France and Britain wants to secure Ukraine with 10,000 troops, what America is thinking about coalition of the willing dgtl
Russia-Ukraine Conflict
‘শজারুর কাঁটা’ হয়ে ইউক্রেনে নিরাপত্তা দিতে চায় ১০ হাজার সেনা! ট্রাম্পের অনুমোদন পাবে ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’?
মস্কোর অবস্থান উপেক্ষা করে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি, বিষয়টিতে নেটোর হস্তক্ষেপ থাকবে না বোঝাতে গত ৪ সেপ্টেম্বর প্যারিসে একটি সভার ডাক দেওয়া হয়।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে চলা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠকও সেরেছেন তিনি। শোনা যাচ্ছিল, দু’দেশের রাষ্ট্রনেতাকে মুখোমুখি আলোচনার টেবিলে বসানোর জন্য রাজিও করিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে এখনও পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।
০২২৫
এরই মধ্যে রবিবার ইউক্রেনের রাজধানী কিভে সরকারি সচিবালয়ে (ক্যাবিনেট বিল্ডিং) হামলা চালায় রুশ সেনা। দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে গোটা বাড়ি। তবে এই হানায় এখনও পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিকে মস্কোয় এসে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
০৩২৫
শনিবার সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। জানিয়ে দেন, তিনি ‘সন্ত্রাসবাদীদের রাজধানীতে’ যাবেন না। উল্টে কিভে এসে পুতিনকে আলোচনার প্রস্তাব দেন জ়েলেনস্কি। ঘটনাচক্রে, তার পরেই ইউক্রেনে রুশ হানা বেড়েছে।
০৪২৫
বিশেষজ্ঞেরা এখন মনে করছেন, দুর্বল সেনাবল এবং ক্ষীণ মার্কিন সামরিক সহায়তার সাহায্যে যুদ্ধ লড়া ইউক্রেন এখন হাতেনাতে বুঝতে পারছে যে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের যুদ্ধের এ বার অবসান হওয়া উচিত।
০৫২৫
তাই নাকি ক্ষমতা ধরে রেখেই সংঘাতের অবসান করতে চাইছে জ়েলেনস্কি সরকার। সেই লক্ষ্যে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিদেশি শক্তিগুলির কাছে নিরাপত্তা দেওয়ার অনুরোধ করেছে কিভ।
০৬২৫
কিছু ইউরোপীয় শক্তি, বিশেষ করে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স, জ়েলেনস্কির দাবিকে সমর্থন করেছে। উভয় দেশই ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে সে দেশে সেনা মোতায়েনে সম্মত হয়েছে বলে খবর।
০৭২৫
তবে সমস্যা অন্য জায়গায়। ব্রিটেন এবং ফ্রান্স— উভয়েই মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোর সদস্য। তাই ইউক্রেনে তাদের সেনা মোতায়েনের বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবেই মস্কো-কিভ সংঘাতে নেটোর হস্তক্ষেপ হিসাবেই দেখা হবে।
০৮২৫
নেটোর সনদের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নেটোর সদস্য দেশ অন্য কোথাও সেনা মোতায়েন করলে তাদের পূর্ণ সমর্থন করবে অন্য সদস্য দেশগুলি। তাই রাশিয়া যে বিষয়টিকে ভাল ভাবে দেখবে না, তা বলাই বাহুল্য।
০৯২৫
পুতিন আগেই জানিয়েছিলেন, যুদ্ধবিরতির অন্যতম শর্ত হিসাবে ইউক্রেনকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোয় যোগ না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। এর পর স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আগে ইউক্রেনের মাটিতে পা রাখলে পশ্চিমি সেনাও রুশ হামলার মুখে পড়বে বলে বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
১০২৫
রাশিয়া বার বার যুক্তি দিয়েছে যে, ইউক্রেনের নেটোয় যোগদানের আকাঙ্ক্ষা এবং কিভের মাটিতে নেটোর মহড়ার আয়োজন মস্কোকে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করতে ‘বাধ্য’ করবে।
১১২৫
সম্প্রতি, ‘ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরাম (ইইএফ)’-এর পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে পুতিন মন্তব্য করেছেন, ‘‘ইউক্রেনের সঙ্গে যদি শান্তি সমঝোতা হয়, তা হলে বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি শান্তির দিকে পরিচালিত হবে। তখন আমি ইউক্রেনের মাটিতে পশ্চিমি সেনার উপস্থিতির কোনও অর্থ দেখতে পাচ্ছি না। এর পরেও যদি তারা আসে তা হলে রাশিয়া উত্তর দেবে।’’
১২২৫
তবে মস্কোর অবস্থান উপেক্ষা করে, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি, বিষয়টিতে নেটোর হস্তক্ষেপ থাকবে না বোঝাতে গত ৪ সেপ্টেম্বর প্যারিসে একটি সভার ডাক দেওয়া হয়।
১৩২৫
ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা দিতে ইচ্ছুক, শুধু এমন দেশগুলিকেই সেই সভায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। ‘ইচ্ছুক’ দেশগুলির জোটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’।
১৪২৫
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার এই শীর্ষ সম্মেলনের সহ-সভাপতিত্ব করেন। ইইউ কর্তা এবং মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে ইটালি, জার্মানি, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড এবং ডেনমার্কের প্রতিনিধিরাও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও নাকি পরে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে ওই সভায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলির সম্পূর্ণ তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
১৫২৫
জানা গিয়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলি নিয়ে গঠিত দলটি ভবিষ্যতের সংঘাত রোধ করতে এবং শান্তি চুক্তির পর যুদ্ধোত্তর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউক্রেনে সম্ভাব্য সেনা মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
১৬২৫
এক ইউরোপীয় কূটনীতিককে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ জানিয়েছে, মার্কিন সামরিক পরিকল্পনাকারীদের মতামতের ভিত্তিতে ইউক্রেনে ১০,০০০ সেনা মোতায়েনের কথা বিবেচনা করছে জোট।
১৭২৫
সংবাদসংস্থা ‘ব্লুমবার্গ’ একটি পৃথক সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, শজারুর কাঁটা যেমন শজারুকে নিরাপত্তা দেয়, সেই একই রকম ভাবে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে প্যারিসের সভায় অংশগ্রহণকারীরা দেশগুলি।
১৮২৫
সূত্র এ-ও জানিয়েছে, যুদ্ধোত্তর পর্বে আর কেউ যেন ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন দেখাতে না পারে, তার জন্যই পাকা বন্দোবস্ত করতে চাইছে তারা। উপরন্তু, জোটের যুদ্ধবিমান ইউক্রেনে থেকে নয় বরং সদস্য দেশগুলির ঘাঁটি থেকে ইউক্রেনের আকাশসীমায় টহল দেবে।
১৯২৫
কিন্তু পুরো বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট? খবর, প্যারিস শীর্ষ সম্মেলনের পর ইউক্রেনকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক দেশ বা ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’কে মস্কোর ক্ষমতা কমাতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাম্প।
২০২৫
ট্রাম্প নাকি এ-ও পরামর্শ দিয়েছেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের উচিত রাশিয়ার তেল কেনা অবিলম্বে বন্ধ করা। রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য চিনের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরামর্শও তিনি দিয়েছেন।
২১২৫
ট্রাম্প নাকি এ-ও স্পষ্ট করেছেন, রুশ-ইউক্রেনের সংঘাত নিয়ে চিন্তাভাবনা কেবল আমেরিকার দায়িত্ব নয়। ইউরোপীয় দেশগুলিরও বৃহত্তর পদক্ষেপ করা উচিত বিষয়টি নিয়ে।
২২২৫
ট্রাম্প চাইছেন, আমেরিকা এবং ইউরোপ যৌথ ভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা চাপাক। যদিও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে কোনও দৃঢ় মার্কিন প্রতিশ্রুতি দেননি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
২৩২৫
যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, রুশ-ইউক্রেন সংঘাত এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে একগুচ্ছ পরামর্শ দিলেও আসলে দু’দেশের মধ্যে সংঘাত নিয়ে পদক্ষেপ করার বিষয়টি আমেরিকার ঘাড় থেকে সরিয়ে দিতে চাইছেন ট্রাম্প এবং সেই বোঝা চাপিয়ে দিতে চাইছেন ইউরোপীয় দেশগুলির ঘাড়ে।
২৪২৫
পাশাপাশি, একাংশ এ-ও মনে করছেন যে ইউক্রেনকে সাহায্য করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করলেও পুরো বিষয়টিতে ট্রাম্পের চূড়ান্ত অনুমোদন লাগবে। তা ছাড়া ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন নিয়ে পদক্ষেপ করতে পারবে না ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’। উল্লেখ্য, দুই দেশের সংঘাত নিয়ে ট্রাম্প একাধিক পরামর্শ দিলেও বিষয়টিতে এখনও তাঁর সিলমোহর লাগেনি।
২৫২৫
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বিষয়টিকে নিয়ে মজা করতেও ছাড়ছেন না। তাঁদের দাবি, ইউক্রেনকে সুরক্ষা দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ার আগে তারা নিজেরাই আমেরিকার তরফে সমর্থনের নিশ্চয়তা চাইছে। কারণ, জোট দেশগুলিও নাকি জানে যে, ইউক্রেনে তাদের সেনা আক্রমণের মুখে পড়লে মার্কিন সাহায্যের প্রয়োজন পড়তে পারে তাদের। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে, এটা এখনও নিশ্চিত নয় যে ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’ আদতেও ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন শুরু করবে কি না। আর করলেও তা কবে করবে।