বেনারস গেলে সোনালি তবক মোড়ানো পান তো অনেকেই আয়েস করে খান। কিন্তু এই ফিনফিনে সোনালি রঙের আসল তবকের দাম কত জানেন? বর্তমানে সোনার যা গগনচুম্বী দাম তা থেকে কিছুটা হলেও সোনার তবকের দামের আন্দাজ করতে পারছেন আশা করি। বিশ্ব জুড়ে নানা নামীদামি রেস্তরাঁর খাবারে সোনার তবককে ব্যবহার করা হয়। যদিও এর কোনও স্বাদ নেই, তা-ও সোনা বলে কথা! যে খাবারেই থাকে, সে খাবারেরই দাম বেড়ে যায়। ভারতে নানা মূল্যের সোনার তবক পাওয়া যায়।
ইটালির সাদা ট্রাফ্লও বহুমূল্য খাবারের তালিকার জায়গা করে নিয়েছে। জায়গা ইটালি ও খাবারের নাম ট্রাফ্ল শুনে এটিকে চকোলেট মনে হলেও, আদতে এটি এক প্রকার ছত্রাক। তবে এটি অন্যান্য ছত্রাকের মতো মাটির উপরে নয়, মাটির নীচে জন্মায়। ভারতীয় মুদ্রায় এর প্রতি গ্রামের মূল্য প্রায় দু’হাজার টাকা। ট্রাফ্ল ফলন এবং সংগ্রহের পদ্ধতি সহজ নয়। সেই কারণে এর মূল্য এত বেশি।
বহুমূল্য খাবারের তালিকার নাম রয়েছে নীল পাখনার টুনা মাছ। এই মাছের আঁতুড়ঘর যদিও জাপান, তবে বর্তমানে ভারতেও নীল পাখনার টুনা মাছ পাওয়া যায়। অন্যান্য টুনা মাছের তুলনায় নীল পাখনার টুনার দাম যেমন বেশি, স্বাদেও তেমন অতুলনীয়। সাধারণত বিভিন্ন জাপানি খাবার যেমন সুসি, গিমবাপ, রামেন প্রভৃতি তৈরি করতে নীল পাখনার টুনা মাছ ব্যবহার করা হয়। মাত্রাতিরিক্ত চাহিদার জন্য এই মাছ ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। ভারতে গ্রামপ্রতি এই মাছের দাম শুরুই হয় প্রায় তিন হাজার টাকা থেকে।
কিছু কিছু মাংস এত সুন্দর রান্না করা হয় যে মাংসগুলো মুখে দিলেই মাখনের মতো গলে যায়। কিন্তু হুবহু মাখনের মতো খেতে মাংসের কথা শুনেছেন কখনও? জাপানের ওয়াগু মোষের মাংস অনেকটা সে রকমই খেতে। সাধারণ মোষ এবং ওয়াগু মোষের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল প্রজনন পদ্ধতি ও খাবারের। ওয়াগুদের প্রতিপালনে প্রচুর টাকা খরচ করা হয়। সেই কারণে এই মাংসের দামও হয় প্রচুর। ভারতে কেজিপ্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় এই মাংস।
ফুটির মতোই দেখতে, তবে দামে ফুটির থেকে অনেক এগিয়ে। বহুম়ূল্য এই ফলটি হল ফুটিদের ‘রাজা’, নাম ইউবারি কিং। স্বাদে চিনির মতো মিষ্টি জাপানি এই ফলের দাম ভারতীয় মুদ্রায় কেজিপ্রতি প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা। ইউবারি কিং-এর মাথা ঘুরে যাওয়া দামের কারণ হল সেটির কঠিন চাষের পদ্ধতি। খোলা আকাশের নীচে ইউবারি কিং-এর ফলন হয় না, কাচের ঘর বা গ্রিনহাউসের ভিতরে এটি চাষ করা হয়। সাধারণত শীতকালে এদের চাষ শুরু করা হয় এবং বসন্তকালে এসে এরা ফল দেয়। গাছে ফল ধরলে সেগুলিকে আলতো হাতে তুলে তাদের তলায় মাদুর পেতে দেওয়া হয়। এতে ইউবারি মেলনের আকৃতি সুন্দর গোলাকার হয়।
কেবল ভামেরাই কফি বানায় না, হাতিরাও এই কাজে শামিল হয়েছে। সুদূর তাইল্যান্ডে হাতিদের সাহায্যে বানানো কফিটির নাম হল কালো আইভরি কফি। হাতিরা কী ভাবে এই কফি বানাতে সাহায্য করে? প্রথমে হাতিদের তাই অ্যারাবিকা প্রজাতির কফির বীজ খাওয়ানো হয়। তার পর তাদের পেটে গিয়ে নানা উৎসেচকের সঙ্গে মিশে, পরিপাকক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে সেটি বিষ্ঠা হয়ে বেরোয়। তার থেকেই কফি তৈরি হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও বিরলতম কফি বলে পরিচিত। বিরল, কারণ এর ফলন খুবই কম। কোনও নামী রেস্তরাঁয় এই কফির একটি ছোট কাপের দাম ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় চার হাজার টাকা।
জাপানের আংশিক বরফে ঢাকা সমুদ্রের ধারে ঘুরে বেড়ায় এটি, আকৃতিতে হয় বিশাল। মাতসুবা নামের এই কাঁকড়াগুলির কেজিপ্রতি ভারতীয় মুদ্রায় দাম শুরু হয় প্রায় ৬৬ হাজার থেকে। আদতে এগুলি বরফজলে থাকা ছেলে কাঁকড়া। জাপানে এটি মাতসুবা নামেই পরিচিত। এই প্রজাতির কাঁকড়ার এক একটি এতই বড় হয় যে সেগুলি নিলামে লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি হয়।
জাপানের মিয়াজ়াকি প্রজাতির আম হল বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। এটিকে ‘সূর্যের ডিম’ বলেও সম্বোধন করা হয়। এটি বাকি পাঁচটা আমের মতো হলদেটে বা কমলাঘেঁষা রঙের হয় না। মিয়াজ়াকি আমের গায়ের রং হয় বেগুনি। তবে ভিতরের দিকটা অন্যান্য আমের মতো হলদেটেই হয়। বেগুনি বর্ণের এই আমের কেজিপ্রতি দাম প্রায় তিন লক্ষ টাকা। জাপানে কোনও নামী ব্যক্তিকে সম্মান জানাতে মিয়াজ়াকি আম উপহার দেওয়া হয়।
আম আছে যখন, তরমুজ কেন থাকবে না? বিশ্বের সবচেয়ে দামি তরমুজের ঘরও হল জাপান। নাম তার ডেনসুকে। জাপানের হোকাইডো দ্বীপে ডেনসুকে তরমুজের ফলন হয়। অন্যান্য ‘সাধারণ’ তরমুজের মতো এর গায়ের রং সবুজ নয়, এর সারা গা মোড়া রয়েছে কালো রঙের চামড়া দিয়ে। ডেনসুকে তরমুজের অন্যতম বিশেষত্ব হল এতে বীজ প্রায় থাকে না বললেই চলে। ভারতীয় মুদ্রায় এই তরমুজের এক একটির দাম প্রায় চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা।
কাঁকড়া খেতে ভালবাসেন? তা হলে আলাস্কার বৃহৎ আকারের লাল কাঁকড়া আপনাকে চেখে দেখতেই হবে। তবে এটি খাওয়ার জন্য আপনাকে টাকাও জমাতে হতে পারে। কারণ, এই কাঁকড়ার দাম শুরুই হয় প্রায় ৫০ হাজার থেকে। তা-ও গোটা কাঁকড়া আপনি এই দামে পাবেন না। বিশালাকৃতি কাঁকড়ার দাঁড়াগুলো পেতে পারেন। গোটা নিতে গেলে লাখের নীচে গল্প নেই।
জাপানের হোকাইডোতে গায়ে কাঁটার খোলসযুক্ত সামুদ্রিক আর্চিনও চেটেপুটে খাওয়া হয়। সেগুলির নাম দেওয়া হয়েছে হোকাইডো উনি। কাঁটাভরা এই প্রাণীটিকে সমুদ্র থেকে তুলে খাদ্যোপযোগী বানানোর প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। যন্ত্র নয়, এর পুরো প্রক্রিয়াটাই করা হয় হাতের সাহায্যে। তাই এর দাম শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। ভারতীয় মুদ্রায় এর ১০০ গ্রামের দাম পড়ে প্রায় ১৬ হাজার টাকা।
বিশ্বের বহুমূল্য খাবারের তালিকায় সবার উপরে জায়গা করে নিয়েছে চিনের পাখির বাসার স্যুপ। নাম শুনে হাসি পেলেও, এর দাম শুনে চোখে জল আসতে বাধ্য! ভারতীয় মুদ্রায় এই স্যুপটির এক বাটির দাম প্রায় দু’লক্ষ টাকা। সুইফ্টলেট নামের এক পাখির জমাট বাঁধা থুথু দিয়ে এই স্যুপটি বানানো হয়। এতে থাকে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন, যার ঔষধি গুণও অসামান্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy