Advertisement
১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
who is khutulun

বাবার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের গুঞ্জন, ‘গুপ্তঘাতক’কে বিয়ে! চেঙ্গিজ় খানের বংশধর এই রাজকন্যা ছিলেন দুর্ধর্ষ কুস্তিগির

ধমনীতে বইত চেঙ্গিজ় খানের বংশের রক্ত। দুর্ধর্ষ যোদ্ধা ছিলেন এই মঙ্গোলীয় রমণী। তাঁর কুস্তির প্যাঁচে কুপোকাত হয়ে মাথা নিচু করে প্রতিযোগিতাস্থল ছেড়ে চলে যান রাজারাজড়া।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১২:২৩
Share: Save:
০১ ১৬
who is khutulun

রাজকন্যা স্বয়ংবরা হবেন। আশপাশের রাজ্যের অনেকেই রাজকন্যার পাণিপ্রার্থী ছিলেন। রাজপরিবারের কন্যাকে বিয়ে করার ইচ্ছা নিয়ে যাঁরা স্বয়ংবরে যোগ দিতেন তাঁদের মানতে হত বিশেষ এক শর্ত। বড় অদ্ভুত ছিল পাত্রীর নিয়ম। রাজকুমারীকে যাঁরা বিয়ে করতে চাইতেন তাঁদেরই দিতে হত এক ভয়ঙ্কর পরীক্ষা।

০২ ১৬
who is khutulun

রাজকুমারীর সঙ্গে নামতে হত কুস্তি প্রতিযোগিতায়। হেরে গেলে পূরণ করতে হত অদ্ভুত শর্ত। এক বার প্রতিযোগিতায় হারার দণ্ড ছিল ১০০টি তেজি ঘোড়া। কুস্তিতে রাজকন্যার দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত। প্রতিপক্ষ কখনওই বিজয়ী হয়ে ফিরতেন না। ১০০ জনকে ধরাশায়ী করে ১০ হাজারটি ঘোড়া দিয়ে আস্তাবল ভর্তি করেছিলেন মঙ্গোলিয়ার এই রাজকন্যা।

০৩ ১৬
who is khutulun

তাঁর ধমনীতে বইত চেঙ্গিজ় খানের রক্ত। দুর্ধর্ষ যোদ্ধা ছিলেন এই মঙ্গোলীয় রমণী। নাম খুতুলুন। শস্ত্রচালনা তো বটেই, বাহুবলের দিক থেকেও তিনি ছিলেন সমসাময়িক রাজপুরুষদের সমতুল্য। তাঁর কুস্তির প্যাঁচে কুপোকাত হয়ে মাথা নিচু করে প্রতিযোগিতাস্থল ছেড়ে বহু রাজারাজড়া। তিনি ছিলেন কাইদু খানের কন্যা।

০৪ ১৬
who is khutulun

চিনের ইউয়ান রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা কুবলাই খান ছিলেন খুতুলুনের বাবার তুতো ভাই। অর্ধেক পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো কুখ্যাত চেঙ্গিজ় খানের বংশধর ছিলেন কাইদু। চেঙ্গিজ়ের তৃতীয় সন্তান ছিলেন ওগেদেই খান। তিনি ছিলেন মঙ্গোল সাম্রাজ্যের ‘দ্বিতীয় গ্রেট খান’ বা সম্রাট। ওগেদেইয়ের এক ছেলে ছিলেন, নাম কাশিন।

০৫ ১৬
who is khutulun

সেই কাশিনের ছেলেই কাইদু খান। কাইদুর প্রপিতামহ ছিলেন চেঙ্গিজ়। সেই হিসাবে খুতুলুনের বৃদ্ধ প্রপিতামহ ছিলেন চেঙ্গিজ় খান ওরফে তেমুজিন। নিজের শাসনকালে এশিয়া ও ইউরোপ জুড়ে প্রায় ১৫০ লক্ষ বর্গমাইলেরও বেশি জায়গা জয় করেন চেঙ্গিজ়।

০৬ ১৬
who is khutulun

কাস্পিয়ান সাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল মঙ্গোল সাম্রাজ্য। সেই বিখ্যাত বংশের কন্যা ছিলেন খুতুলুন। স্বাভাবিক ভাবেই নানা অস্ত্রবিদ্যা ও সমরকৌশলের শিক্ষা হয়েছিল শৈশবেই। কাইদু ছিলেন ১৫ সন্তানের জনক। এঁদের মাঝে ১৪ জন ছিলেন ছেলে। খুতুলুনই একমাত্র কন্যা। বর্তমান উজ়বেকিস্তান এবং কিরগিজ়স্তানের বিশাল তৃণভূমি অঞ্চল শাসন করতেন কাইদু।

০৭ ১৬
who is khutulun

খুতুলুনের জন্ম ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে। অশ্বচালনা, তিরন্দাজিতে তাঁর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো খুব কম জনই ছিলেন সেই সময়। তরোয়াল ও কুস্তিতে তাঁর পারদর্শিতা প্রশ্নাতীত ছিল। খুতুলুন ছিলেন ভয়ঙ্কর যোদ্ধা। খুতুলুনের প্রতিপক্ষেরা সবাই ছিলেন পুরুষ এবং বেশ শক্তিশালী। কিন্তু কেউই কোনও দিন শক্তিশালী খুতুলুনকে হারাতে পারেননি।

০৮ ১৬
who is khutulun

ইতালীয় পর্যটক মার্কো পোলোর লেখা থেকে খুতুলুন সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, সম্ভ্রান্ত পরিবারের এই কন্যার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল সুগঠিত। তিনি এতটাই লম্বা এবং শরীরের গঠন এমন দৃঢ় ছিল যে তাঁকে দৈত্য বলে ভ্রম হত। রাজকন্যার বাহুবলের কাছে রাজ্যের সমস্ত পুরুষ পরাজিত হতে বাধ্য হয়েছিলেন।

০৯ ১৬
who is khutulun

মেয়েকে এক আদর্শ ভবিষ্যৎ যোদ্ধা রূপে গড়ে তুলতে সব রকম ব্যবস্থা করেছিলেন কাইদু খান। মার্কো পোলোর লেখায় সেই তথ্যও উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেন যে, যুদ্ধে খুতুলুনের বীরত্ব তাঁর বাবার সেনাবাহিনীতে অতুলনীয় ছিল। তাঁর পছন্দের যুদ্ধপদ্ধতি ছিল শত্রু ঘোড়সওয়ারকে ধাওয়া করে ধরে ফেলা। তার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিজের দলের সৈন্যদের কাছে নিয়ে যাওয়া।

১০ ১৬
who is khutulun

রাজপরিবারগুলিতে সাধারণত কোনও শক্তিশালী পরিবার বেছে তাঁদের ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক তৈরি করা হত, যাতে দুই পরিবারের যৌথ শক্তি আরও বৃদ্ধি পায়। খুতুলুন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান শুরু করেন তাঁর বাবা-মা। কিন্তু বিয়ে নিয়ে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন না রাজকন্যা। বিয়ের কথা উঠলেই এড়িয়ে যেতেন তিনি।

১১ ১৬
who is khutulun

এই নিয়ে অবশ্য কানাঘুষো কম হয়নি। সবচেয়ে বড় বিতর্ক ছিল বাবা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে। ইতিহাসবিদদের কেউ কেউ দাবি তুলেছেন, খুতুলুনের বাবা স্বয়ং মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। রাজকুমারীর বিয়ে না করার জেদ দেখে মঙ্গোলীয় গোষ্ঠীর মধ্যে নানা জল্পনা শুরু হয়। বাবা ও মেয়ের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে এই দাবিও ওঠে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ মহলে।

১২ ১৬
who is khutulun

বাবা-মায়ের অনেক অনুরোধ-উপরোধের পর খুতুলুন বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি হন। সেখানেও আরোপ করেন অদ্ভুত এক শর্ত। শর্ত অনুযায়ী, যে পুরুষ তাঁকে কুস্তিতে হারাতে পারবে, তাঁকেই তিনি বিয়ে করবেন। আর প্রতিপক্ষ যদি হেরে যান তা হলে খুতুলুনকে ১০০টি ঘোড়া উপহার দিতে হবে তাঁকে।

১৩ ১৬
who is khutulun

খুতুলুন ধনী, ক্ষমতাশালী এবং সুন্দরী। তাই তাঁকে বিয়ে করতে আগ্রহী ছিলেন অনেকেই। শক্তিপরীক্ষা করতে এসে সকলেই রাজকন্যার কাছে পর্যুদস্ত হন। খুতুলুন জেদ ধরেছিলেন, তিনি এমন কোনও পুরুষকে বিয়ে করবেন না, যিনি তাঁকে কুস্তিতে হারাতে পারবেন না। মার্কো পোলোর স্মৃতিকথা অনুযায়ী, ১২৮০ সালে খুতুলুনের সাক্ষাৎ পান তিনি। তত দিনে খুতুলুনের আস্তাবলে ১০ হাজার ঘোড়া জমে গিয়েছিল। রাজকন্যা তখনও অবিবাহিতা।

১৪ ১৬
who is khutulun

ফার্সি লেখক রাশাদ আল-দীনের লেখায় পাওয়া যায়, গাজ়ান নামে এক মঙ্গোলীয় শাসকের প্রেমে পড়ার পর তাঁকে বিয়ে করেছিলেন খুতুলুন। অন্যেরা মনে করেন যে, তিনি তাঁর বাবার এক দেহরক্ষী বা সহযোগীকে বিয়ে করেছিলেন। আবার কারও মতে, বাবাকে হত্যা করতে আসা এক ব্যক্তিকে জীবনসঙ্গী করেছিলেন মঙ্গোলীয় রাজকুমারী।

১৫ ১৬
who is khutulun

১৩০১ সালে মারা যান কাইদু খান। তার আগে মঙ্গোলীয়দের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কাইদুর প্রতিপক্ষ ছিলেন তাঁরই খুড়তুতো ভাই কুবলাই খান। খুতুলুন সেই যুদ্ধে বাবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়ে যান। মেয়ের সমরকুশলতা, শক্তি, সামরিক দক্ষতা, উপস্থিত বুদ্ধি, বীরত্ব কাইদুকে প্রভাবিত করেছিল। তাই মৃত্যুর আগে কাইদু সিংহাসনের দায়িত্বভার সঁপে দিতে চেয়েছিলেন খুতুলুনের হাতেই।

১৬ ১৬
who is khutulun

১৩ জন ভাইয়ের কথা ভেবে এ প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন খুতুলুন। বাবার সাম্রাজ্যের অধীশ্বরী ও রানি হওয়ার সুযোগ থাকলেও ভাইদের বঞ্চিত করেননি তিনি। এক ভাইকে তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে রাজ্যের সেনাবাহিনীর ভার তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হোক। তাঁর বাবার মৃত্যুর মাত্র কয়েক বছর পর, ১৩০৬ সাল নাগাদ খুতুলুন মারা যান বলে ইতিহাসের পাতায় উল্লেখ রয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy