Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Indian seafood industry

ড্রাগন-সামুরাইয়ে তাল ঠোকাঠুকিতে লাভ ভারতের? জাপানের গ্রাস কেড়ে এ দেশের মৎস্য ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোটাবে বেজিং?

আমেরিকার বাণিজ্যিক বাধা এড়াতে চিনের বাজারে আরও প্রসারিত হওয়ার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছিল চিংড়ি ও সামু্দ্রিক প্রাণী চাষিরা। তাইওয়ান নিয়ে কূটনৈতিক সংঘাতের জেরে সেই পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবে রূপায়িত হতে পারে বলে আশায় বুক বাঁধছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৫ ১২:১৫
Share: Save:
০১ ১৮
Indian seafood industry

ভারতের পৌষ মাস, আর উদীয়মান সূর্যের দেশে সর্বনাশ। বেজিং সামুদ্রিক খাবার আমদানিতে জাপানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতেই ভাগ্য খুলল ভারতের ব্যবসায়ীদের। মার্কিন শুল্কের চাপে নুয়ে পড়া ভারতীয় সামুদ্রিক খাবারের শিল্প আবার ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করেছে। জাপানের রফতানিকারকদের ব্যবসায় কালো মেঘ জমলেও এ দেশের ব্যবসায়ীরা আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন বলে সূত্রের খবর।

০২ ১৮
Indian seafood industry

তাইওয়ান নিয়ে কূটনৈতিক লড়াইয়ের আবহে জাপানের সমস্ত ধরনের সামুদ্রিক খাবার আমদানির উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বেজিং। এই সুযোগে চিনের বাজার কব্জা করার অপ্রত্যাশিত সুযোগের দরজা খুলে গিয়েছে ভারতীয় সামুদ্রিক পণ্য ব্যবসায়ীদের সামনে। চিন-জাপানের সংঘাত ভারতীয় অর্থনীতির পালে হাওয়া দিতে সাহায্য করেছে। নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর পরই ভারতীয় সামুদ্রিক খাবার রফতানিকারকদের শেয়ারের দর ১১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে।

০৩ ১৮
Indian seafood industry

তেলঙ্গানাস্থিত সামুদ্রিক খাবারের একটি সংস্থার শেয়ারের দর একধাক্কায় প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দু’মাসের মধ্যে সংস্থাটি দৈনিক সর্বোচ্চ লাভের মুখ দেখেছে। ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সামুদ্রিক খাবার উৎপাদক এবং রফতানিকারক সংস্থা কোস্টাল কর্পোরেশন। তাদের শেয়ারের দাম ৫ শতাংশ বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কখাঁড়ায় কোস্টাল কর্পোরেশন চিন এবং ইউরোপীয় দেশগুলির বিকল্প বাজার ধরতে মরিয়া চেষ্টা করতে শুরু করে।

০৪ ১৮
Indian seafood industry

চিন ছাড়াও রাশিয়া, ব্রিটেন, নরওয়ে, সুইৎজ়ারল্যান্ড, জাপান এবং পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে রফতানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেন ভারতীয় সামুদ্রিক খাবারের ব্যবসায়ীরা। ট্রাম্পের শুল্কবাণে ভারতের অন্যান্য ক্ষেত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন যে ক্ষেত্রটি হতে পারে বলে আশঙ্কা, সেটা সামুদ্রিক খাবারের ব্যবসা। বাজার মন্দা থাকায় ইতিমধ্যেই বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন সামুদ্রিক মৎস্যচাষিরা।

০৫ ১৮
Indian seafood industry

আমেরিকার বাণিজ্যিক বাধা এড়াতে চিনের বাজারকে আরও প্রসারিত করার পরিকল্পনা করেন চিংড়ি ও সামু্দ্রিক প্রাণী চাষিরা। তাইওয়ান নিয়ে কূটনৈতিক সংঘাতের জেরে সেই পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবে রূপায়িত হতে পারে বলে আশায় বুক বাঁধছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এশিয়ার অন্যতম প্রধান দুই অর্থনীতির মধ্যে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক বিবাদের জেরে লক্ষ্মীলাভ হবে ভারতের, মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

০৬ ১৮
Indian seafood industry

সম্প্রতি তাইওয়ানের উপরে চিনের হামলার নিন্দা করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। এর জেরে ১৩০ বছরের পুরনো শত্রুতার আগুনে নতুন করে ঘি পড়ে। তাইওয়ানকে ঘিরে নতুন করে সংঘাতে জড়ায় চিন এবং জাপান। গত ৭ নভেম্বর টোকিয়োর প্রধান জানিয়েছিলেন, এটা ‘অস্তিত্বের সংকট’। প্রয়োজনে টোকিয়ো যে সামরিক পদক্ষেপ করবে, তা-ও শোনা যায় তাঁর মুখে।

০৭ ১৮
Indian seafood industry

সেই বিবৃতির পর হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি শি জিনপিঙের সরকার। চিনা প্রতিরক্ষা দফতর হুঁশিয়ারি দেয়, তাইওয়ান পরিস্থিতি নিয়ে নাক গলানো বন্ধ না করলে ‘ধ্বংসাত্মক সামরিক পদক্ষেপের’ মুখে পড়বে জাপান। দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানকে (সাবেক ফরমোজ়া) কব্জা করার চেষ্টা করলে জাপান যে চুপ করে বসে থাকবে না তা বুঝতে পেরে টোকিয়োকে ‘ভাতে মারতে’ উদ্যোগী হয়েছে ড্রাগনভূমের সরকার।

০৮ ১৮
Indian seafood industry

বহু দিন ধরেই গণতান্ত্রিক দেশ তাইওয়ানের উপর অধিকার দাবি করে আসছে চিন। গায়ের জোরে যে দ্বীপরাষ্ট্রটি দখল করবে না তারা, এমন আশ্বাস এক বারও দেয়নি বেজিং। বরং মাঝেমধ্যেই যুদ্ধ শুরু করার হুমকি দেয় তারা। এত দিন তাইওয়ান নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেনি জাপান। কৌশলগত ভাবেই তারা নিজেদের অবস্থান অস্পষ্ট রেখেছিল। প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে সে দেশের পার্লামেন্টে সানায়ে তাকাইচির দেওয়া বিবৃতির ফলে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে।

০৯ ১৮
Indian seafood industry

এতে জাপানের উপরে বেজায় চটেছে চিন। দেশের নাগরিকদের জাপান যাওয়ার ব্যাপারে ‘সাবধান’ করেছে তারা। তা ছাড়া সে দেশ থেকে সমস্ত ধরনের সামু্দ্রিক খাবারের আমদানি স্থগিত করে দিয়েছে বেজিং। জিনপিঙের সরকারের এই সিদ্ধান্তে মাথায় হাত পড়েছে জাপানি মৎস্য ও সামুদ্রিক খাবার ব্যবসায়ীদের। কারণ গোটা দেশের সামু্দ্রিক খাবারের ২০ থেকে ৩০ শতাংশই চিন আমদানি করত প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র থেকে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা হতে চলেছে এই নিষেধাজ্ঞা।

১০ ১৮
Indian seafood industry

ফুকুশিমা পরমাণুকেন্দ্র থেকে বিষাক্ত জল ছাড়ার কারণে দু’বছর ধরে স্থগিতাদেশ ছিল জাপানের সামুদ্রিক খাবারের উপরে। সম্প্রতি চিন সেই আদেশ তুলে নেওয়ার পর পুনরায় জাপানের সামুদ্রিক খাবার রফতানি হচ্ছিল চিনে। গত জুন মাসে চিন জানায়, তারা জাপানের ৪৭টি প্রদেশের মধ্যে ১০টি বাদে বাকি সব ক’টি থেকে জাপানি সামুদ্রিক খাবার আমদানি পুনরায় শুরু করবে।

১১ ১৮
Indian seafood industry

সংঘাতের আবহে সেই নিষেধাজ্ঞা আবার জারি করেছে চিন। জাপানের মোট রফতানির মাত্র ১ শতাংশ সামুদ্রিক খাবার হলেও চিনের মতো বড় বাজার হাতছাড়া হওয়ায় হাত কামড়াতে শুরু করেছেন জাপানের রফতানি ব্যবসায়ীরা।

১২ ১৮
Indian seafood industry

চিনের বাজারে জাপানি সামুদ্রিক খাবারের প্রবেশ নিষেধ হওয়ায় সেই বাজার দখল করার সময়োপযোগী সুযোগ নিতে চাইছে ভারত। ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত থেকে পণ্য আমদানির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পর আমেরিকা ছেড়ে এ বার চিনের বাজার ধরায় মন দিয়েছেন ভারতীয় চিংড়ি ও সামু্দ্রিক খাবার ব্যবসায়ীরা। চিনের অভ্যন্তরে সামুদ্রিক খাবার, বিশেষ করে চিংড়ির চাহিদা ব্যাপক। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, বেজিং-টোকিয়ো সংঘাত ভারতীয় চিংড়ি রফতানিকারকদের জন্য আশীর্বাদ বলে প্রমাণিত হতে পারে।

১৩ ১৮
Indian seafood industry

আমেরিকার পরে ভারতীয় চিংড়ির দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক ছিল চিন। এখন সেই চিনের বাজারই ভারতের কাছে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বাজার হিসাবে উঠে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে ভারতীয় চিংড়ির শীর্ষ আমদানিকারক হয়ে উঠতে পারে চিন। অন্তত বাজারের প্রবণতা সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে।

১৪ ১৮
Indian seafood industry

সামুদ্রিক খাবারের মধ্যে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি যে পণ্য বিদেশে রফতানি করা হয়, তা হল চিংড়ি। পরিমাণের দিক থেকে এবং মূল্যের নিরিখে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি হওয়া পণ্যগুলির মধ্যেও অন্যতম এটি। ভারত থেকে রফতানি হওয়া সামুদ্রিক খাবারের দুই-তৃতীয়াংশই চিংড়ি।

১৫ ১৮
Indian seafood industry

বর্তমানে সামুদ্রিক খাবার প্রক্রিয়াকরণ এবং পুনঃরফতানির জন্য প্রাধান্য পেয়েছে চিন। বিগত কয়েক দিনে ভারত থেকে চিনে চিংড়ি আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। কারণ শুল্কমুক্ত বাজারে সরবরাহের জন্য ভারত থেকে চিংড়ি সংগ্রহ করে চিন। জাপানের রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিনের বাজার ভারতের দিকেই ঝুঁকতে শুরু করেছে বলে মত বাণিজ্য বিশ্লেষকদের।

১৬ ১৮
Indian seafood industry

প্রেসিডেন্টের নির্দেশমতো ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় রফতানির চাহিদা কমে ৯ শতাংশ নেমে যায়। আশার কথা এই যে, আমেরিকায় চাহিদা কমলেও চিন, ভিয়েতনাম ও তাইল্যান্ডের মতো এশীয় বাজারে ভারতীয় চিংড়ি ও সামুদ্রিক পণ্যের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। গত অর্থবর্ষে ভারত প্রায় ৭৪০ কোটি ডলার মাছ ও সামুদ্রিক পণ্য রফতানি করেছে। এর মধ্যে প্রধান ছিল হিমায়িত চিংড়ি ও বিভিন্ন ধরনের মাছ। সেই পরিমাণ ছিল ৪০ শতাংশেরও বেশি।

১৭ ১৮
Indian seafood industry

সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ সালে ভারতের রফতানির পরিমাণ পৌঁছোয় ১ কোটি ৭৮ লক্ষ ১০ হাজার মেট্রিক টনে, যা সর্বকালের রেকর্ড। চিন ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইংল্যান্ডের বাজার ধরতে পেরেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

১৮ ১৮
Indian seafood industry

ওয়ালমার্ট এবং ক্রোগারের মতো আমেরিকার বড় বড় খুচরো বিক্রি সংস্থাগুলি ভারতীয় পণ্য কিনে নেয়। এত দিন চিংড়ি-সহ যে পরিমাণ সামুদ্রিক খাবার ভারত থেকে রফতানি করা হত, তার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ যেত আমেরিকায়। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারত থেকে ২৪০ কোটি ডলার মূল্যের চিংড়ি আমদানি করেছিল আমেরিকা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy