More Than 5,000 Lives Lost in 2013 Uttarakhand Floods, Kedarnath Turned Into a Dark Tourism Spot dgtl
Effect of Uttarakhand Floods 2013
মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে যায় গ্রামের পর গ্রাম, প্রাণ যায় হাজার হাজার মানুষের! এক যুগ আগে প্রকৃতির ভয়াবহ রূপ দেখে কেদারনাথ
গত ৫ অগস্ট উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে আচমকা ক্ষীরগঙ্গা নদীতে হড়পা বান নামে, যার জেরে বিধ্বস্ত হয় উত্তরাখণ্ড। এই ধ্বংসলীলা মনে করিয়ে দিচ্ছে এক যুগ আগের কথা। ২০১৩ সালের ১৬ জুন, নিমেষেই ভেসে গিয়েছিল গোটা রাজ্য। প্রাণ গিয়েছিল সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের। নিখোঁজের সংখ্যা অধরা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ড। ৫ অগস্ট উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে আচমকা ক্ষীরগঙ্গা নদীতে হড়পা বান নামে। জলের তোড়ে সুক্খী, ধরালী-সহ একাধিক গ্রাম ধুয়েমুছে যায়। একের পর এক ঘরবাড়ি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে।
০২১৯
এমনকি গত বুধবারও গভীর রাতে ফের মেঘভাঙা বৃষ্টি হয় উত্তরাখণ্ডে, যার জেরে উত্তরাখণ্ডের চমোলী জেলার একাধিক গ্রাম ধুয়েমুছে গিয়েছে, ভেসে গিয়েছে একাধিক ঘরবাড়ি।
০৩১৯
এই উত্তরাখণ্ড মনে করিয়ে দিচ্ছে এক যুগ আগের কথা। ২০১৩ সালের ১৬ জুন, নিমেষে ভেসে গিয়েছিল সে রাজ্যের একাংশ। প্রাণ গিয়েছিল হাজার হাজার মানুষের। নিখোঁজ হয়েছিলেন অগণিত মানুষ। ঘরবাড়ি তো অনেক দূরের কথা, গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বন্যার জলে।
০৪১৯
২০১৩ সালের ওই বিধ্বংসী বন্যার আঁচ পড়েছিল হিন্দুদের চারটি পবিত্র ধামের মধ্যে অন্যতম কেদারনাথেও। প্রবল জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছিল মন্দিরের আশপাশের সব কিছু। তবে, কোনও রকম আঁচড় লাগেনি কেদারনাথ মন্দিরে।
০৫১৯
উত্তরাখণ্ড সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৪ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত ৩৪০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। যদিও সে সময় বর্ষাকালই ছিল, তবে এমন বন্যা পরিস্থিতি কখনও তৈরি হয়নি বললেই চলে।
০৬১৯
ওই বছর কেদারনাথ ও চমোলি অঞ্চলে তাপমাত্রা খুব বেড়ে যাওয়ায় হিমবাহগুলি গলতে শুরু করে। এক দিকে হিমবাহ গলে যেতে থাকে, অন্য দিকে প্রবল বৃষ্টিপাত। এর ফলে নদীর জল বেড়ে যায়।
০৭১৯
প্রতি বছরই এপ্রিল-মে মাস থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত কেদারনাথে চারধাম যাত্রা চলে। তাই ওই সময় তীর্থযাত্রীদের ভিড়ও থাকে।
০৮১৯
১৬ জুন প্রচুর বৃষ্টি হয়। এই কারণে ১৭ জুন মন্দাকিনী নদী সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়ে যায়। নদীর প্রবাহ এত বেশি হয়ে গিয়েছিল যে বড় বড় পাথরও ভেসে যেতে থাকে।
০৯১৯
কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কেদারনাথ মন্দিরের আশপাশে জল জমে যায়। বৈদ্যুতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ভারী বৃষ্টির কারণে ভূমিধস হতে শুরু করে। সেতু, রাস্তা, যানবাহন ভেসে যায়।
১০১৯
কেদারনাথ ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গগুলির মধ্যে একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কেদারনাথের উচ্চতা ১১ হাজার ৮০০ ফুট। চারদিকে রয়েছে শুধু পাহাড়, নদী এবং হ্রদ। বৃষ্টির জেরে চারিদিকের সব কিছু যখন ধ্বংসের মুখেল, তখন কয়েক হাজার বছরের পুরনো কেদারনাথ মন্দিরের কিন্তু কিছুই নষ্ট হয়নি।
১১১৯
বহু তীর্থযাত্রী প্রাণরক্ষার তাগিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন মন্দিরের ভিতরে। এমনকি সেই সময় কেদারনাথ মন্দিরের তীর্থ পুরোহিত সমাজ সমিতির সভাপতি পণ্ডিত বিনোদ শুক্লও মন্দিরেই আশ্রয় নিয়েছিলেন।
১২১৯
বিনোদ বলেছিলেন, ‘‘মন্দাকিনী হঠাৎই জলমগ্ন হয়ে যায়। তার পরেই নদীর গতি ক্রমশ বাড়তে থাকে। চোখের সামনে আমরা মানুষকে ভেসে যেতে দেখি। কাদার ধসে মৃত্যু হয়েছিল বহু মানুষের।’’
১৩১৯
বিনোদ আরও জানিয়েছিলেন, বন্যার জল মন্দিরেও প্রবেশ করতে শুরু করে দিয়েছিল। সেই সময় হঠাৎই মন্দিরের সামনে একটি বড় শিলা এসে পড়ে। আর তার ফলেই বন্যার জল আর মন্দিরে ঢুকতে পারেনি।
১৪১৯
ভয়াবহ বন্যার ফলে ভূমিধসে রাস্তাঘাট ও সেতু ভেসে যায়। সেই সময় ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ রাস্তাতেই আটকা পড়েছিলেন। ঘরবাড়ি, দোকানপাট, হোটেল— সব কিছু নিমেষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।
১৫১৯
তথ্য বলছে, ২০১৩-এর বন্যা প্রাণ নিয়েছে ৫ হাজার ৭০০ জনের। কেদারনাথে সেই সময় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার তীর্থযাত্রী ছিলেন। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই মারা গিয়েছিলেন। নিখোঁজের সংখ্যা অজানা।
১৬১৯
শুধু কেদারনাথই নয়, ওই সময় বন্যার কবলে পড়েছিল আরও দু’টি তীর্থস্থান। হৃষীকেশ ও হরিদ্বার। সেখানকার পরিস্থতিও ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল। কেদারনাথের আশপাশের ৬০টিরও বেশি গ্রাম কী অবস্থায় রয়েছে তা বোঝাই যাচ্ছিল না।
১৭১৯
ভয়াবহ বন্যায় শুধু যে প্রাণ গিয়েছিল, এমনটা নয়। ভেঙে পড়েছিল সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থাও। কেদারনাথ ও বদ্রীনাথ যে হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তাতে এই দু’টি তীর্থস্থানকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে প্রচুর সময় লেগেছিল তৎকালীন রাজ্য সরকারের।
১৮১৯
২০১৮ সালে এই বন্যা নিয়ে একটি হিন্দি সিনেমাও হয় ‘কেদারনাথ’ নামে। সেখানে কেদারনাথের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছিল। স্থানীয় মানুষদের বিপর্যয়ের ছবিও দেখানো হয়েছিল সিনেমাটিতে।
১৯১৯
পরিবেশবিদদের মতে, এমন বন্যার জন্য দায়ী উত্তরাখণ্ড নিজেই। কারণ, উত্তরাখণ্ডে বহমান প্রধান তিনটি নদী মন্দাকিনী, অলকানন্দা এবং ভাগীরথী। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য তাদের উপর অসংখ্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ তৈরি করে নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বেআইনি ভাবে প্রচুর গাছ কাটা, নদীর ধারে বড় বড় হোটেল, গেস্ট হাউস তৈরি করার কারণেই বন্যার অভিঘাতে নিমেষেই উত্তরাখণ্ড ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।