Russian Woman Claims She Gave Birth in Goa Cave, Says Snakes Are Her Friends dgtl
Karnataka Russian Women Rescue
গুহায় সন্তানপ্রসব, সাপের সঙ্গে বছরের পর বছর অরণ্যবাস! প্রেমিককে লুকিয়ে সন্তানদের নিয়ে কেন গুহায় বাস রুশ তরুণীর?
কর্নাটকের গোকর্ণের একটি গুহা থেকে উদ্ধার করা হয় দুই শিশু ও তাদের মাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশে, জঙ্গলে থাকার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে জানান রুশ তরুণী। তাঁর যুক্তি, সন্তানদের জঙ্গলে এনে তাদের মৃত্যুর মুখে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল না তাঁর।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৫ ১১:৩৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
১৫ বছর ধরে দেশছাড়া। আধুনিকতার ছোঁয়া ছাড়াই প্রকৃতির মাঝে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন মা ও সন্তানেরা। প্রকৃতির কোলেই জন্ম দিয়েছেন এক সন্তানের। যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে ভূমিধস। বিষাক্ত পোকামাকড়ের ছড়াছড়ি। সাপখোপ, বন্য জন্তুর ভয়। অরণ্যবাসের কোনও প্রতিকূলতাই দমাতে পারেনি রাশিয়ান তরুণীকে।
০২১৫
৯ জুলাই কর্নাটকের গোকর্ণের একটি গুহা থেকে পুলিশ দুই কন্যা-সহ উদ্ধার করে ৪০ বছর বয়সি রুশ তরুণী নিনা কুটিনাকে। দিনের পর দিন ধরে দুই খুদে মেয়েকে নিয়ে লোকালয় থেকে দূরে এক ভগ্নপ্রায় গুহায় ঘর বেঁধে থাকছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই তাঁদের সন্ধান পায় পুলিশ। গোকর্ণের রামতীর্থ পাহাড়ের আশপাশে টহল দিতে দিতে স্থানীয় পুলিশের একটি দল আচমকাই খুঁজে পায় তিন জনকে।
০৩১৫
টহল দেওয়ার সময়, পুলিশকর্মীরা গুহার দিকে যাওয়ার রাস্তায় পায়ের ছাপ দেখতে পান। সেই পায়ের ছাপগুলি অনুসরণ করে গুহামুখে পৌঁছোনোর পর দেখতে পান কাপড় দিয়ে ঢাকা রয়েছে সেটি। পাহাড়ের উপরে ঘন জঙ্গলে ঘেরা গুহা থেকে মানুষের কথা বলার শব্দ ভেসে আসায় কৌতূহলী হয়ে ওঠেন পুলিশকর্মীরা। এমন পাণ্ডববর্জিত জায়গায় যে মনুষ্য বসবাসের চিহ্ন থাকতে পারে তা কল্পনারও অতীত ছিল তাঁদের। গুহার ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখা যায়, ভিতরে রয়েছেন এক বিদেশিনি ও দুই শিশু!
০৪১৫
উদ্ধার করে নিয়ে আসার পর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে গোকর্ণ পুলিশ। জানা যায় ওই তরুণী রুশ এবং তাঁর নাম নিনা। তরুণীর বয়ানে উঠে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। নিনার দাবি, তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে প্রকৃতির মাঝে এই ভাবে থাকতে অভ্যস্ত। গত দু’মাস ধরে বিপদসঙ্কুল পরিবেশে মেয়েদের নিয়ে গুহায় বসবাস করছেন তিনি।
০৫১৫
এর আগেও তিনি সন্তানদের নিয়ে ঝুঁকির পরিবেশে কাটিয়েছেন। নিনা পুলিশকে জানিয়েছেন, গোয়ায় থাকাকালীন চিকিৎসকের সাহায্য ছাড়াই একটি গুহায় তিনি তাঁর এক সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। উন্মুক্ত প্রকৃতির মাঝেই বড় করেছেন তাদের। প্রাকৃতিক পরিবেশে, জঙ্গলে থাকার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে জানান তিনি। নিনার যুক্তি, তিনি সন্তানদের জঙ্গলে এনে তাঁদের মৃত্যুর মুখে ফেলে দিতে চাননি। বরং সুখেই আছেন তাঁরা সকলে।
০৬১৫
জিজ্ঞাসাবাদে নিনা জানিয়েছেন, মূলত আধ্যাত্মিক কারণেই শহর থেকে দূরে ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে নিরালা কোনও জায়গায় থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। যেমন ভাবা, তেমন কাজ! দুই মেয়েকে নিয়ে গোয়া থেকে সোজা চলে যান গোকর্ণে। সারা দিন ধ্যান ও প্রার্থনার সুবিধা হবে ভেবে বসবাসের জন্য গভীর জঙ্গলের ভিতর গুহাকেই বেছে নিয়েছিলেন নিনা।
০৭১৫
গুহায় ঢুকে তল্লাশি চালানোর সময় পুলিশের নজরে পড়ে সেখানে রাখা রয়েছে সামান্য কিছু ব্যবহারের জিনিসপত্র। কিছু পুরনো জামাকাপড়, প্লাস্টিকের চাদর, অল্প কিছু খাবারদাবার ও অন্যান্য সামগ্রী। গুহা থেকে জলও চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছিল বলে পুলিশ জানায়। গুহাবাসে এক হিন্দু দেবতার মূর্তি পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
০৮১৫
শুধুমাত্র নিরিবিলিতে ধ্যান ও পূজার্চনার জন্য গুহাতেই বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিনা, এমনটা নয়। শুধু আধ্যাত্মিকতা নয়, বরং প্রকৃতিকে ভালবেসেই তিনি এই কাজ করেছেন বলে জানান নিনা। তিনি মনে করেন, প্রকৃতির মাঝে বাস করা স্বাস্থ্যকর, বাড়িতে সেই সুযোগ পাওয়া যায় না।
০৯১৫
৬ বছর বয়সি মেয়ে প্রেমা ও চার বছরের অ্যামা এই জঙ্গলের পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে বলে জানান নিনা। এই বনবাসে বেশ ভালই দিন কাটে তাঁদের। কোনও অভাব-অভিযোগ ছিল না। খুশি মনেই তাঁরা নিজেদের মতো করে দিন কাটাচ্ছিলেন গুহায়। শহুরে ভিড় এড়িয়ে তাঁরা ভালই আছেন বলে পুলিশকে জানান নিনা। বাচ্চারা জলপ্রপাতে হুল্লোড় করে সাঁতার কাটে। খাওয়া, ঘুমের কোনও অসুবিধা হয়নি কোনও দিন।
১০১৫
নিনা যে গুহায় আস্তানা গেড়েছিলেন সেখানে ধসের আশঙ্কা প্রবল। ২০২৪ সালে সেখানে ভয়াবহ ধস নেমেছিল। বর্ষাকালে সাপের উপদ্রবও যথেষ্ট। পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা এ ব্যাপারে অরণ্যচারী রুশ তরুণীকে সাবধান করার চেষ্টা করেন। নিনার সাফ জবাব, সাপেরা তাঁদের বন্ধু। তাদের ক্ষতি না করলেই হল।
১১১৫
তাঁর সন্তানদের পিতা কে, তা নিয়ে প্রথমে মুখ খুলতে চাননি রুশ মহিলা। পরে পুলিশকে জানান, তাঁর সন্তানদের পিতা এক জন ইজ়রায়েলি ব্যবসায়ী। তিনি বর্তমানে ব্যবসায়িক ভিসায় ভারতে রয়েছেন। তাঁর নাম ড্রর গোল্ডস্টেইন। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাঁর খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।
১২১৫
৩৮ বছর বয়সি ড্রর গোল্ডস্টেইনকে নিনার ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি সংবাদমাধ্যমে জানান, কয়েক মাস আগে তাঁকে না জানিয়েই মেয়েদের নিয়ে গোয়া ছেড়ে উধাও হয়ে যান নিনা। গোল্ডস্টেইন মেয়েদের সঙ্গে থাকার জন্য বছরে ছ’মাস গোয়াতেই কাটান। তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরেই তিনি ও নিনা আলাদা ছাদের নীচে বসবাস করেন।
১৩১৫
গোল্ডস্টেইনের সঙ্গে নিনার ২০১৭ সালের গোড়ার দিকে গোয়ায় আলাপ হয়। একে অপরের প্রেমে পড়েন ও একত্রবাস করতে শুরু করেন। নিনা ও গোল্ডস্টেইনের দুই সন্তান হয়। বিচ্ছেদের আগে পর্যন্ত তাঁরা ইউক্রেনে ও ভারতে একসঙ্গে বেড়াতে আসেন।
১৪১৫
নিনার পাসপোর্ট ও ভিসা দেখে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে ব্যবসায়িক ভিসায় ভারতে এসেছিলেন নিনা। ২০১৮ সালে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নিনারা সেখান থেকে নেপাল চলে যান। এর পর ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে পুনরায় ভারতে আসেন।
১৫১৫
সেই ভিসার সময়সীমা এত দিনে পেরিয়ে গিয়েছে। এর পর থেকে নিনা ভারতে অবৈধ ভাবেই বসবাস করছিলেন। ভিসার মেয়াদ লঙ্ঘনের অভিযোগে নিনা ও তাঁর মেয়েদের নারী ও শিশু উন্নয়ন দফতরের এক আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। শীঘ্রই তিন জনকে রাশিয়ায় ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। গোল্ডস্টেইন জানিয়েছেন, তিনি চান তাঁর মেয়েরা ভারতে থাকুক। রাশিয়ায় ফেরত পাঠানো হলে তাঁর সঙ্গে মেয়েদের দেখাসাক্ষাৎ করার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।