India may import South Korean KF-21 fighter jet for air superiority while Pakistan is thinking for Turkish KAAN dgtl
Fighter Jets
কোরীয় ‘ফাইটিং হক’ না কি দেশি ‘অ্যামকা’! তুরস্কের ‘কান’ ধরে পাকিস্তান টান দিতেই হিসাবে মগ্ন ভারতীয় বায়ুসেনা
মারাত্মক ভাবে যুদ্ধবিমানের সঙ্কটে ভুগছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেট নয়াদিল্লি আমদানি করতে পারে বলে গণমাধ্যমে ছড়িয়েছে খবর। অন্য দিকে, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৫ ০৯:৫৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে চলা চার দিনের ‘যুদ্ধ’-এ মার খেয়েও লজ্জা নেই। ক্রমাগত চিন এবং তুরস্কের থেকে হাতিয়ার আমদানি করে চলেছে পাকিস্তান। অন্য দিকে, মারাত্মক যুদ্ধবিমানের সঙ্কটে ভুগছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। এই অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে রিপাবলিক অফ কোরিয়া (পড়ুন দক্ষিণ কোরিয়া) থেকে নয়াদিল্লি লড়াকু জেট আমদানি করতে পারে বলে দাবি করেছে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। এ দিকে আবার ইসলামাবাদের হাতে খুব দ্রুত পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তুলে দিতে পারে আঙ্কারা। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটগুলি নিয়ে শুরু হয়েছে তুলনামূলক আলোচনা।
০২২০
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে চিনের ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ বিমানবাহিনীর বহরে রয়েছে স্টেল্থ শ্রেণির পঞ্চম প্রজন্মের ‘জ়ে-২০’ যুদ্ধবিমান। এ ছাড়া ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু জেটও বেজিঙের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা তৈরি করে ফেলেছেন বলে খবর প্রকাশ্যে এসেছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, নয়াদিল্লি এখনও সাড়ে চার প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের বাইরে বেরোতে পারেনি। ফলে দ্রুত স্টেল্থ শ্রেণির পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেট বিদেশ থেকে আমদানি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
০৩২০
এই আবহে প্রকাশ্যে এসেছে দক্ষিণ কোরিয়ার ‘কেএফ-২১ বোরামে’ লড়াকু জেটের নাম। আদর করে যার নাম ‘ফাইটিং হক’ রেখেছে সোলের বিমানবাহিনী। সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটির নির্মাণকারী সংস্থা হল ‘কোরিয়া অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ়’। তবে এতে ইন্দোনেশিয়ারও অংশীদারি রয়েছে।
০৪২০
বর্তমানে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘টি-৫০ গোল্ডেন ইগল’ নামের একটি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানবাহিনী। এ ছাড়াও তাদের বহরে রয়েছে এফ-৪ডি/ই ফ্যান্টম টু, এফ-৫ই/এফ টাইগার টু, এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন এবং এফ-১৫ইএক্স ইগল টু। ওই লড়াকু জেটগুলি পুরনো হয়ে যাওয়ায় ‘কেএফ-২১ বোরামে’কে সেগুলির জায়গায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে সোলের। ২০১০ সালে লড়াকু জেটটির নির্মাণে ২০ শতাংশ অংশীদারি ছিল ইন্দোনেশিয়ার। কিন্তু পরে সেটা কমিয়ে ৭.৫ শতাংশে নামিয়ে আনে জাকার্তা।
০৫২০
২০২২ সালের ১৯ জুলাই প্রথম বার আকাশে ওড়ে ‘কেএফ-২১ বোরামে’। আগামী বছর থেকে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আপাতত ছ’টি নমুনা তৈরি করতে পেরেছে নির্মাণকারী সংস্থা ‘কোরিয়া অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ়’। ২০২৮ সালের মধ্যে ৪০টি এবং ২০৩২ সালের মধ্যে ১২০টি ‘ফাইটিং হক’ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। তার পর শুরু হবে রফতানির জন্য উৎপাদন।
০৬২০
‘দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘কেএফ-২১ বোরামে’কে স্টেল্থ শ্রেণির ইউরোফাইটার টাইফুল বা ফ্রান্সের দাঁসো অ্যাভিয়েশনের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমানের সমক্ষমতা সম্পন্ন করতে চেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। দুই ইঞ্জিন এবং এক আসন বিশিষ্ট এই লড়াকু জেটটি ইলেকট্রনিক ভাবে স্ক্যান করা অ্যারে রেডার। মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন’-এর এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকনের চেয়ে এর দক্ষতা অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি হবে বলে দাবি করা হয়েছে।
০৭২০
তবে সোলের তৈরি লড়াকু জেটটি কখনওই আমেরিকার ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’-এর মতো দক্ষতা সম্পন্ন নয়। ২০১৬ সালের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়াকে বেশ কিছু প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি হস্তান্তর করে ওয়াশিংটন, যার মধ্যে ছিল অত্যাধুনিক এইএসএ রেডার, ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল টার্গেটিং পড, রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামার এবং ইনফ্রারেড সার্ট অ্যান্ড ট্র্যাক। এগুলির সবই ‘কেএফ-২১ বোরামে’তে ব্যবহার হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটটির ‘এফ৪১৪’ ইঞ্জিনও সরবরাহ করছে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা জেনারেল ইলেকট্রিক।
০৮২০
আগামী দিনে ‘কেএফ-২১ বোরামে’কে সাড়ে পাঁচ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানে বদলে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে সোলের। একসঙ্গে ১০টি লক্ষ্যে হামলা চালাতে পারবে এই লড়াকু জেট। সাড়ে সাত হাজার কেজির হাতিয়ার নিয়ে ওড়ার ক্ষমতা রয়েছে এই যুদ্ধবিমানের। ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনী সংশ্লিষ্ট জেটটিকে তাদের বহরে শামিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ভারতীয় বায়ুসেনার এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘কেএফ-২১ আমদানির ব্যাপারে কোনও চিন্তাভাবনা করা হয়নি।’’
০৯২০
নয়াদিল্লি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘অ্যাডভান্স মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট’ বা অ্যামকা তৈরির দিকে বেশি নজর দিয়েছে। দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট ও এক আসনযুক্ত সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটি পুরোপুরি স্টেল্থ শ্রেণির পঞ্চম প্রজন্মের হবে বলে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মোট ১২০টি অ্যামকা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
১০২০
২০২৩ সালে একরকম চূড়ান্ত হয় অ্যামকার নকশা। ঠিক তার পরের বছর সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটি। প্রথমে এর পাঁচটি নমুনা তৈরি করার কথা রয়েছে। সেখানে সাফল্য এলে আংশিক স্টেল্থ শ্রেণির ৪০টি অ্যামকা এমকে-১র বরাত দেবে ভারতীয় বায়ুসেনা। দ্বিতীয় ধাপে তৈরি হবে ৮০টি অ্যামকা এমকে-২।
১১২০
চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রথম বার প্রকাশ্যে আসে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই যুদ্ধবিমানের নকশা, যা বানিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বা এডিএ। গত বছরের এপ্রিল থেকে এর কাজ শুরু করেছিলেন তারা। সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটটিকে বায়ুসেনার বহরে যোগ করতে ১০ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
১২২০
২০২৮ সালের শেষে বা ২০২৯ সালের গোড়ায় সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানের প্রথম নমুনা আকাশে উড়বে বলে আশাবাদী প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০৩৪ সালের মধ্যে শুরু হবে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন। অ্যামকার এক একটি নমুনা তৈরি করতে হাজার কোটির বেশি খরচ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৩২০
এই প্রকল্পে দু’টি জায়গায় সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন এখনও তৈরি করতে পারেননি এ দেশের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। সেখানে বিদেশি নির্ভরতা থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কাজ পিছোতে পারে। দ্বিতীয়ত, অ্যামকা তৈরির ভার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’ বা হ্যালকে দিতে নারাজ কেন্দ্র। বেসরকারি উদ্যোগে এটিকে তৈরি করতে চাইছে সরকার। ফলে বরাত কাকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
১৪২০
অন্য দিকে, গত বছরের (পড়ুন ২০২৪) ২১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেট ‘টার্কিশ ফাইটার কান’-এর নমুনা তৈরি করতে সক্ষম হয় আঙ্কারা। ২০৩০ সালের মধ্যে একে বিমানবাহিনীর বহরে শামিল করার পরিকল্পনা রয়েছে তুরস্কের। সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটির নির্মাণে ব্রিটিশ সংস্থা ‘বিএই সিস্টেমস’-এর সহযোগিতা নিয়েছে তারা। আঙ্কারাকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি হস্তান্তর করেছে ওই কোম্পানি।
১৫২০
‘টার্কিস অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ়’ বা টিএআইয়ের তৈরি ‘কান’ যুদ্ধবিমানের দক্ষতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। এর ইঞ্জিন সরবরাহ করেছে জনপ্রিয় ব্রিটিশ গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা রোলস-রয়েস। তবে এ বছরের গোড়ায় সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটটি আমদানির ব্যাপারে আঙ্কারার সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাকর্তাদের একপ্রস্ত আলোচনা হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। যদিও তা সরকারি ভাবে স্বীকার করেনি কোনও পক্ষই।
১৬২০
‘কানে’র নির্মাণকারী সংস্থা টিএআই জানিয়েছে, এটি প্রকৃতপক্ষে একটি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের বায়ুসেনার হাতে থাকা ‘এফ-৩৫’ লড়াকু জেটের আদলে একে তৈরি করেছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। বর্তমানে একে আরও উন্নত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা।
১৭২০
‘ইউরেশিয়ান টাইমসে’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনই ‘কান’ যুদ্ধবিমান আমদানির ব্যাপারে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করবে না তুরস্ক। তবে লড়াকু জেট নির্মাণ প্রকল্পে ইসলামাবাদকে শামিল করতে পারে আঙ্কারা। তবে পাক অর্থনীতি ভেঙে পড়ার মতো অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে এই বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে ১০ বার ভাবতে হবে এর্ডোগানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে।
১৮২০
এই বিষয়ে পাক বায়ুসেনার একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ‘ইউরেশিয়ান টাইম্স’ লিখেছে, ‘‘ইসলামাবাদ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান আমদানি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে বায়ুসেনার ঘাঁটিগুলিতে আগামী দিনে ‘কান’ শামিল হবে কি না, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি যথাসম্ভব গোপন রাখার চেষ্টা করছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা।’’
১৯২০
এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ২৯ স্কোয়াড্রন। চিন এবং পাকিস্তানের মতো জোড়া শত্রুর মোকাবিলায় যা অন্তত ৪২ স্কোয়াড্রন রাখা উচিত বলে বার বার সওয়াল করেছেন সাবেক ফৌজি অফিসারেরা। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চম প্রজন্মের রুশ লড়াকু জেট ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ‘অটোমেটিক চয়েস’ হতে পারে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
২০২০
এ বছরেই ভারত সফরে আসার কথা রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হলে ‘এসইউ-৫৭’-এর চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটটির প্রযুক্তি হস্তান্তরে কোনও আপত্তি নেই মস্কোর। সে ক্ষেত্রে ঘরের মাটিতেই যুদ্ধবিমানটি তৈরি করতে পারবে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, অ্যামকার জন্য ইঞ্জিনের সমস্যা মেটার রাস্তা খুলবে বলে আশাবাদী সাবেক সেনাকর্তারা।