Flash flood in Uttarkashi Wipes Out Village in Minutes, 4 Dead, Several Missing dgtl
Uttarakhand cloudburst
নেমে এল জল আর কাদার বিশাল স্রোত, মেঘভাঙা বৃষ্টিতে পলকে ধুয়েমুছে সাফ আস্ত গ্রাম! ভয় ধরাচ্ছে উত্তরকাশীর তাণ্ডবলীলার ছবি
উত্তরাখণ্ডের ধরালী গ্রামে মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে আচমকা নেমে আসে হড়পা বান। ভেসে যায় একের পর এক বাড়ি, হোটেল। মারা গিয়েছেন চার জন, নিখোঁজ বহু। নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক সেনা জওয়ান। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সেই ছবি প্রকাশ্যে এসেছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৫ ১২:১০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানের জোড়া ফলায় বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ডের একাধিক এলাকা। বুধবারও বৃষ্টি থামার কোনও লক্ষণ নেই। টানা বৃষ্টির ফলে হঠাৎ করেই উত্তরকাশীর ধরালী গ্রামে সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত হয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসে হড়পা বান। ক্ষীরগঙ্গা নদীর অববাহিকায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসে বিশাল বিশাল পাথর, বোল্ডার আর কাদার স্রোত।
০২২০
পাথর, কাদা আর জলের স্রোতে একের পর এক ইমারত পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে গ্রামের অনেক অংশ। শুধু উত্তরকাশী নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়তে পারে উত্তরাখণ্ডের আরও কয়েকটি জেলা। এমনই আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
স্বল্প সময়ে নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হলে তাকে মেঘভাঙা বৃষ্টি বলে। হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে এই ধরনের বৃষ্টি আকছার হয়। মঙ্গলবার দুপুর দুটো নাগাদ ধরালী গ্রামের কাছে এই মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়।
০৫২০
টুরিস্ট স্পট হিসাবে বিখ্যাত ধরালীতে রয়েছে বহু রেস্তরাঁ, হোটেল, হোমস্টে। গঙ্গোত্রী যাওয়ার পথে এখানে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। মঙ্গলবারের পর থেকে সেই জায়গা যেন ‘মৃত্যুপুরী’তে পরিণত হয়েছে। বাড়িগুলি চাপা পড়েছে কাদা-পাথরের মীচে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। উত্তরকাশীর হর্ষিল উপত্যকায় রয়েছে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ধরালী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯০০৫ ফুট উঁচুতে এই গ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য খুবই জনপ্রিয়। হর্ষিল এবং গঙ্গোত্রীর মাঝে পড়ে এই গ্রাম। এটি হর্ষিল থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে। উত্তরকাশী থেকে ধারালী যেতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে।
০৬২০
মঙ্গলবার দুপুর দুটো নাগাদ ধরালী গ্রামের কাছে এই মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়। খবর পাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যান অন্তত ১৫০ জন জওয়ান। ধাক্কা সামলে হড়পা বানে বিধ্বস্ত এলাকায় গ্রামবাসীদের উদ্ধারের কাজ শুরু করেন তাঁরা। যদিও তত ক্ষণে হর্ষিলের সেনাছাউনি বিপর্যস্ত।
০৭২০
রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত রক্ষী বাহিনী উদ্ধারকাজে নেমে পড়েছে। প্রয়োজনে প্রস্তুত রয়েছে বায়ুসেনাও। সেনার তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।
০৮২০
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ধরালী এলাকায় বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়েছে। গোটা গ্রামই জলের নীচে। আচমকা নেমে আসা হড়পা বানের ধাক্কায় ৪০ থেকে ৫০টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বৃষ্টির কারণে উদ্ধারের জন্য হেলিকপ্টার নামানো সম্ভব হয়নি।
০৯২০
মৌসম ভবন জানিয়েছে, বুধবারও ভারী বৃষ্টি চলবে উত্তরাখণ্ডের ধরালীতে। জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। শুধু ধরালী গ্রামই নয়, সুক্খী টপও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে। পর পর দু’বার মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত এই শহরটিও।
১০২০
ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়া এবং নিখোঁজদের সন্ধান চালানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না অনেকেরই। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতি নিয়ে ধামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রের তরফে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মোদী।
১১২০
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, পাহাড় থেকে জলের ধারার টানে নেমে আসা পাথর, কাদার স্রোত ১৩.৫ একর এলাকাকে গ্রাস করে ভাগীরথীতে নিয়ে গিয়ে ফেলেছে। বোল্ডার আর কাদার স্রোত ভাগীরথীর প্রবাহ রুখে দিয়েছে। ফলে নদীর পাশে একটি অস্থায়ী ঝিল তৈরি হয়েছে। সেটির জল বেরিয়ে এসে এই পরিস্থিতিতে আরও ক্ষতি ডেকে আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
১২২০
পাহাড় থেকে নেমে আসা জলকাদা, বোল্ডারের স্রোত গোটা এলাকাকে গ্রাস করে নিয়েছে। পাহাড় থেকে ক্ষীরগঙ্গা ধরে নেমে আসা হড়পা বানের পথে বাঁক থাকায় সেটি বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে হড়পা বানের গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছিল।
১৩২০
রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বিনোদকুমার সুমনের মতে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কোপে একমাত্র ধরালীই পড়েছে এমন নয়। একই পাহাড়ের দু’টি ভিন্ন দিক দিয়ে তীব্র জল প্রবাহিত হয়েছিল। একটি ধারা নেমে আসে ধরালীর দিকে। অন্যটি সুক্খী গ্রামের দিকে বয়ে গিয়েছে। ফলে সেখানেও একই অবস্থা।
১৪২০
সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, উঁচু পাহাড় থেকে নীচে থাকা গ্রামের দিকে ফুঁসতে ফুঁসতে ধেয়ে আসছে নদীর জল। কাদাজলে ভেসে যাচ্ছে ছোট-বড় গাড়ি। ভিতরে আটকে রয়েছেন যাত্রীরা। ধরালীতে নদীকে প্লাবিত হতে দেখে বহু মানুষ আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে আর্তনাদ করতে থাকেন।
১৫২০
সংবাদসংস্থা পিটিআইকে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, বহু দোতলা, তিনতলা বাড়িঘর তো বটেই, গ্রামে থাকা অন্তত ২০-২৫টি হোটেল এবং হোমস্টে ভেসে গিয়েছে। জলকাদার নীচে অন্তত ১০-১২ জন আটকে পড়েছেন বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা।
১৬২০
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি হাত লাগিয়েছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা। ঘটনাস্থলে রয়েছেন ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের (আইটিবিপি) ১৬ জন সদস্য।
১৭২০
একটানা বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরকাশী-হর্ষিল সড়কে ভূমিধস তৈরি হয়েছে। ফলে ওই সড়কের বেশ কিছুটা অংশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রভাব পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর। দুর্যোগ মাথায় নিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
১৮২০
জায়গায় জায়গায় ধস নামার কারণে উদ্ধারকাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সাতটি রাজ্য সড়ক, পাঁচটি জাতীয় সড়ক, দু’টি সীমান্ত সড়ক-সহ রাজ্যে মোট ১৬৩টি রাস্তা ধসের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
১৯২০
আবহাওয়া অফিসের সতর্কতা অনুযায়ী আগামী ৯ অগস্ট পর্যন্ত এই দুর্যোগ পোহাতে হবে রাজ্যবাসীকে। গোটা রাজ্যে রয়েছে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। উত্তরাখণ্ডের চমোলী, রুদ্রপ্রয়াগ, অলমোড়া, হরিদ্বার, পিথোরাগড়ের স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে।
২০২০
হিমালয়ের কোলে থাকা উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। হরিদ্বারে গঙ্গা বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বিপদসীমার উপরে রয়েছে কালী নদীও। চারধামের অন্যতম গঙ্গোত্রীর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।