Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Heaven’s gate cult

অপেক্ষা করছে ভিন্গ্রহী যান! ‘স্বর্গের দ্বার’ পেরোতে ভদকার সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খান ৩৯ জন! বিশ্ব নড়ে গিয়েছিল যে গণ-আত্মহত্যায়

‘হেভেন’স গেট’ বা ‘স্বর্গের দ্বার’ নামের একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অনুসারী ছিলেন বেশ কয়েক জন পুরুষ এবং মহিলা। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, আত্মঘাতী হলে তাঁরা সকলে একসঙ্গে একটি বহির্জাগতিক দুনিয়ায় পৌঁছে যাবেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৫ ১৬:৫১
Share: Save:
০১ ১৮
Heaven’s gate cult

সালটা ছিল ১৯৯৭। মার্চ মাসের শেষের দিকে রাতের বেলা একটি উড়ো ফোন আসে ক্যালিফোর্নিয়া পুলিশের কাছে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল হানা দেয় সান দিয়েগোর শহরতলির র‌্যাঞ্চো সান্তা ফে-র একটি বাড়িতে। সেখানে ঢুকে তাঁরা যে দৃশ্য দেখেন তা চমকে দেওয়ার মতোই।

০২ ১৮
Heaven’s gate cult

কালো পোশাক এবং একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের স্নিকার্স পরা, মুখে বেগনি কাপড় ঢাকা অবস্থায় পড়ে রয়েছে সার সার মৃতদেহ। এক-আধটা নয়, ৩৯টি মৃতদেহ। বিভিন্ন বয়সের ২১ জন মহিলা এবং ১৮ জন পুরুষের দেহ। প্রতিটি দেহ শান্ত ভাবে শোয়ানো রয়েছে লোহার খাটে। তাঁদের দেহে রক্তক্ষরণ বা আঘাতের কোনও চিহ্ন ছিল না। মৃতেরা সকলেই একই দলের সদস্য।

০৩ ১৮
Heaven’s gate cult

মৃতদেহগুলি আবিষ্কারের পর এর যে নেপথ্যকাহিনি প্রকাশ্যে আসে তা ছিল আরও চমকপ্রদ। যাঁদের প্রাণহীন দেহ আবিষ্কৃত হয়েছিল তাঁরা প্রত্যেকেই একসঙ্গে একই বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল যে, এই ভাবে আত্মঘাতী হলে তাঁরা সকলে একসঙ্গে একটি বহির্জাগতিক দুনিয়ায় পৌঁছে যাবেন।

০৪ ১৮
Heaven’s gate cult

‘হেভেন’স গেট’ বা ‘স্বর্গের দ্বার’ নামের একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অনুসারী ছিলেন এই পুরুষ এবং মহিলারা। এই সম্প্রদায়ের নেতারা প্রচার করেছিলেন যে আত্মহত্যার ফলে আত্মা শরীরের খোলস ছেড়ে ‘হেল-বপ’ ধূমকেতুর পিছনে লুকিয়ে থাকা একটি ভিন্গ্রহী মহাকাশযানে প্রবেশ করার অনুমতি পাবে।

০৫ ১৮
Heaven’s gate cult

নিজেদের সম্প্রদায়ের মতাদর্শের প্রতি প্রবল আস্থা ছিল প্রতিটি সদস্যেরই। জীবনের শেষে ভিন্গ্রহে পাড়ি দিতে চলছেন এই ভেবে আত্মহননের আগে তাঁরা প্রত্যেকে ‘লোটা-কম্বল’ ভর্তি ব্যাগ গুছিয়ে বিছানার নীচে রেখে দিয়েছিলেন, যাতে সেই জিনিসপত্র ভিন্গ্রহে গিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

০৬ ১৮
Heaven’s gate cult

হঠাৎ করে কোথা থেকে উদয় হয়েছিল এই দলটি, কে-ই বা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সে বিষয়ে পুলিশ প্রথমে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছিল। সমস্ত রহস্য খোলসা করে দেন অজ্ঞাতনামা সেই ব্যক্তি, যিনি ফোন করে পুলিশকে প্রথম গণ-আত্মহত্যার বিষয়ে সতর্ক করেন। পরে তাঁর পরিচয় প্রকাশ পায়। তাঁর নাম রিয়ো ডি অ্যাঞ্জেলো।

০৭ ১৮
Heaven’s gate cult

তিনি ছিলেন এই সম্প্রদায়ের একমাত্র জীবিত ব্যক্তি। আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটার তিন বছর আগে রিয়ো দল ছেড়ে বেরিয়ে যান। মর্মান্তিক এই ঘটনার পর সর্বসমক্ষে এসে নানা বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন তিনি। রিয়োর বর্ণনা ও ঘটনাস্থলে পাওয়া তথ্যপ্রমাণ সাজিয়ে সম্পূর্ণ ঘটনা বোধগম্য হয় তদন্তকারীদের।

০৮ ১৮
Heaven’s gate cult

‘হেভেন’স গেট’ বা ‘স্বর্গের দ্বার’ নামের সম্প্রদায়টি যে মতবাদ পোষণ করত সেই মতবাদটি যাঁর মস্তিস্কপ্রসূত, তিনি হলেন মার্শাল অ্যাপ্লহোয়াইট। পেশায় সঙ্গীতের অধ্যাপক ছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও অদ্ভুত ভাবে বেঁচে ফেরার পর এক নার্সের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। সেই সেবিকার নাম ছিল বনি লু নেটল্স।

০৯ ১৮
Heaven’s gate cult

নেটল্স এবং অ্যাপ্লহোয়াইট দু’জনেই টেক্সাসের বাসিন্দা ছিলেন। সমমনস্ক হওয়ায় আধ্যাত্মিক পথ সন্ধানের পথিক হন দু’জনেই। আলাপ হওয়ার দু’বছরের মাথায় ১৯৭৪ সালে পথচলা শুরু করে তাঁদের সংস্থা ‘হেভেন’স গেট’। নেটল্স নিজেকে ‘টি’ বলে ডাকতেন, এবং অ্যাপ্লহোয়াইট ‘ডু’ নামটি গ্রহণ করেছিলেন।

১০ ১৮
Heaven’s gate cult

১৯৭৫ সালে, অ্যাপ্লহোয়াইট এবং নেটল্স ওরেগনের ২০ জনের একটি দলকে তাঁদের পরিবার এবং সম্পত্তি ত্যাগ করে পূর্ব কলোরাডোতে চলে যেতে রাজি করান। তাঁরা দু’জনে প্রতিশ্রুতি দেন যে একটি বহির্জাগতিক মহাকাশযান অপেক্ষা করছে। মৃত্যুর পর সেই যান তাঁদের স্বর্গরাজ্যে নিয়ে যাবে।

১১ ১৮
Heaven’s gate cult

১৯৯৭ সালে সংবাদমাধ্যমে কথা বলার সময় রিয়ো বলেন, ‘‘আমি যে সময়ে দলে যোগ দিয়েছিলাম সেই সময় আমি আমার জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজছিলাম। আমি দলের সদস্যদের ভালবাসতাম। তাঁরা আমার কাছে পরিবারের মতো হয়ে উঠেছিলেন।’’ প্রত্যেক সদস্য মঠের সন্ন্যাসীদের ন্যায় জীবনযাপন করতেন। সকলেই ব্রহ্মচারীর জীবন কাটাতেন। আত্ম-উন্নতির জন্য সমস্ত সদস্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকতেন বলে জানান তিনি।

১২ ১৮
Heaven’s gate cult

সংস্থার সদস্যেরা বিশ্বাস করতেন পৃথিবী একটি শিক্ষাকেন্দ্র। নিয়মিত অনুশীলনে আত্মারা শুদ্ধ হয়ে এক উন্নততর গ্রহের দিকে যাত্রা করবে। তাঁরা মনে করতেন, দেহ একটি আধার মাত্র। সেই শরীর ছেড়ে দিলে আত্মা সত্যিকারের মুক্তি পাবে। এ-ও বিশ্বাস করতেন যে হেল-বপ ধূমকেতুর ঠিক পিছনে ভিন্গ্রহীদের একটি যান (ইউএফও) লুকিয়ে আছে। সেই যান তাঁদের আত্মাকে তুলে নিয়ে যাবে আরও উন্নততর জগতে।

১৩ ১৮
Heaven’s gate cult

সদস্যেরা একই ধরনের পোশাক পরতেন, সাধারণত কালো ট্র্যাকস্যুট ও একই ব্র্যান্ডের জুতো পরতেন। তাঁরা সমস্ত পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ওই সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন। অ্যাপ্লহোয়াইটের মতের অনুগামীরা যৌনতাকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করতেন। কিছু পুরুষ স্বেচ্ছায় তাঁদের পুরুষত্ব বর্জন করেছিলেন। বাইরের জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জীবনযাপন করতেন এঁরা।

১৪ ১৮
Heaven’s gate cult

১৯৮৫ সালে অ্যাপ্লহোয়াইটের সঙ্গী নেটল্স ক্যানসারে মারা যান। তার পর থেকেই দলটির অবস্থা ছন্নছাড়া হতে শুরু করে। সদস্যেরা একে একে দল ত্যাগ করে পরিবারের সান্নিধ্যে ফিরে যেতে শুরু করেন। কারণ ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে মহাকাশযানের সত্যতা ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ‘হেভেন’স গেট’-এর সদস্যসংখ্যা তলানিতে ঠেকে।

১৫ ১৮
Heaven’s gate cult

১৯৯০ সালের গোড়ার দিকে, অ্যাপ্লহোয়াইট নতুন সদস্য সংগ্রহে মন দেন। ১৯৯৫ সালে হেল-বপ ধূমকেতুর আবির্ভাবের ফলে দলের সদস্যদের মনোবল চাঙ্গা হয়ে ‘হেভেন’স গেট’-এর সদস্যেরা নিশ্চিত হন যে একটি ভিন্গ্রহী মহাকাশযান পৃথিবীতে আসছে। পৃথিবীর বাসিন্দাদের নজর এড়াতে সেটি ধূমকেতুর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে। কিছু সদস্য বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে তাঁরা আদতে ভিন্গ্রহী। মানবগ্রহের জীবন সম্পর্কে জানার জন্য মানুষের রূপ ধারণ করে রয়েছেন তাঁরা।

১৬ ১৮
Heaven’s gate cult

১৯৯৬ সালের অক্টোবরে র‌্যাঞ্চো সান্তা ফে-তে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত একটি প্রাসাদের মতো বড় বাড়ি ভাড়া নেন অ্যাপ্লহোয়াইট। হেল-বপ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে পৌঁছোনোর সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপ্লহোয়াইট এবং তার ৩৮ জন অনুসারী জাগতিক দেহ ছেড়ে মহাজাগতিক স্তরে নিজেদের সমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৭ সালের ২২ ও ২৩ মার্চ ৩৯ জন নারী ও পুরুষ একে একে ফেনোবারবিটাল এবং ভদকার একটি মারাত্মক মিশ্রণ পান করেন।

১৭ ১৮
Heaven’s gate cult

মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাঁরা প্রত্যেকে পানীয়টি পান করার পর বেগনি কাপড়ের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে শ্বাসরোধ করে রাখেন। নিজের নিজের শয্যায় শুয়ে পড়ে প্রস্তুত হন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য। ২৬ জুলাই ৩৯টি পচা মৃতদেহ আবিষ্কার করে সান দিয়েগোর পুলিশ। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর কেঁপে ওঠে গোটা আমেরিকা। প্রবল চর্চা শুরু হয় এই গণ-আত্মহত্যা নিয়ে।

১৮ ১৮
Heaven’s gate cult

অপরাধ বিজ্ঞান নিয়ে যাঁরা চর্চা করে তাঁদের মতে ‘হেভেন’স গেট কাল্ট’ ইতিহাসে একটি অন্ধবিশ্বাস ও মানব মস্তিষ্কের প্রভাবিত হওয়ার চরম উদাহরণ। এটি শুধু বিশেষ একটি ধর্ম বা মতের প্রতি গভীর বিশ্বাসের গল্প নয়। এই আত্মহত্যার ঘটনাটি মানব সমাজকে কিছু গভীর প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। বিশ্বাস, মুক্তি এবং নিয়ন্ত্রণের নাম করে আত্মাহুতি দেওয়া যৌক্তিকতা কী তা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে গিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy