কষ্ট বাড়বে বই কমবে না। তাই ওমায়রাকে আশ্বস্ত করতে শুরু করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনগণ। ৬০ ঘণ্টা জলের তলায় আটকে থাকার পর গ্যাংগ্রিন এবং হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ওমায়রা।
২০২০
ওমায়রা মারা যাবার কয়েক ঘণ্টা আগেই ঘটনাস্থলে পৌঁছোন ফোটোগ্রাফার ফ্রাঙ্ক ফোর্নিয়ার। ওমায়রার বেশ কিছু ছবিও তোলেন তিনি। ছবিগুলি প্রকাশ্যে আসার পর এই ছবিগুলি পৃথিবী জুড়ে আলোড়ন ফেলে। ফ্রাঙ্কের তোলা ওমায়রার কিছু ছবি ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফোটো অফ দ্য ইয়ার’-এর তালিকায় নাম তোলে। এই ছবিগুলির মাধ্যমে কলম্বিয়ার সরকারের ব্যর্থতার কথা সারা বিশ্বের কাছে উঠে আসে।