Advertisement
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Egyptian Royal Boat

রাতভর চলত গান, সঙ্গে উদ্দাম নৃত্য! মিশরে সমুদ্রের নীচে খোঁজ মিলল হাজার হাজার বছরের পুরনো ‘প্লেজ়ার বোট’-এর

প্রাচীন আলেকজ়ান্দ্রিয়ার ডুবে যাওয়া একটি বন্দরে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা খননকার্য চালাতে গিয়ে এই বিরল এবং বিলাসবহুল জাহাজটির ধ্বংসাবশেষের হদিস পান। সমুদ্রের মাত্র সাত মিটার গভীরে পলি চাপা পড়ে ছিল কাঠের তৈরি প্রমোদতরীটি। লম্বায় ৩৫ মিটার এবং প্রায় ৭ মিটার চওড়া ছিল এই বিলাসবহুল জাহাজটি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:১১
Share: Save:
০১ ১৪
Egyptian Royal Boat

মিশর মানেই রহস্য। হাজার হাজার বছর ধরে বালিতে ডুবে থাকা রহস্যের আকর ছড়িয়ে সে দেশ জুড়ে। তেমনই এক রহস্যে ঘেরা ইতিহাসের সন্ধান মিলল আলেকজ়ান্দ্রিয়ায় উপকূলতটে। সেই আবিষ্কার নিয়ে প্রবল উত্তেজনা শুরু হয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক মহলে। নয়া আবিষ্কার অবশ্য নতুন কোনও ফারাওয়ের মমি বা সমাধিক্ষেত্র নয়।

০২ ১৪
Egyptian Royal Boat

এটি প্রথম শতাব্দীর গ্রিক ইতিহাসবিদ স্ট্রাবোর বর্ণনার সঙ্গে মিলে যাওয়া একটি প্রাচীন মিশরীয় প্রমোদতরী। রাজারাজড়া বা রাজবাড়ির সদস্যেরা বিশেষ অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতেন এই তরণীটি। এটি আলেকজ়ান্দ্রিয়া উপকূলে আবিষ্কৃত হয়েছে, যা বিশ্ব জুড়ে প্রত্নতাত্ত্বিকদের আলোচনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

০৩ ১৪
Egyptian Royal Boat

প্রাচীন আলেকজ়ান্দ্রিয়ার ডুবে যাওয়া একটি বন্দরে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা খননকার্য চালাতে গিয়ে এই বিরল এবং বিলাসবহুল জাহাজটির ধ্বংসাবশেষের হদিস পান। হাজার হাজার বছর আগে মিশরের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর ও জনপদগুলির মধ্যে একটি ছিল আলেকজ়ান্দ্রিয়া। শহরটি জুড়ে ছড়িয়ে ছিল অপূর্ব সব প্রাসাদ আর মন্দিরের স্থাপত্য নিদর্শন।

০৪ ১৪
Egyptian Royal Boat

প্রাচীন এই শহরের সবচেয়ে নজরকাড়া স্থাপত্যটি ছিল আলেকজ়ান্দ্রিয়া বাতিঘর। উত্তাল সমুদ্রের মাঝখানে আলো নিয়ে জাহাজকে পথ দেখানোই কাজ ছিল প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য ১৩০ মিটার উঁচু ফারোস বাতিঘরটির। প্রাচীন আলেকজ়ান্দ্রিয়ার পোর্টাস ম্যাগনাস-এর (মহান বন্দর) অংশ ছিল অ্যান্টিরোডোস দ্বীপটি।

০৫ ১৪
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে দ্বীপটি সমুদ্রে তলিয়ে যায়। ডুবে যাওয়া আলেকজ়ান্দ্রিয়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে চিহ্নিত অ্যান্টিরোডোস দ্বীপটির কাছেই আবিষ্কৃত হয়েছে রাজকীয় নৌবহরের কঙ্কালটি। নৌকাটির ধ্বংসাবশেষ যেখানে পাওয়া গিয়েছে তার খুব কাছেই মিশরীয় দেবী আইসিসের মন্দির, মাত্র ৫০ মিটার দূরে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে দ্বীপটি সমুদ্রে তলিয়ে যায়। ডুবে যাওয়া আলেকজ়ান্দ্রিয়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে চিহ্নিত অ্যান্টিরোডোস দ্বীপটির কাছেই আবিষ্কৃত হয়েছে রাজকীয় নৌবহরের কঙ্কালটি। নৌকাটির ধ্বংসাবশেষ যেখানে পাওয়া গিয়েছে তার খুব কাছেই মিশরীয় দেবী আইসিসের মন্দির, মাত্র ৫০ মিটার দূরে।

০৬ ১৪
Egyptian Royal Boat

সমুদ্রের মাত্র সাত মিটার গভীরে পলি চাপা পড়ে ছিল কাঠের তৈরি প্রমোদতরীটি। লম্বায় ৩৫ মিটার এবং প্রায় ৭ মিটার চওড়া ছিল বিলাসবহুল জাহাজটি। জাহাজটি এতটাই প্রশস্ত ছিল যে তাতে একটি কক্ষ ও একটি প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হয়েছিল।

০৭ ১৪
Egyptian Royal Boat

জাহাজটির হালের নীচের দিক ছিল সমতল। নৌকার সম্মুখভাগে একটি ধারালো শিকল বসানো ছিল। শান্ত, অগভীর জলপথের জন্য বিশেষ ভাবে নকশা করা হয়েছিল তরণীটি। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, জাহাজটি কেবল দাঁড় দিয়েই চালানো যেত। ২০ জনেরও বেশি মাল্লা টেনে নিয়ে যেত বিশাল আকারের বিলাসবহুল এই নৌকাটিকে।

০৮ ১৪
Egyptian Royal Boat

এই বিলাসবহুল জাহাজটির উল্লেখ করা হয়েছিল গ্রিক ইতিহাসবিদ স্ট্রাবোর বর্ণনায়। প্রায় দু’হাজার বছর আগে খ্রিস্টপূর্ব ২৯ থেকে ২৫ সালের মধ্যে আলেকজ়ান্দ্রিয়া ভ্রমণে গিয়ে প্রমোদতরীর কথা তাঁর লেখায় বর্ণনা করেছিলেন স্ট্রাবো। প্রত্যক্ষদর্শী ইতিহাসবিদের বিবরণ থেকে জানা যায়, বিলাসবহুল এই প্রমোদতরীটি অবকাশযাপনের জন্য ব্যবহার করতেন মিশরীয় রাজপরিবারের সদস্য ও রাজার অমাত্যেরা।

০৯ ১৪
Egyptian Royal Boat

জাহাজের মূল কাঠামোয় পাওয়া গ্রিক ছাঁদের অঙ্কন বা লেখনীগুলি পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞেরা এটিকে প্রথম শতাব্দীর প্রথমার্ধের নিদর্শন বলে ধরে নিয়েছেন। বিশেষ করে নৌকার গায়ে খোদাই করা চিহ্ন ইঙ্গিত দেয় যে এটি আলেকজ়ান্দ্রিয়াতেই তৈরি হয়েছিল। সময়সারণিটিও পর্যটক স্ট্রাবোর বিবরণের সঙ্গে মিলে যায়। ঘন গাছপালা দিয়ে ঘেরা খালের ধারে উৎসব, অবসর এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত এই রাজকীয় জলযানটিকে চাক্ষুষ করেছিলেন স্ট্রাবো।

১০ ১৪
Egyptian Royal Boat

কৌতূহলোদ্দীপক এই জাহাজটি সম্পর্কে স্ট্রাবো লিখেছিলেন, এই জাহাজটি বিলাসের অপর নাম। মূলত রাজকীয় দরবারের সদস্যদের ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত হত এটি। প্রতি দিন এবং রাতে নৌকায় চলত বাঁশি বাজিয়ে গান ও উদ্দাম নৃত্য। সেই দৃশ্য উপভোগ করতে খালের দু’পাশে ভিড় লেগেই থাকত। প্রাচীন মিশরীয় শহরটির উৎসবমুখর পরিবেশের একটি প্রাণবন্ত চিত্র তুলে ধরেছিলেন গ্রিক পর্যটক।

১১ ১৪
Egyptian Royal Boat

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিটাইম আর্কিয়োলজির অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক গডিয়ো এই খননকার্যটি পরিচালনা করেছেন। ব্যবস্থাপনায় ছিল ‘ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট ফর আন্ডারওয়াটার আর্কিয়োলজি’। তিনি বলেন, ‘‘আলেকজ়ান্দ্রিয়ার এই জাহাজটি খুঁজে পাওয়াটা খুবই সাড়া জাগানো ব্যাপার। এত দিন এটির কথা শোনা গেলেও এই প্রথম তা খুঁজে পাওয়া গেল।’’

১২ ১৪
Egyptian Royal Boat

আবিষ্কারের স্থানটি আইসিসের মন্দিরের কাছাকাছি। ফলে ধারণা করা হচ্ছে যে, নৌকাটিতে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছিল। গডিয়োর মতে, জাহাজটি কোনও নৌ অনুষ্ঠানের অংশবিশেষও হতে পারে। সম্ভবত দেবী আইসিসের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি পবিত্র নৌকা ‘নেভিজিয়াম ইসিডিসের’ অংশ ছিল এই তরণী।

১৩ ১৪
Egyptian Royal Boat

গডিয়োর মতে, নৌকাটি সম্ভবত ৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে কোনও বিপর্যয় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ডুবে গিয়েছিল। সেই বিপর্যয়ে আইসিসের মন্দির ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ভূমিকম্প এবং জোয়ারের ঢেউয়ের কারণে আশপাশের উপকূলরেখার বেশির ভাগ অংশই ডুবে গিয়েছিল। মন্দিরের নৌকার অবস্থানের কাছাকাছি থাকার কারণে এই তত্ত্বটি সমর্থন করেছেন অনেক ইতিহাসবিদ।

১৪ ১৪
Egyptian Royal Boat

ধ্বংসাবশেষের উপর গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে সূত্রের খবর। ইউনেস্কোর নির্দেশিকা অনুসারে, সংরক্ষণের জন্য জাহাজটি সমুদ্রের তলদেশেই থাকবে। আশপাশের এলাকায় খননকাজ অব্যাহত থাকবে। জাহাজের গায়ে খোদাই করা ছবি দেখে পরবর্তী কালে প্রাচীন রোমান শহর আলেকজ়ান্দ্রিয়ার দৈনন্দিন জীবন, ধর্মীয় অনুশীলন এবং অভিজাতদের অবসরজীবন সম্পর্কে আরও বিশদ তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy