India strengthening its Air Defence through indigenous VHF Radar which can detect Fifth Generation stealth F-35 jets dgtl
India’s Anti Stealth Radar
ফাঁকি দিয়ে গলতে পারবে না পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেলথ’ জেট, পাক-চিনের কাঁপুনি ধরাচ্ছে ভারতের ‘ত্রিনয়ন’!
কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-র তৈরি উচ্চ কম্পাঙ্কের অত্যাধুনিক রেডার হাতে পেয়েছে ভারতীয় ফৌজ। ফলে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও আঁটসাঁট করতে পারবে বাহিনী।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
বায়ুসেনার বহরে নেই পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেট। ইঞ্জিনের অভাবে থমকে আছে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজ়স যুদ্ধবিমানের উৎপাদন। এ-হেন পরিস্থিতিতে দেশের আকাশকে পুরু বর্মে ঢেকে ফেলতে ‘তৃতীয় নয়নে’ ভরসা রাখছে নয়াদিল্লি। এর নজর এড়িয়ে একটা মাছিও ভারতীয় সীমান্তে ঢুকতে পারবে না, বলছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশ।
০২২০
নয়াদিল্লির ফৌজের হাতে আসা ওই ‘তৃতীয় নয়ন’ হল উচ্চ কম্পাঙ্কের (ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি বা ভিএইচএফ) রেডার। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে এটি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন’ বা ডিআরডিও-র ‘ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড রেডার ডেভেলপমেন্ট এস্টাব্লিশমেন্ট’ শাখা। সংশ্লিষ্ট রেডারটির বাণিজ্যিক উৎপাদনের দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড’-এর (বেল) কাঁধে।
০৩২০
চলতি বছরের গোড়ায় সংশ্লিষ্ট রেডারটিকে প্রথম বার প্রকাশ্যে আনে ভারতীয় ফৌজ। সূত্রের খবর, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু জেটকে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে খুব উচ্চ কম্পাঙ্কের হাতিয়ারটির নকশা তৈরি করেছেন ডিআরডিওর গবেষকেরা। এর পাল্লা ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার বলে জানা গিয়েছে। যুদ্ধবিমান ছাড়া ড্রোন, রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করার ক্ষমতাও আছে নয়াদিল্লির এই ‘তৃতীয় নয়ন’-এর।
০৪২০
উল্লেখ্য, দেশীয় প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীদের তৈরি রেডারটির প্রথম সংস্করণের পাল্লা ছিল ৪০০ কিলোমিটার। পরবর্তীকালে সেটা আরও বৃদ্ধি পায়। এর অত্যধিক উচ্চ কম্পাঙ্ক ৩০ থেকে ৩০০ মেগাহার্ৎজ়ের মধ্যে ওঠা-নামা করতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তা ছাড়া পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেলথ’ যুদ্ধবিমান চিহ্নিতকরণে সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটিতে অন্য একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে ডিআরডিও।
০৫২০
রেডারের নজরকে ফাঁকি দিতে অধিকাংশ পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেলথ’ জেটে একটি বিশেষ ধরনের রঙের ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। এর জন্য যে কোনও রেডিয়ো তরঙ্গ শুষে নিতে পারে ওই যুদ্ধবিমান। কিন্তু, সেটা খুব উচ্চ কম্পাঙ্কের হলে বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। এই দুর্বলতাকেই কাজে লাগিয়ে ডিআরডিওর বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন সংশ্লিষ্ট ভিএইচএফ রেডার, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
০৬২০
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই রেডারের নজর ফাঁকি দিতে পারবে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গর্বের পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ লাইটনিং টু লড়াকু জেট। সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটিকে চিহ্নিত করা একরকম অসম্ভব বলেই মনে করে ওয়াশিংটন। এ ছাড়া চিনা লড়াকু জেট জে-২০ এবং জেএফ-১৭-এর কথা মাথায় রেখে একে তৈরি করেছে ডিআরডিও। দ্বিতীয় যুদ্ধবিমানটি বর্তমানে বহুল পরিমাণে ব্যবহার করছে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী।
০৭২০
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতীয় বায়ুসেনার লড়াকু জেট ধ্বংস করতে ইসলামাবাদের হাতে আছে ‘কুইক রিয়্যাকশন সার্ফেস টু এয়ার’ (দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল ভূমি থেকে আকাশ) ক্ষেপণাস্ত্র। সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটিকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা রয়েছে ভারতের এই অত্যধিক উচ্চ কম্পাঙ্কের রেডারের। বাহিনীর এই ‘তৃতীয় নয়ন’ এড়িয়ে হামলা চালাতে পারবে না কোনও উইংম্যান ড্রোনও। ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু জেটের সঙ্গে একে উড়িয়ে এনে হামলার চেষ্টা করতে পারে শত্রু।
০৮২০
চলতি বছরের মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের সংঘর্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা (এয়ার ডিফেন্স) ব্যবস্থা। ইসলামাবাদের ছোড়া ‘সোয়ার্ম’ ড্রোন বা ড্রোনের ঝাঁক এবং রকেট-ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করে নয়াদিল্লির ফৌজ। এ ছাড়া ধ্বংস হয় রাওয়ালপিন্ডির বিমানবাহিনীর কয়েকটি যুদ্ধবিমানও।
০৯২০
ভারতীয় সেনার এ-হেন সাফল্যের ষোলো আনা কৃতিত্ব গিয়েছে রুশ নির্মিত ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’, ইজ়রায়েলের ‘বারাক-৮’ এবং দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘আকাশ’ এয়ার ডিফেন্সের ঝুলিতে। সংশ্লিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলিকে চালনা করতে ফৌজের হাতে রয়েছে সংযুক্ত কমান্ড সেন্টার। নতুন অত্যধিক উচ্চ কম্পাঙ্কের রেডারটি সেখানেই জায়গা করে নিয়েছে। এর জেরে আকাশ সুরক্ষা যে আরও মজবুত হল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
১০২০
অত্যাধুনিক রেডারটিকে এ দেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্প সংস্থা টাটার তৈরি ট্রাকের উপরে বসিয়েছেন ডিআরডিও গবেষকেরা। ফলে খুব সহজেই একে এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যেতে পারছে ফৌজ। রাজস্থানের মরু এলাকা, গুজরাতের কচ্ছের লবণাক্ত জলবায়ু বা লাদাখের বরফের ঢাকা পাহাড়— সর্বত্রই সমান দক্ষতায় কাজ করতে পারছে এই অত্যধিক উচ্চ কম্পাঙ্কের রেডার।
১১২০
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ বেশ কিছু গোলা-বারুদ খরচ হওয়ায় সেই শূন্যতা পূরণ করতে কোমর বেঁধে লেগে পড়েছে ভারতীয় ফৌজ। সম্প্রতি জরুরি ভিত্তিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানববাহী (ম্যান-পোর্টেবল) ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী (অ্যান্টি ট্যাঙ্ক) জ্যাভলিন ক্ষেপণাস্ত্র কেনার সুবজ সঙ্কেত পেয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এ ছাড়া কামানের গোলাও নয়াদিল্লিকে সরবরাহ করবে আমেরিকা। এ দেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে জ্যাভলিন তৈরির ইচ্ছাও রয়েছে তাদের।
১২২০
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, আপাতত জরুরি ভিত্তিতে ফৌজের জন্য কেনা হচ্ছে ২৫টি লঞ্চার এবং ১০০টি ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র। হাতিয়ারটির পোশাকি নাম ‘এফজিএম-১৪৮ অ্যান্টি ট্যাঙ্ক জ্যাভলিন মিসাইল’। এ ছাড়া এক্সক্যালিবার প্রিসিশন স্ট্রাইক কামানের গোলাও নয়াদিল্লিকে সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। জোড়া হাতিয়ার এবং বারুদের জন্য ৯.৩ কোটি ডলার পাবে আমেরিকা, ভারতীয় মুদ্রায় যেটা প্রায় ৮২৬ কোটি টাকা।
১৩২০
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে নিজের জাত চেনায় জ্যাভলিন। এর সাহায্যেই মস্কোর একের পর এক টি-৭২ ও টি-৯০-এর মতো অতিশক্তিশালী ট্যাঙ্ক উড়িয়েছে কিভের ফৌজ। ফলে পশ্চিমের প্রতিবেশীর এলাকা দখলে গতি কমাতে বাধ্য হয় ক্রেমলিন। জ্যাভলিনের কারণেই বহু রণাঙ্গনে থমকে যায় রুশ আর্মার্ড ডিভিশনগুলির দ্রুত অগ্রসর।
১৪২০
১৯৮৯ সালে জ্যাভলিনের নকশা তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রতিরক্ষা সংস্থা। সেগুলি হল, টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস, মার্কিন ম্যারিয়েটা (বর্তমান রেথিয়ন টেকনোলজ়িস) এবং লকহিড মার্টিন। তবে এর উৎপাদনের দায়িত্ব পায় শেষের দু’টি কোম্পানি। অতীতে লিবিয়া ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং ইরাক যুদ্ধে এর বহুল ব্যবহার করেছে মার্কিন ফৌজ।
১৫২০
‘ট্যাঙ্ক কিলার’ জ্যাভলিনের বিশেষত্ব হল, সামান্য প্রশিক্ষণের পর একজন মাত্র সৈনিক এটিকে ব্যবহার করতে পারেন। ক্ষেপণাস্ত্রটির একটি লঞ্চার রয়েছে, যেটি কাঁধে রেখে নিখুঁত লক্ষ্যে ছোড়া যায় সংশ্লিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র। এর ব্যবহারের সঙ্গে আমেরিকারই তৈরি ‘শোল্ডার ফায়ার্ড’ বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র স্টিঙ্গারের বেশ মিল রয়েছে।
১৬২০
জ্যাভলিনের ওজন আনুমানিক ২৩ কেজি। বহন করতে পারে সাড়ে আট কেজি বিস্ফোরক। এর লঞ্চার সাধারণত ৬.৪ কেজির হয়ে থাকে। চার কিলোমিটার পাল্লার এই মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ধীর গতিতে ওড়া হেলিকপ্টার ধ্বংস করতেও পটু। এর আনুমানিক দাম প্রায় দু’লক্ষ ডলার বলে জানা গিয়েছে।
১৭২০
গত মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন পাক সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম-৭৭৭ আল্ট্রা লাইট হাউৎজ়ার মোতায়েন করে ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনী। ৪০ কিলোমিটার পাল্লার ওই কামান থেকে বেশ কয়েক রাউন্ড গোলাবর্ষণও করতে হয়েছিল। তখনই নিখুঁত হামলায় সেনা কমান্ডারদের মন জয় করে নেয় এক্সক্যালিবার প্রিসিশন স্ট্রাইক আর্টিলারি শেল। আপাতত তাই ২১৬টি ওই ধরনের গোলার বরাত দিয়েছে ফৌজ।
১৮২০
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের হাতে মার খাওয়ার পরও পাকিস্তান যে তার চরিত্র বদলেছে এমনটা নয়। পরবর্তী ছ’মাসে বেশ কয়েক বার পরমাণু হামলার হুমকি দেন ইসলামাবাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান (চিফ অফ ডিফেন্স ফোর্সেস) ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। এর মধ্যেই পাল্টা সুর চড়িয়ে পাক প্রদেশ সিন্ধকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। যা নিয়ে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটিতে পড়ে গিয়েছে হইচই।
১৯২০
গত ২৩ নভেম্বর সিন্ধি সমাজ সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময়ে রাজনাথ বলেন, ‘‘আজ সিন্ধ ভারতের অংশ নয় তো কী হয়েছে, সভ্যতাগত দিক থেকে সিন্ধ সব সময় আমাদের অংশ হয়েই থাকবে। আর রইল ভূখণ্ডের কথা, সীমান্ত তো বদলাতেই পারে। কে বলত পারে, হয়তো কাল সিন্ধ ভারতে ফেরত এসে গেল।’’
২০২০
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ওই বক্তৃতার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা বিবৃতি দেয় পাকিস্তান। সেখানে ভারতের নিন্দা করে ইসলামাবাদ বলেছে, ‘‘এই ধরনের মন্তব্য হিন্দুত্ববাদী মানসিকতার প্রকাশ এবং তা প্রতিষ্ঠিত বাস্তবকে চ্যালেঞ্জ করে। এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক আইন, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিরোধী।’’ পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে আগামী দিনে দু’পক্ষের মধ্যে ফের সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউই। আর তাই অত্যাধুনিক রেডারে ভারতীয় সেনার অস্ত্রাগার ভরে ওঠার আলাদা তাৎপর্য রয়েছে, বলছেন সাবেক ফৌজি অফিসারেরা।