এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
মঙ্গলবারই চিন প্রভাবিত রাষ্ট্রজোট সাংহাই কোঅপারেটিভ অর্গানাইজ়েশন (এসসিও)-এর দু’দিনের বৈঠক শেষ হয়েছে। আর বুধবার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতার কাছে নিজেদের পরমাণু ক্ষমতা প্রদর্শন করল চিন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান এবং জাপানের বিরুদ্ধে চিনের যুদ্ধজয়কে স্মরণীয় রাখতে ৩ সেপ্টেম্বর দিনটি বিজয় দিবস হিসাবে পালন করে বেজিং। এ বার ৮০তম বিজয় দিবস পালন করছে তারা।
০৪১৮
দিনটি ‘জাপানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জয়’ হিসাবে দেখাতে চাইছে চিন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছে জাপান। জাপানের সংবাদসংস্থা কিয়োডো-র প্রতিবেদন অনুসারে, জাপান তাদের দূতাবাসগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে চিনের এই পরিকল্পনা নিয়ে সতর্ক করেছে।
০৫১৮
বেজিং অবশ্য নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে বিজয় দিবস পালন করছে। এই নিয়ে বেজিং-টোকিয়ো সম্পর্কে ফের টানাপড়েন দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
০৬১৮
উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন ১৯৪৫ সালে জাপানে হিরোশিমা এবং নাগাসাকির বুকে যে পরমাণু বোমা দু’টি আঘাত হেনেছিল, তার থেকে অন্তত ২০০ গুণ শক্তিশালী চিনের এই অত্যাধুনিক আন্তঃমহাদেশীয় পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রটি।
০৭১৮
বিশেষজ্ঞদের অনুমান যদি সঠিক হয়, তা হলে চিনের নতুন আন্তঃমহাদেশীয় কৌশলগত পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রটির হামলার আশঙ্কার মুখে রয়েছে সারা বিশ্ব।
০৮১৮
চিনা ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিবিদ তথা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইয়ং চেংজুন সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, ‘‘ডিএফ-৫সি তরল জ্বালানিযুক্ত আন্তঃমহাদেশীয় কৌশলগত পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রটি চিনের হাতে থাকা ডিএফ সিরিজ়ের ক্ষেপণাস্ত্রগুলির উন্নততম রূপ।’’
০৯১৮
ইয়ং জানিয়েছেন, ডিএফ-৫সির ছ’টি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, ক্ষেপণাস্ত্রটিকে নয়া রূপে সাজানো হয়েছে। এর একটি নতুন কাঠামো রয়েছে, কারণ পুরো ক্ষেপণাস্ত্রটি তিনটি আলাদা আলাদা অংশে পরিবহণ করা হয়। এ-ও আশা করা হচ্ছে যে, এর আগের ডিএফ-৫ সিরিজ়ের ক্ষেপণাস্ত্রগুলির থেকে দ্রুত উৎক্ষেপণ করা যাবে নতুন ক্ষেপণাস্ত্রটিকে।
১০১৮
দ্বিতীয়ত, ডিএফ-৫সি একটি দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে গিয়ে আঘাত হানতে পারবে মারণাস্ত্রটি। আঘাত হানতে পারবে যে কোনও দেশের সামরিক ঘাঁটিতে।
১১১৮
ইয়ং জানিয়েছেন, ডিএফ-৫সির তৃতীয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল, উৎক্ষেপণ পদ্ধতির বৈচিত্র। ডিএফ সিরিজ়ের কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্রগুলি থেকে এটির উৎক্ষেপণ পদ্ধতি অনন্য বলেই জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদ।
১২১৮
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হল দ্রুত উড়ানের ক্ষমতা। কৌশলগত আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটির উড়ানের গতি ১০ ম্যাক (কোনও বস্তুর গতি এবং আশপাশের মাধ্যমের শব্দের গতির অনুপাত। এটি একটি সংখ্যা দিয়ে বোঝানো হয়।) পর্যন্ত উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে ক্ষেপণাস্ত্রটিকে বাধা দেওয়াও মুখের কথা নয়।
১৩১৮
ইয়ংয়ের মতে, ডিএফ-৫সির পঞ্চম স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি স্বাধীন ভাবে আঘাত হানতে পারে এমন একাধিক ছোট ক্ষেপণাস্ত্রও বহন করতে সক্ষম সেটি।
১৪১৮
ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্য হল, নির্ভুল ভাবে নির্দেশিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা। ইয়ং জানিয়েছেন, আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সাধারণত ইনর্শিয়াল গাইডেন্স সিস্টেম এবং স্টারলাইট গাইডেন্স সিস্টেম প্রযুক্তি ব্যবহার করে। সেখানে ডিএফ-৫সি ক্ষেপণাস্ত্রটিতে ব্যবহার করছে নিজেদের তৈরি বেইডো নেভিগেশন সিস্টেম। ফলে স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মতোই নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারবে দীর্ঘপাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রটি।
১৫১৮
উল্লেখ্য, যে কোনও বৃহৎ শক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র হাতে থাকা। অন্তত তেমনটাই মনে করা হয়। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্যও তা গুরুত্বপূর্ণ।
১৬১৮
তবে ইয়ং দাবি করেছেন, বিজয় দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজে ডিএফ-৫সি-সহ একাধিক কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র প্রদর্শিত হলেও, সেগুলি চিনের পারমাণবিক কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
১৭১৮
ইয়ং দাবি করেছেন, চিন সর্বদা একটি প্রতিরক্ষামূলক পরমাণু কৌশল মেনে চলে, যার লক্ষ্য অন্যান্য দেশকে চিনের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার থেকে বিরত রাখা। চিন কোনও পরিস্থিতিতেই প্রথমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করার অঙ্গীকার নিয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
১৮১৮
যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, কুচকাওয়াজে ওই অত্যাধুনিক পরমাণু অস্ত্র প্রদর্শন আসলে ড্রাগনের আস্ফালন। বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতার কাছে নিজেদের শক্তি জাহির করার দাম্ভিক প্রয়াস।