Advertisement
০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
Indian Navy Warship

ব্রহ্মস থেকে বারাক-৮, আছে ডুবোজাহাজ ধ্বংসের রকেট-টর্পেডো! পাক-চিনের ঘুম উড়িয়ে ফ্রিগেট ‘তারাগিরি’ পেল ভারতীয় নৌসেনা

সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি স্টেলথ ফ্রিগেট ‘আইএনএস তারাগিরি’ হাতে পেল ভারতীয় নৌবাহিনী। সংশ্লিষ্ট রণতরীটিতে রয়েছে কোন কোন মারণাস্ত্র? কী ভাবে চিন ও পাকিস্তানের মতো শত্রুর মোকাবিলা করবে এই যুদ্ধজাহাজ?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৩৩
Share: Save:
০১ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ছ’মাস পার। ‘যুদ্ধ’ থামার পর থেকেই তিন বাহিনীর শক্তি ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে ভারত। কেনা হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, কামানের গোলা থেকে শুরু করে অন্যান্য অত্যাধুনিক হাতিয়ার। পাশাপাশি, দেশীয় প্রযুক্তিতে অস্ত্র নির্মাণের উপরের জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। এই আবহে এ-দেশের নৌসেনার হাতে লিয়েন্ডার শ্রেণির একটি ফ্রিগেট রণতরী তুলে দিল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা মাজ়গাঁও ডক। ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত ওই যুদ্ধজাহাজ যে পাকিস্তান ও চিনের মনে ভয় ধরাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

০২ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর মুম্বইয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে সংশ্লিষ্ট ফ্রিগেটটিকে তুলে দেয় রণতরী নির্মাণকারী সংস্থা মাজ়গাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড। ‘স্টেলথ’ শ্রেণির এই যুদ্ধজাহাজটির পোশাকি নাম ‘আইএনএস তারাগিরি’। উত্তরাখণ্ডের একটি পাহাড়ের নাম থেকে এই নাম নেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে এটি তৈরি হওয়ায় রণতরী নির্মাণে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে বড় মাইলফলক ছোঁয়া গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

০৩ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

নৌবাহিনী জানিয়েছে, ‘আইএনএস তারাগিরি’ নীলগিরি শ্রেণির চতুর্থ যুদ্ধজাহাজ। ‘প্রকল্প ১৭ আলফা ফ্রিগেট’-এর আওতায় সংশ্লিষ্ট রণতরীটি নির্মাণ প্রক্রিয়া রেকর্ড সময়ে শেষ করেছে মাজ়গাঁও ডক। যুদ্ধজাহাজটির নকশা তৈরি করে নৌসেনার ‘ওয়ারশিপ ডিজাইন ব্যুরো’। মাত্র ৮১ মাসের মধ্যে এর সম্পূর্ণ নির্মাণ প্রক্রিয়া শেষ করতে সক্ষম হয় সংশ্লিষ্ট বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা। আগে নীলগিরি শ্রেণির ফ্রিগেট তৈরি করতে ৯৩ মাস লেগেছিল।

০৪ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ‘আইএনএস তারাগিরি’র নির্মাণকাজ শুরু করে মাজ়গাঁও ডক। ৬,৬৭০ টন ওজনের গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত ফ্রিগেটটি ১৪৯ মিটার লম্বা। এতে রয়েছে ডিজ়েল এবং গ্যাস প্রপালশানের সংযুক্ত ব্যবস্থা। সর্বোচ্চ ২৮ নটিক্যাল মাইল (অর্থাৎ ঘণ্টায় ৫২ কিলোমিটার) বেগে ছুটতে পারে এই যুদ্ধজাহাজ। সমুদ্রের বুকে ৫,৫০০ নটিক্যাল মাইল জুড়ে দাপিয়ে বেড়াতে পারবে ‘আইএনএস তারাগিরি’।

০৫ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

ফ্রিগেট শ্রেণির যুদ্ধজাহাজটিতে রয়েছে নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (পড়ুন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)। শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট বা লড়াকু জেটকে মাঝ-আকাশে উড়িয়ে দিতে এতে রয়েছে ইজ়রায়েলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি ৩২টি বারাক-৮ ক্ষেপণাস্ত্র। সেগুলির পাল্লা ৫০০ মিটার থেকে ১০০ কিলোমিটার। এ ছাড়া বিপক্ষের রণতরী ধ্বংস বা উপকূল ভাগে হামলার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রে ‘আইএনএস তারাগিরি’কে সাজিয়েছে নৌসেনা।

০৬ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

সংশ্লিষ্ট যুদ্ধজাহাজটিকে শত্রুপক্ষের ডুবোজাহাজ ধ্বংসের জন্যও ব্যবহার করা যাবে। তার জন্য এতে রয়েছে ‘বরুণাস্ত্র’ নামের টর্পেডো। এ ছাড়া ‘নিঃশব্দ ঘাতক’দের উপর হামলা চালাতে ‘আরবিইউ-৬০০০ অ্যান্টি সাবমেরিন রকেট লঞ্চার’ও এতে দিয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা। এর মাধ্যমে একসঙ্গে ৭২টা রকেট ছুড়তে পারবেন এ দেশের জলযোদ্ধারা। এই সক্ষমতা ফ্রিগেটটির শক্তি বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, বলছেন সাবেক সেনাকর্তাদের একাংশ।

০৭ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

যুদ্ধ পরিস্থিতি বাদ দিলে জলদস্যুদের হাত থেকে পণ্যবাহী জাহাজকে রক্ষা করতে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে থাকে ফ্রিগেট। সেই কথা মাথায় রেখে ‘আইএনএস তারাগিরি’তে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড’-এর তৈরি ৭৬ মিলিমিটারের ওটো মেলারা নৌকামান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধজাহাজটির ডেকের একেবারে সামনের দিকে রয়েছে রাশিয়ার তৈরি একে-৬৩০ নামের আর একটি আগ্নেয়াস্ত্র। একে ‘ড্রোন কিলার’ হিসাবেও ব্যবহার করতে পারবেন ক্যাপ্টেন।

০৮ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

এ ছাড়া ‘আইএনএস তারাগিরি’তে দু’টি কপ্টার বহনের জায়গা রয়েছে। সেখানে ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’ বা হ্যালের তৈরি ধ্রুব বা ব্রিটিশ সংস্থার তৈরি ‘সি কিং এমকে ৪২বি’ কপ্টার রাখতে পারবেন ক্যাপ্টেন। পাশাপাশি একাধিক অত্যাধুনিক রেডার, সোনার এবং সেন্সর রয়েছে ওই রণতরীতে। এর মধ্যে দ্বিতীয়টিকে ডুবোজাহাজের অবস্থান খুঁজে পেতে ব্যবহার করে থাকেন জলযোদ্ধারা।

০৯ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

১৯৮০ সালের ২৭ জুন ভারতীয় নৌবাহিনীর বহরে সামিল হয় ‘তারাগিরি’ নামের একটি যুদ্ধজাহাজ। দীর্ঘ ৩৩ বছরের গৌরবময় কর্মজীবনের পর ২০১৩ সালের ২৭ জুন অবসর নেয় ওই রণতরী। সে দিক থেকে লিয়েন্ডার শ্রেণির ফ্রিগেটটির পুনর্জন্ম হল বলা যেতে পারে। কারণ মাত্র ১২ বছরের মধ্যেই একই নামের যুদ্ধজাহাজকে বাহিনীর বহরে সামিল করল নৌসেনা।

১০ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, ‘প্রকল্প ১৭ আলফা ফ্রিগেট’-এর আওতায় আরও তিনটি রণতরী পাবে ভারতীয় নৌবাহিনী। তার মধ্যে দু’টি তৈরি করবে কলকাতার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড’ বা জিআরএসই। অন্যটির বরাত রয়েছে মাজ়গাঁও ডকের হাতে। আগামী বছরের অগস্টের মধ্যে তিনটির মধ্যে অন্তত দু’টি নৌসেনা হাতে পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এই নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও ঘোষণা করেনি বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা দু’টি।

১১ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

এর আগে ‘প্রকল্প ১৭’-এর আওতায় শিবালিক শ্রেণির একগুচ্ছ যুদ্ধজাহাজ ঘরের মাটিতেই তৈরি করে ভারত। নৌসেনার পদস্থ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সেগুলির তুলনায় নীলগিরি শ্রেণির রণতরীতে আরও উন্নত হাতিয়ার এবং সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দেশকে ‘আত্মনির্ভর’ হতে সাহায্য করছে বলেও স্পষ্ট করেছেন তাঁরা। ‘আইএনএস তারাগিরি’ কী ভাবে কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, তারও বিবরণ পাওয়া গিয়েছে।

১২ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, নৌবাহিনীতে সদ্য কর্মজীবন শুরু করা ফ্রিগেটটি তৈরিতে ৭৫ শতাংশ ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। এর জেরে মাজ়গাঁও ডকের মূল নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল ২০০-র বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থা। ফলে সরাসরি চার হাজারের বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছিল। অপ্রত্যক্ষ ভাবে কাজ পান আরও ১০ হাজার জন। পরবর্তী যুদ্ধজাহাজগুলি তৈরির ক্ষেত্রেও রোজগার করতে পারবেন তাঁরা।

১৩ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া বা চিনের মতো বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলির নৌবাহিনী বিভিন্ন ধরনের রণতরী ব্যবহার করে থাকে। ভারতীয় নৌসেনাও এর ব্যতিক্রম নয়। যুদ্ধজাহাজের মধ্যে ডেস্ট্রয়ার এবং ফ্রিগেটকে উচ্চ শক্তি সম্পন্ন হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রথমটি আক্রমণের জন্য এবং দ্বিতীয়টিকে রক্ষণাত্মক কাজে ব্যবহার করে থাকেন জলযোদ্ধারা। ফ্রিগেটের সংখ্যা বৃদ্ধি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় যে নয়াদিল্লির প্রভাব বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে, তা বলাই বাহুল্য।

১৪ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

সম্প্রতি, ডুবোজাহাজের বহর নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে এসেছেন ভারতীয় নৌসেনাপ্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠি। তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছরের গোড়াতেই পরমাণু শক্তিচালিত এবং আণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম তৃতীয় ডুবোজাহাজটি হাতে পাবে বাহিনী। ওই ‘নিঃশব্দ ঘাতক’-এর নাম ‘আইএনএস অরিদমন’ রেখেছে নৌবাহিনী। এর চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে বলে জানিয়েছেন অ্যাডমিরাল দীনেশ।

১৫ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

বর্তমানে পরমাণু হামলায় সক্ষম দু’টি ডুবোজাহাজ রয়েছে নৌসেনার বহরে। সেগুলি হল, ‘আইএনএস অরিহান্ত’ এবং আইএনএস অরিঘাট’। ছ’হাজার টনের ওই দুই ‘নিঃশব্দ ঘাতক’কে ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে হাতে পায় নৌবাহিনী। এই শ্রেণির তৃতীয় ডুবোজাহাজ হল ‘আইএনএস অরিদমন’। এই ধরনের আরও একটি ডুবোজাহাজ তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। এর কোড নাম হল এস-৪*। সেটি ওজন অবশ্য সাত হাজার টন হবে বলে জানা গিয়েছে।

১৬ ১৬
Indian Navy gets stealth frigate INS Taragiri, how it counter adversaries like China and Pakistan

এর পাশাপাশি ২০২৭-’২৮ অর্থবর্ষে রাশিয়ার থেকে ১০ বছরের লিজ়ে একটি পরমাণু শক্তিচালিত আক্রমণকারী ডুবোজাহাজ নিতে চলছে ভারতীয় নৌসেনা। সে বিষয়ে দু’তরফে কথাবার্তা প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দ্রুতগতির ডুবোজাহাজটিতে অবশ্য থাকবে না কোনও আণবিক হাতিয়ার। মূলত শত্রুর রণতরী ডোবানোর কাজেই একে ব্যবহার করবেন নয়াদিল্লির নৌকমান্ডারেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy