Israel plans to annex Gaza as IDF chief says yellow line of ceasefire plan is new border of Tel Aviv dgtl
Israel’s New Border
দখল করা গাজ়ার অর্ধেক ইহুদিভূমির সঙ্গে মেশানোর ঘোষণা, ইজ়রায়েলের সীমান্ত বদলে বদলার আগুনে ফুঁসছে হামাস?
দখল হওয়া গাজ়ার অর্ধেক জমিকে এ বার ইহুদিভূমির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে একরকম ঘোষণা করে দিলেন ইজ়রায়েলি সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির। এই ইস্যুতে ফের অশান্তির আশঙ্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করেছে মিশর।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৩২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজ়া শান্তিচুক্তিকে ‘বুড়ো আঙুল’। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেওয়া যাবতীয় শর্ত উপেক্ষা করে ভূমধ্যসাগরের কোলের ওই প্যালেস্টাইন ভূমিখণ্ডটিকে একটু একটু করে গিলছে ইজ়রায়েল। এর জেরে অচিরেই বদলাতে চলেছে পশ্চিম এশিয়ার মানচিত্র। শুধু তা-ই নয়, একে ‘বৃহত্তর ইহুদি রাষ্ট্র’ বা গ্রেটার ইজ়রায়েল তৈরির অন্যতম বড় পদক্ষেপ হিসাবে দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের একাংশ। অন্য দিকে, এই ইস্যুতে ফের অশান্তির আশঙ্কায় আমেরিকাকে সতর্ক করেছে তেল আভিভের প্রতিবেশী মিশর।
০২১৮
সম্প্রতি, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়ার উত্তর দিকের বেইত হানুন এবং জ়াবালিয়া এলাকা পরিদর্শন করেন ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির। ওই সময় সেখানে মোতায়েন ইহুদি সৈনিকদের নির্দেশ দিতে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘‘গাজ়াকে যে হলুদ রেখায় বিভক্ত করা হয়েছে, এখন থেকে সেই পর্যন্ত আমাদের নতুন সীমান্ত। এর জন্য বাহিনীকে অবস্থান ধরে রাখতে হবে।’’ তাঁর ওই মন্তব্যের পরই দানা বাঁধে বিতর্ক।
০৩১৮
উত্তর গাজ়ায় দাঁড়িয়ে ঠিক কী বলেছেন আইডিএফ প্রধান? লেফটেন্যান্ট জেনারেল জামিরের কথায়, ‘‘হলুদ রেখা নতুন সীমান্ত হিসাবে কাজ করবে। ইহুদি রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে এখানে মোতায়েন থাকবে আমাদের ফৌজ। আগামী দিনে প্রয়োজনে এই হলুদ রেখা থেকে প্যালেস্টাইনের ভিতরে সামরিক অভিযান পরিচালনা করবে ইজ়রায়েল। গাজ়া উপত্যকার বিস্তীর্ণ এলাকার উপর আইডিএফের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সেখান থেকে পিছিয়ে আসার কোনও প্রশ্ন নেই।’’
০৪১৮
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, চলতি বছরের অক্টোবরে গাজ়ার ভাগ্য ঠিক করতে ট্রাম্পের নেতৃত্বে শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করে মিশর। সেখানে অবশ্য হাজির ছিল না যুযুধান ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। সংশ্লিষ্ট বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেওয়া ২০ দফা শর্ত মেনে নেয় ইসলামীয় দুনিয়ার একগুচ্ছ দেশ। ট্রাম্পের শান্তিপ্রস্তাবে সায় দেয় ভারতও। মাত্র দু’মাসের মধ্যে যা পুরোপুরি ব্যর্থ হতে চলেছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল।
০৫১৮
ট্রাম্পের দেওয়া ২০ দফা প্রস্তাব মেনে মিশরের শান্তি সম্মেলনে গাজ়া উপত্যকাকে কয়েকটি রেখায় ভাগ করে আন্তর্জাতিক মহল। তারই একটি হল ‘ইয়েলো লাইন’ বা হলুদ রেখা। এর ঠিক পিছনে রয়েছে লাল রঙের আর একটি রেখা। শান্তি বৈঠকে ঠিক হয়, ওই লাল রেখা পেরিয়ে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরে যাবে ইহুদি ফৌজ। অন্য দিকে ওই প্যালেস্টাইন ভূমির নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী। আইডিএফ পিছোতে থাকলে ধীরে ধীরে গাজ়ায় ঢুকবে তাঁরা। ট্রাম্পের দেওয়া এই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত মেনে নেয় হামাস।
০৬১৮
মিশরের শান্তি সম্মেলন থেকে হামাসকে অবিলম্বে হাতিয়ার ত্যাগ করতে বলেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই দাবি অবশ্য মানেনি প্যালেস্টাইনপন্থী ওই সশস্ত্র গোষ্ঠী। কিন্তু, তার পরেও ১০ অক্টোবরের পর গাজ়া উপত্যকা থেকে পিছোতে শুরু করে ইহুদি ফৌজ। ইজ়রায়েলি বাহিনী সরতেই পণবন্দিদের ফিরিয়ে দেয় হামাস। সেখানে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিল রেড ক্রস। পণবন্দিরা ফিরতেই সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে সুর চড়াতে শুরু করে আইডিএফ ও হামাস।
০৭১৮
এ বছরের অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৩ জন ইজ়রায়েলি পণবন্দিকে মুক্তি দেয় হামাস, যা নিয়ে বিবৃতি দিতে গিয়ে ইহুদি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘গাজ়ায় আমাদের আর কোনও পণবন্দি নেই।’’ পণবন্দিদের ফেরত পেতে ওই সময় ১,৯০০-র বেশি প্যালেস্টাইনি বন্দিকে জেল থেকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তেল আভিভ। এদের অনেকেই ছিলেন মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত। বন্দি প্রত্যর্পণের বিষয়টি শেষ হতেই দু’পক্ষের মধ্যে চড়তে থাকে পারদ।
০৮১৮
ডিসেম্বরের গোড়ায় গাজ়ার ‘গ্রাউন্ড জ়িরো’র পরিস্থিতি নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করে তুরস্কের আনাডোলু-সহ পশ্চিম এশিয়ার একাধিক সংবাদসংস্থা। সেই প্রতিবেদনগুলিতে বলা হয়েছে, সংঘর্ষবিরতির পর টানা ১১ সপ্তাহ ধরে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী এলাকায় ইজ়রায়েলি সেনার হামলায় অন্তত ৩৫৭ জন নিরীহ প্যালেস্টাইনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯০০। যদিও একে ‘মিথ্যা প্রচার’ বলে পাল্টা বিবৃতি দিতে দেরি করেনি আইডিএফ।
০৯১৮
ইহুদি ফৌজের দাবি, হামাসের গুপ্ত ঠিকানাগুলিতে ‘সুনির্দিষ্ট হামলা’ চালানো হয়েছে। কোনও নিরীহ প্যালেস্টাইনবাসীকে হত্যা করা হয়নি। এর পাশাপাশি নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে গাজ়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির একাধিক ভিডিয়ো প্রকাশ করে আইডিএফ। সেখানে হামাসের যোদ্ধাদের স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে গাজ়ার বাজারে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে।
১০১৮
তুরস্ক ও কাতারের গণমাধ্যমগুলি জানিয়েছে যে, নভেম্বরের গোড়া থেকে গাজ়ায় মোতায়েন বাহিনী প্রত্যাহারের ব্যাপারে গতি কমায় ইজ়রায়েল। ‘হলুদ লাইনে’ পৌঁছোতে তাঁদের বেশ কয়েক দিন সময় লেগেছিল। আইডিএফের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জামিরের নির্দেশমতো ওই এলাকাকে ইহুদি রাষ্ট্রটি নিজেদের নতুন সীমান্ত বলে ঘোষণা করলে অর্ধেক গাজ়ার দখল চলে আসবে তেল আভিভের হাতে। সে ক্ষেত্রে অর্ধেক ছোট হয়ে যাবে ওই প্যালেস্টাইন ভূমি। অন্য দিকে, নেতানিয়াহু সরকার পাবে বিস্তীর্ণ উর্বর জমি।
১১১৮
‘হলুদ লাইন’কে নতুন সীমান্ত বানানোর পাশাপাশি গাজ়ার দক্ষিণ দিকের রাফা সীমান্তকে বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ করে রেখেছে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স। এত দিন এই রাস্তা ধরে মিশর থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ঢুকত ওই প্যালেস্টাইনভূমিতে। আইডিএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেখানকার বাসিন্দাদের রাফা গিয়ে গাজ়া ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে দিচ্ছে আইডিএফ। কিন্তু এক বার কেউ চলে গেলে আর ফিরে আসতে দেখা যাচ্ছে না।
১২১৮
অতীতে অবশ্য গাজ়া কব্জা করার কোনও ছক নেই বলে প্যালেস্টাইনবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন নেতানিয়াহু। তবে অস্ত্র না ছাড়লে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীটির পাল্টা যুক্তি, গাজ়া দখলের জন্য এটা একটা অভিনব চাল দিয়েছে ইজ়রায়েল। এক বার হাতিয়ার ছাড়লে তাঁদের খুঁজে খুঁজে নিকেশ করবে আইডিএফ। এই নিয়ে দু’পক্ষের হুমকি এবং পাল্টা হুমকির কোনও সমাধান হয়নি।
১৩১৮
গাজ়া উপত্যকার ‘লাল রেখা’য় আন্তর্জাতিক শান্তি বাহিনী রাখার ব্যাপারেও যথেষ্ট জটিলতা রয়েছে। সংবাদ সংস্থা সিএনএন-নিউজ় ১৮-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজ়ায় বাহিনী পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে নভেম্বরে ইজ়রায়েলি গুপ্তচর সংস্থা ‘মোসাদ’ এবং মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি’ বা সিআইএ-র সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন পাকিস্তানের সেনা সর্বাধিনায়ক ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। সেখানে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে তেল আভিভের সঙ্গে দরদস্তুরে লেগে পড়েন তিনি, যা নিয়ে সরব হন খোদ ইসলামাবাদেরই সাংবাদিক আসমা শিরাজি।
১৪১৮
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ফিল্ড মার্শাল মুনিরের সৈনিক ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্ট করেন আসমা। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, জওয়ানপ্রতি ৮.৮৬ লক্ষ পাকিস্তানি টাকা দর দিয়েছেন সেনাপ্রধান, যা শুনেই পত্রপাঠ খারিজ করে দেয় ইজ়রায়েলি কর্তৃপক্ষ। বরং মাথাপিছু মাত্র ৮,৮৬০ পাকিস্তানি টাকা পাওয়া যাবে বলে স্পষ্ট করেছে তারা। এর পর ইসলামাবাদের ‘সিপাহসালার’ দাম কমিয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
১৫১৮
সূত্রের খবর, গাজ়ায় শান্তিপ্রতিষ্ঠায় ২০ হাজার সৈনিক মোতায়েন করতে চাইছে পাকিস্তান। অর্থাৎ, একলপ্তে ২০ কোটি ডলার রোজগারের নীলনকশা ছকে ফেলেছেন ফিল্ড মার্শাল মুনির। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ইহুদি রাষ্ট্র হওয়ায় ইজ়রায়েলকে কখনও সরকারি ভাবে স্বীকৃতি দেয়নি ইসলামাবাদ। তার পরেও তেল আভিভের থেকে ‘হাত পেতে’ টাকা নিতে রাওয়ালপিন্ডির সেনাপ্রধান যে বিন্দুমাত্র লজ্জিত হবেন না, তা বলাই বাহুল্য।
১৬১৮
বিশ্লেষকদের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইজ়রায়েলি বাহিনী ‘হলুদ রেখা’ থেকে না সরলে তাঁদের পিছনে থাকবে আন্তর্জাতিক শান্তি বাহিনী। অর্থাৎ, তেল আভিভ অধিকৃত গাজ়ার ভিতরের জমি পাহারা দেবে তাঁরা। অন্য দিকে ‘নতুন সীমান্ত’-এ মোতায়েন থাকবে আইডিএফ। এটা যে পশ্চিম এশিয়ার আরব দেশগুলি একেবারেই মেনে নেবে না, সে কথা জানিয়ে আমেরিকাকে সতর্ক করেছে মিশর।
১৭১৮
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েল ঢুকে মারাত্মক হামলা চালায় হামাস। তাঁদের অতর্কিত আক্রমণে মৃত্যু হয় ১,২০০ ইহুদির। এ ছাড়া ২৫০ জনকে পণবন্দি করে গাজ়ায় নিয়ে যায় তাঁর। ওই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গত দু’বছর ধরে যা সমানে চলছে।
১৮১৮
অক্টোবরে মিশরের শান্তি সম্মেলনের পর গাজ়ায় যুদ্ধ শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা করেন ট্রাম্প। যদিও কায়েরোর দাবি, আইডিএফ ‘হলুদ রেখা’ থেকে না সরলে ফের ৭ অক্টোবর ধাঁচের হামলা চালানোর চেষ্টা করবে হামাস। ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে ২৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন ইহুদি প্রধানমন্ত্রী। সেখানে কোনও সমাধানসূত্র বার হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।