Life Journey of Dharmesh Yelande from 19-Year-Old Struggling Peon to Dance Millionaire dgtl
Bollywood Dance Star
গরিব হওয়ায় ছেড়ে চলে যান প্রেমিকা! ছেঁড়া জামা ও ১৬০০ টাকা নিয়ে বলিউডে এসে কোটি কোটি টাকার মালিক, কে তিনি?
১৯ বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে পিওনের চাকরিতে যোগ। বাবার চায়ের দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় স্থানীয় পুরসভা। দিন আনা-দিন খাওয়া পরিবারের ছেলে আজ কোটি টাকার মালিক।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
নৃত্যশিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার তাগিদে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে তাঁর জীবন। কখনও ছেড়ে চলে গিয়েছেন প্রেমিকা, কখনও পেটের দায় করতে হয়েছে পিওনের চাকরি। তবুও আশা ছাড়েননি। বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আজ বলিউডের ‘ধর্মেশ স্যর’।
০২২১
ধর্মেশ ইয়েলান্দে। ১৯৮৩ সালের ৩১ অক্টোবর গুজরাতের বরোদাতে এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম তাঁর। পেশায় নর্তক, নৃত্যপরিকল্পক এবং অভিনেতা। তবে এই পথ ধর্মেশের জন্য সহজ ছিল না। কঠোর পরিশ্রমই তাঁকে এনে দিয়েছে সাফল্য।
০৩২১
দেশের লাখ লাখ দরিদ্র পরিবারের মতোই ধর্মেশের ছোটবেলা কেটেছে অর্থকষ্টে। বাবার স্থায়ী চায়ের দোকান ছিল। কিন্তু সেই দোকানও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় স্থানীয় পুরসভা।
০৪২১
তার পর বাধ্য হয়েই চায়ের একটি অস্থায়ী স্টল খোলেন ধর্মেশের বাবা। সেই দোকান থেকে দিনে ৫০-৬০ টাকা আয় হত। সেখানেই বাবাকে সাহায্য করতেন ধর্মেশ। ওই টাকায় দৈনিক খরচ চালানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ছিল। তবু তিলে তিলে পয়সা জমিয়ে সন্তানদের পড়ার খরচ চালাতেন ধর্মেশের বাবা।
০৫২১
কিন্তু বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি ধর্মেশ। ছোট থেকে নাচের ভক্ত। বাবার ওইটুকু আয়ের কারণে একেবারে ছোটবেলায় কোনও নাচের প্রশিক্ষক ছিল না তাঁর। টিভির সামনে বসে বলিউড অভিনেতাদের দেখে নাচ শেখা।
০৬২১
তবে ধর্মেশ যখন ক্লাস সিক্সে পড়েন, তখন একটি প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে জিতেও যান। ছেলের নাচে আগ্রহ দেখে সংসারে অভাব থাকা সত্ত্বেও ধর্মেশকে নাচের স্কুলে ভর্তি করান তাঁর বাবা।
০৭২১
তারপর থেকে পড়াশোনার চাইতে নাচেই বেশি মজে থাকতেন ধর্মেশ। কলেজের প্রথম বর্ষে ছেড়ে দেন পড়াশোনা। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পিওনের চাকরি নেন। পাশপাশি নাচ শেখাতে শুরু করেন। তখন চাকরি এবং প্রশিক্ষণ মিলিয়ে মাসে প্রায় ১৬০০ টাকা রোজগার হত ধর্মেশের।
০৮২১
পরনে বেশির ভাগই থাকত ছেঁড়া জামা। নিজের আয়ের প্রায় সবটাই চলে যেত সংসার খরচ মেটাতে। সামান্য কিছু টাকা জমিয়ে রাখতেন নাচের জন্য ভাল জুতো কিনবেন বলে।
০৯২১
তবে ওই টাকা সংসারে দিয়ে নিজের খরচ টানতে পারছিলেন না ধর্মেশ। ঠিক করেন নাচকেই পেশা করবেন। পিওনের কাজ ছেড়ে বিভিন্ন ছবির সেটে ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সারদের দলে কাজ করতে শুরু করেন তখন থেকেই।
১০২১
১৯ বছরে জনপ্রিয় একটি নাচের প্রতিযোগিতায় নাম লেখান। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সেই নাচের প্রতিযোগিতা জেতেন ধর্মেশ। পুরস্কার হিসেবে পাওয়া ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বাবার ঋণ শোধ করেন।
১১২১
প্রতিযোগিতায় জেতার পর বাড়ি ছেড়ে মুম্বইয়ে থাকতে শুরু করেন। স্বপ্ন ছিল বড় নৃত্যশিল্পী হবেন এবং সিনেমায় অভিনয় করবেন। কিন্তু সে বার ব্যর্থ হন। মুম্বইয়ে দু’বছর থেকেও কোনও সুযোগ আসে না। টাকাও শেষ হয় যায়, অগত্যা বাড়ি ফিরে আসতে হয় ধর্মেশকে।
১২২১
তবে হাল ছাড়েননি তার পরও। একটি বিখ্যাত নাচের বিয়্যালিটি শো থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পান ধর্মেশ। ওই প্রতিযোগিতায় তিনি একাই নন, তাঁর বহু ছাত্র-ছাত্রীও যোগ দিয়েছিলেন।
১৩২১
প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর নাচ দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন বিচারকেরা। ‘‘কার কাছে নাচ শেখো’’— এমন প্রশ্নে সকল ছাত্র-ছাত্রীর মুখে একটাই নাম ছিল, ‘ধর্মেশ স্যর’। সেখান থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি ধর্মেশকে।
১৪২১
ওই প্রতিযোগিতায় জিততে না পারলেও বলিউডের বিশিষ্টদের নজরে এসে গিয়েছিলেন তিনি। সিনেমায় নৃত্য পরিকল্পক হিসাবে কাজের সুযোগ আসতে শুরু করে। বিভিন্ন নাচের রিয়্যালিটি শোয়েও অতিথি হিসেবে হাজির থাকার প্রস্তাবও আসতে থাকে।
১৫২১
‘এবিসিডি’ বা ‘এনিবডি ক্যান ডান্স’ ছবিতে তাঁকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন রেমো ডিসুজা। ছবিটি বক্স অফিসে দারুণ সফল হয়। ওই ছবি থেকে পাওয়া টাকায় পরিবারের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে একটি বাড়ি কেনেন ধর্মেশ।
১৬২১
যে প্রতিযোগিতায় তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়েছিল সেই প্রতিযোগিতারই অন্যতম বিচারক এখন ধর্মেশ। মাসে ১৬০০ টাকা আয় করা ছেলেটি আজ প্রায় ৪১ কোটি টাকার মালিক। এখনও পর্যন্ত ছ’টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এ ছাড়াও একাধিক সিনেমায় নৃত্য পরিচালকের কাজ করেন। সব মিলিয়ে তাঁর বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি টাকা।
১৭২১
তবে, শিকড়কে যে ভুলে যেতে নেই, সে শিক্ষা ধর্মেশ তাঁর বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন। ছেলে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছোলেও বাবা আজও চা-বিক্রেতা।
১৮২১
এক সাক্ষাৎকারে ধর্মেশ বলেন, ‘‘আমার আয় দিয়ে আমি পরিবারের জন্য একটি বাড়ি কিনেছি, কিন্তু তবুও বাবা সেই একই চায়ের দোকান চালাচ্ছেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম, ‘আপনাকে আর কাজ করতে হবে না।’ কিন্তু তিনি মানতে চাইলেন না।’’
১৯২১
ধর্মেশ মনে করেন, এই কখনও হাল না ছাড়ার মনোভাবটা তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন। বাধাবিপত্তি থাকা সত্ত্বেও, শুধু মনের কথা শুনেছেন তিনি। সাফল্য কখনওই তাঁর মাথা ঘুরিয়ে দেয়নি, বরং আজও পরিবারের পাশে সর্বদা ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে ধর্মেশ।
২০২১
দারিদ্র্যের কারণে ধর্মেশের প্রেমিকা তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে ধর্মেশ বলেছেন, ‘‘আমার টাকার অভাবের কারণে প্রেমিকা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আমি তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম, একদিন এমন জায়গায় পৌঁছোব যেন টাকার জন্য কেউ আমাকে ছোট না করে।”
২১২১
তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আর সে ভাবে প্রেম হয়নি ধর্মেশের। এখনও তিনি অবিবাহিত। তবে বলিপাড়ায় কান পাতলে শোনা যায় নৃত্যশিল্পী বিনিতা শর্মার সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন ধর্মেশ। যদিও প্রকাশ্যে এ বিষয়ে দু’জনের কেউই কোনও দিন মুখ খোলেননি।