জানা গিয়েছে, জলজ পালন ইউনিট, প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র এবং কোল্ড স্টোরেজের সুবিধা থাকা সংস্থাগুলি এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নে সামুদ্রিক খাবার রফতানি করতে পারবে। বাণিজ্য মন্ত্রকও জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সামুদ্রিক খাবার রফতানি তাৎক্ষণিক ভাবে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে স্বস্তি ফিরতে পারে ট্রাম্পের শুল্পবাণের আঘাতে ক্ষতির মুখে পড়া ভারতীয় চিংড়িচাষিদের জীবনে।
পরিমাণের দিক থেকে এবং মূল্যের নিরিখে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি হওয়া পণ্যগুলির মধ্যেও অন্যতম চিংড়ি। পরিমাণ ভারত থেকে রফতানি হওয়া সামুদ্রিক খাবারের দুই-তৃতীয়াংশ। এত দিন চিংড়ি-সহ যে পরিমাণ সামুদ্রিক খাবার ভারত থেকে রফতানি করা হত, তার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ যেত আমেরিকায়। বাকি অন্যান্য দেশে রফতানি করা হত।
বিগত কয়েক বছরে সামুদ্রিক খাবার রফতানির দিক থেকে ফুলেফেঁপে উঠেছিল ভারত। বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবর্ষে ৭৪৫ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকারও বেশি) মূল্যের প্রায় ১৭ লক্ষ টন সামুদ্রিক খাবার রফতানি করেছে ভারত। এর মধ্যে চিংড়ি রফতানি থেকে আয় হয়েছিল প্রায় ৫০০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি)।
ট্রাম্পের শুল্কনীতির পর ইতিমধ্যেই চিংড়ি রফতানি ১৫-১৮ শতাংশ কমে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সামুদ্রিক খাদ্যপণ্যের রফতানি কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সামুদ্রিক খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। বিশেষ মুনাফা না হওয়ায় কৃত্রিম ভাবে চিংড়ির চাষও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু জায়গায়। অন্য চাষের দিকে ঝুঁকছেন সামুদ্রিক মৎস্যচাষিদের একাংশ।
মনে করা হচ্ছে, আমেরিকার শুল্কের চাপে সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য উৎপাদনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত প্রায় ২ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের জীবনে প্রভাব পড়েছে। আর এই আবহে লাভ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, তাইল্যান্ড, ইকুয়েডরের সামুদ্রিক মৎস্যচাষিদের। কারণ, ভারতের মতো ওই দেশগুলিতেও সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য উৎপাদনের পরিমাণ বেশি।
এর পরেই বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয় কেন্দ্রীয় সরকার। সামুদ্রিক খাবার রফতানিকারকদের বিকল্প বাজার অনুসন্ধান করার পরামর্শ দেওয়া হয় সরকারের তরফে। আমেরিকা ছাড়া সামুদ্রিক খাবারের চাহিদা রয়েছে এমন দেশ, যেমন রাশিয়া, ব্রিটেন, নরওয়ে, সুইৎজ়ারল্যান্ড, চিন, জাপান এবং পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে বিকল্প খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়।
রাজ্য সরকারগুলিও এ বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ করতে শুরু করে। অন্ধ্রপ্রদেশে দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা শুরু হয়। সামুদ্রিক খাবার রফতানির চেষ্টা করা হচ্ছিল ইউরোপের বাজারে। এ ছাড়াও যাতে দেশে সামুদ্রিক খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি করা যায়, সে চেষ্টাও চলছিল। বিশ্ববাজারে সামুদ্রিক খাবারের চাহিদা বিপুল। তাই চেষ্টা চলছিল সামুদ্রিক খাবারের শিল্প বহুমুখী করারও।
সামুদ্রিক মৎস্যচাষিদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দরজা খোলা এই মুহূর্তে ভারতের ‘বড় জয়’ হিসাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আবার বিশেষজ্ঞদের অনেকে এ-ও মনে করছেন, ইউরোপের বাজার খুললেও ভারতের সামুদ্রিক মৎস্যচাষিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকার বাজার। ফলে ভারতকে চেষ্টা করতে হবে আমেরিকার বাজারে আধিপত্য বিস্তারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy