Over 1000 Deaths, Water Entered Bachchan Residence in Mumbai 2005 and More Tragic Events dgtl
Mumbai Floods 2005
২৪ ঘণ্টায় ৯৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি, মৃত্যু হাজারেরও বেশি! দুই দশক আগে ভয়ঙ্করতম বর্ষণের সাক্ষী ছিল মুম্বই
বাণিজ্যনগরী এখন বানভাসি। ভয়াবহ বৃষ্টিতে কার্যত ডুবে গিয়েছে মুম্বই। ২০২৫ সালের মুম্বইয়ের বৃষ্টি কোথাও যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০০৫-এর ভয়াবহ মুম্বইকে। অতিবর্ষণের কারণে ওই সময়ের মহারাষ্ট্র যেন পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। প্রাণ গিয়েছিল হাজারের বেশি, বেশ কিছু দিন ধরে বিপর্যস্ত ছিল মুম্বই-সহ একাধিক শহর।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৫ ১৩:৩৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
প্রবল বৃষ্টির জেরে বানভাসি মুম্বই। শুধু মায়ানগরই নয়, বিপর্যস্ত কোঙ্কন, মরাঠাওয়াড়া-সহ পশ্চিম মহারাষ্ট্রের একাধিক জায়গা। জলমগ্ন রাস্তা, ডুবে গিয়েছে শয়ে শয়ে যানবাহন। প্রবল বৃষ্টির জেরে ব্যাহত রেল থেকে বিমান পরিষেবা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুম্বইয়ে অন্তত দু’টি মোনোরেল মাঝপথে বিকল হয়ে যায়। দু’টি ট্রেন থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৮০০ জনকে উদ্ধার করতে হিমশিম খেতে হয়েছে প্রশাসনকে।
০২২০
পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেওয়া যায় তার জন্য মঙ্গলবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখেছেন তিনি। মহারাষ্ট্রের দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, টানা চার দিন বৃষ্টির কারণে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ২৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এ ছাড়াও, নান্দেড় জেলায় পাঁচ জন নিখোঁজ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় এবং রাজ্য মোকাবিলা বাহিনীর মোট ২৪টি দল কাজ করছে। প্রয়োজনে সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে।
০৩২০
কোথাও যেন ২০২৫-এর বানভাসি মহারাষ্ট্রের ছবিতে ভেসে উঠছে ২০০৫-এর ছবি। দু’দশক আগে বাণিজ্যনগরীর বন্যা পরিস্থিতি এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। ব্যস্ত মহারাষ্ট্র থমকে গিয়েছিল বেশ কিছু দিনের জন্য।
০৪২০
২০০৫-এর ২৬ জুলাই! হঠাৎ করেই ঘন মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। শুরু হয় ব্রজবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি। প্রথমে সকলেই ভেবেছিলেন, প্রতি বছর যেমন বৃষ্টি হয় তেমনই হবে। প্রথম দিকে সাময়িক যানযন্ত্রণাও শুরু হতে থাকে। কিন্তু যত সময় পেরোয়, বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে।
০৫২০
মহারাষ্ট্রের আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যায়, ২৪ ঘণ্টায় ৯৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় মুম্বইয়ে। উত্তর মুম্বইয়ের বেশ কিছু এলাকায় ১২০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। এমন বর্ষা এর আগে কখনও দেখেনি ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী। তবে অনেক আবহবিদ মনে করেন, শুধু মহারাষ্ট্র বলেই নয়, এমন নাগাড়ে বৃষ্টি ভারতের অন্য শহরগুলিও সে ভাবে দেখেনি ২০০৫-এর আগে।
০৬২০
বৃষ্টি হলেও যাতে জল না জমতে পারে তার জন্য তৈরি করা ছিল বিশেষ নিকাশি ব্যবস্থা। এটি এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে বৃষ্টির জল বা নোংরা জল নালা, খাল বা অন্য কোথাও (যেখানে জল প্লাবিত করা যায়) পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই ব্যবস্থা ব্যবহারে রাস্তায় জল জমে না। সাধারণত প্রবল বৃষ্টির সময় ব্যবহার করা হয় এই বিশেষ নিকাশি ব্যবস্থা।
০৭২০
২০০৫-এর বর্ষার সময়ও মুম্বইয়ে ছিল এই বিশেষ নিকাশি ব্যবস্থা। কিন্তু, ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই নিকাশি ব্যবস্থা প্রতি ঘণ্টায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি সহ্য করতে সক্ষম। কিন্তু বাস্তবে প্রতি ঘণ্টায় অনেক বেশি বৃষ্টি হওয়ায় ব্যাহত হয়ে পড়ে সেটিও। ফলে নিমেষে জলমগ্ন হয়ে পড়ে গোটা শহর।
০৮২০
সেই সময় কংগ্রেস ও এনসিপি-র জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল। বিলাসরাও দেশমুখ ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী আসনে ছিল শিবসেনা, ভারতীয় জনতা পার্টি। মহারাষ্ট্রের বিপর্যয়ের কারণে সে বার ক্ষমতাসীন সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছিল বিরোধীরা।
০৯২০
নিকাশির অব্যবস্থা, শহরের অনিয়ন্ত্রিত অগ্রগতি, আগে থেকে উপযুক্ত সতর্কীকরণ না থাকা-সহ বেশ কিছু কারণ সামনে এনেছিল বিরোধী পক্ষ। সাধারণ মানুষও তাঁদের নাজেহাল অবস্থার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
১০২০
তথ্য বলছে, ভারী বৃষ্টির জেরে সে বার ১৪ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। মহারাষ্ট্র সরকার এবং কেন্দ্রীয় রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ৫,৫০,০০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল। ৫২টি লোকাল ট্রেন খারাপ হয়ে যায়। চার হাজারের বেশি ট্যাক্সি জলে ডুবে বিকল হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া ৩৭ হাজারের বেশি রিকশা নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত বাসের সংখ্যা ছিল ৯০০-রও বেশি।
১১২০
যান্ত্রিক গোলযোগ, ঘরবাড়ি বিপর্যস্ত হওয়া ছাড়াও সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা ছিল শয়ে শয়ে মৃত্যু। শুধু সরকারি তথ্য অনুযায়ীই প্রায় ১২০০ জনের মৃত্যু হয় মহারাষ্ট্র জুড়ে। যদিও আরও অনেক বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল বলে দাবি করেন সাধারণ মানুষ। বন্যার জেরে সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, অফিসকর্মী, শিশু— এমন অনেকেরই মৃত্যু হয়।
১২২০
বৃষ্টিতে একাধিক পাহাড়ি ঢাল ভেঙে পড়ে। তার মধ্যে অন্যতম চেম্বুর ভূমিধস। সেখানে ৮৭ জন মারা যান। ওই এলাকায় একটি ঝুপড়িতে মাটি চাপা পড়ায় অনেকে নিহত হন। চেম্বুরের এক রাসায়নিক কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস বার হওয়ার কারণেও মৃত্যু হয় অনেকের। নিম্নবিত্ত এলাকায় জল ঢুকে পড়ার কারণে সাইন ও কুর্লা অঞ্চলের বহু মানুষের মৃত্যু হয়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
১৩২০
২০০৫ সালের বন্যার ঘটনা মনে করিয়ে দেয় আসমার কথাও। দক্ষিণ মুম্বইয়ে একতলা একটি অনাথ আশ্রম ছিল। সেখানে তিন থেকে আট বছরের প্রায় ১০০টি শিশু থাকত। ১২ বছর বয়সি আসমা খান ছিল সেখানকার মনিটর। অন্যান্য শিক্ষকের সঙ্গে সে-ও বাকি বাচ্চাদের দেখভাল করত।
১৪২০
বৃষ্টির শুরুর দিকে প্রত্যেকেই আশ্রমে ছিল। কিন্তু যত বৃষ্টি বাড়তে থাকে আশ্রমটি ডুবতে শুরু করে। আসমা নিজে সাঁতার না জানলেও আশ্রমের শিশুদের কাঁধে করে সামনের বহুতল আবাসনে স্থানান্তরিত করে। যদিও তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন আরও কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। আসমার এমন সাহসিকতার কারণে ২০০৬ সালে তাঁকে জাতীয় বীরত্ব পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
১৫২০
মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মিঠি নদীর কাছে তৈরি। নদীর একেবারে কাছে রয়েছে বিমানন্দরের দু’টি টার্মিনাল। প্রবল বৃষ্টির জেরে মিঠি নদী প্লাবিত হয়ে যায়। জল এসে পড়ে বিমানবন্দরের ভিতরেও। ডুবে যায় বিমানবন্দরের একাধিক অংশ। বেশ কিছু দিনের জন্য ব্যাহত হয় বিমান চলাচল।
১৬২০
ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী সে সময় একেবারে ভেঙে পড়েছিল। মুম্বইয়ের অন্ধেরি, ভিওয়ান্ডি, কালওয়া, নবী মুম্বইয়ের বেশ কিছু কারখানায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ঠাণে, রায়গড়, রত্নগিরি, সাতারার কৃষিজমি জলে ভেসে যায়। ফলত কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় মহারাষ্ট্র।
১৭২০
মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে জরুরি ত্রাণ তহবিল ঘোষণা করা হয়। ন্যাশনাল ডিজ়াস্টার রেসপন্স ফোর্স, ভারতীয় সেনা উদ্ধারকাজে নামে। বন্যার জলে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে নামানো হয়েছিল হেলিকপ্টার। মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছিল। মাথাপিছু ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে।
১৮২০
বন্যার জলে নাজেহাল অবস্থা হয় বলি তারকাদেরও। অমিতাভ বচ্চনের জুহুর বাড়ি ‘প্রতীক্ষা’য় জল ঢুকে পড়ার খবর সামনে এসেছিল। ‘বিগ বি’ ছাড়াও রানি মুখোপাধ্যায়, সঞ্জয় দত্ত-সহ আরও বেশ কিছু বলি তারকার বাড়িতে জল ঢুকে পড়ে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বহু এলাকায়। অনিল কপূর, অভিষেক বচ্চন, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন-সহ আরও অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী বেশ কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় আটকে ছিলেন। বহু স্টুডিয়োয় জল ঢুকে পড়ায় শুটিংও বন্ধ ছিল অনেক দিন।
১৯২০
বলিউডের নাজেহাল অবস্থা হলেও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অনেক তারকা। হৃতিক রোশন তাঁর বাড়ির কাছে একটি মেয়েকে জলে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করেন। অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, সলমন খান, আমির খান-সহ আরও অনেক অভিনেতা, অভিনেত্রী, প্রযোজকেরা বিভিন্ন ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সাহায্য করেন। পরবর্তী কালে ইমরান হাশমি ও সোহা আলি খান অভিনীত ‘তুম মিলে’ ছবিটি তৈরি হয় মুম্বইয়ের সেই বৃষ্টিকে কেন্দ্র করে।
২০২০
২০০৫-এর পরে মহারাষ্ট্র প্রবল বর্ষা দেখেছে। প্রতি বছরই মে-জুন মাস থেকেই বর্ষা ঢুকে পড়ে মুম্বইয়ে। অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে মুম্বইয়ের বর্ষা। কিন্তু দু’দশক পরেও ২০০৫-এর মুম্বইয়ের ভয়াবহ অবস্থা আজও ভোলেনি সাধারণ মানুষ। সমাজমাধ্যমে বহু মানুষই এখনকার বৃষ্টির কথা লেখার সময় তুলে ধরেন ২০০৫-এর বীভৎসতাকে।