২০২২-২৩ সালে রেলের আয় সংক্রান্ত ক্যাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিট মুনাফার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখিয়েছে রেল। ২০১৮-১৯ সালে ৬,১৪৬.২৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২২-২৩ সালে ১২ হাজার ৫৬ কোটি টাকায় পৌঁছোয় বলে রেল দাবি করেছে। ২০২১-২২ সালের অর্থবর্ষে রেলের নিট ঘাটতি ছিল ১৫ হাজার ২৫ কোটি টাকা। সেই ঘাটতির খরা ২২-২৩ এর অর্থবর্ষে কেটেছে বলে রেলের দাবি।
ক্যাগের রিপোর্টের সঙ্গে রেলের মুনাফার লাভের দাবির বিস্তর ফারাক রয়েছে। রেল জানিয়েছিল ২০২২-২৩ এর অর্থবর্ষে রেলের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। রেলের এই হিসাবটি আদতে জল মেশানো। ক্যাগের রিপোর্ট অনুযায়ী রেলওয়ের মোট আয় এবং ব্যয়, যখন তার ‘ক্রস-সাবসিডি’(এক জায়গায় ভর্তুকি বাড়িয়ে অন্যত্র কমানো) রেকর্ডের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তখন দেখা যায় যে রেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যয় কম দেখিয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে স্লিপার ক্লাস, অর্ডিনারি ক্লাস এবং সেকেন্ড ক্লাসের ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে রেলকে। যথাক্রমে ১৭ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা, ১৭ হাজার ৭৭ কোটি টাকা এবং ১৬,৩৫৭ কোটি টাকা গুনাগার দিয়ে হয়েছে পরিষেবা চালু রাখার জন্য। যাত্রীভাড়ায় বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দিতে হয় রেলকে। সেই ভর্তুকি এসেছে পণ্য পরিবহণ থেকে।
রেলের সোজাসাপটা আয় ও ব্যয়ের হিসাবে দেখানো হয়েছে যাত্রী, পণ্য পরিবহণ এবং অন্যান্য পরিষেবা থেকে রেলের মোট আয় হয়েছিল ২ লক্ষ ৪০ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। রেলের বেতন ও পরিচালন খাতের ব্যয়ের যে হিসাব দেখানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে ওই অর্থবর্ষে রেলের ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে রেলকে। আয় থেকে ব্যয়ের হিসাব বাদ দিয়ে ২,৫১৭.৩৮ কোটি টাকা লাভের হিসাব দেখিয়েছে রেল।
এই লোকসানের ধাক্কা সামলাতে পণ্য পরিবহণ খাতের লাভের অংশ যাত্রী পরিষেবা খাতে ভর্তুকি দিতে বাধ্য হয়েছে রেল। পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে যে মুনাফা হয়েছে তার সিংহভাগই এসেছে কয়লা পরিবহণ থেকে। ৫২ শতাংশের বেশি আয় হয়েছে একটি মাত্র পণ্য পরিবহণ করেই। যদিও একক পণ্য পরিবহণের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকার বিষয়টি ভবিষ্যতে আর কতটা ফলদায়ক হবে সে নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
নতুন ট্রেন চালানোর স্বপ্ন দেখালেও চলতি বাজেটে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে ব্যর্থ হয়েছে রেল। বাজেট নথি বলছে, লক্ষ্য থেকে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার কম আয় হয়েছে। বেড়েছে অপারেটিং রেশিয়ো। নতুন লাইন নির্মাণ, ডাবলিং, ট্রাকের মেরামতি ও বন্দে ভারতের মতো ট্রেনসেট নির্মাণে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করে পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে খরচ বাড়ানো হয়েছে।
রেলের ভাঁড়ারের দুর্দশায় যে সব উচ্চপদস্থ কর্তা চিন্তিত, তাঁদের প্রশ্ন, আয় বুঝেই তো ব্যয় করা উচিত। আয় লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছোচ্ছে না জেনেও যাত্রী পরিষেবায় ক্রমাগত ভর্তুকি দিয়ে চলেছে মন্ত্রক। পণ্য পরিবহণে রেল ভাল করলেও, যাত্রীভাড়ায় ভর্তুকি, অন্যান্য খাত থেকে আশানুরূপ আয় না হওয়ায় বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে রেলকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy