Advertisement
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Gold Grows on Trees

গাছের পাতায় হলুদ ধাতুর ঝলকানি, ‘জাদু জীবাণু’র কারসাজিতে গাছেই ‘ফলবে’ সোনা! কী বলছে নতুন গবেষণা?

ধাতু থেকে সোনা তৈরি করা সম্ভব কি না তা নিয়ে মধ্যযুগ থেকেই অ্যালকেমিস্টদের গবেষণার অন্ত নেই। ল্যাপল্যান্ডে জন্মানো স্প্রুস গাছ নিয়ে সম্প্রতি পরীক্ষা করা শুরু করেছিল ওলু বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফিনল্যান্ডের ভূতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থা। ২৩টি গাছের ১৩৮টি নমুনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৩৯
Share: Save:
০১ ১৭
Gold Grows on Trees

কথায় কথায় আমরা প্রায়ই বলি, টাকা কি গাছে ফলে? সেই প্রবাদ এ বার সত্যি বলে প্রমাণিত করে দিলেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে কিছু গাছের পাতায় সত্যিই সোনা ‘ফলে’। রূপকথার গল্পের মতো শোনালেও তা পরীক্ষিত সত্য। আদ্যোপান্ত কল্পকাহিনি বলে মনে হলেও বিজ্ঞানীরা সোনা ‘ফলানোর’ আশ্চর্য ক্ষমতাসম্পন্ন গাছের সন্ধান পেয়েছেন।

০২ ১৭
Gold Grows on Trees

তবে গল্পের মতো গাছে গাছে সোনার ফল বা মুদ্রার আকারে সোনার হদিস পাওয়াটা অতিরিক্ত কষ্টকল্পনা। ডালের চারপাশে ঝুলন্ত বাটের আকারে নয়, বরং আণুবীক্ষণিক দাগের আকারে চকচকে হলুদ ধাতু খুঁজে পেয়েছে ফিনল্যান্ডের একটি গবেষকদল। সম্প্রতি নরওয়ের স্প্রুস গাছে লুকিয়ে থাকা সোনার কণা খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা।

০৩ ১৭
Gold Grows on Trees

ওলু বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফিনল্যান্ডের ভূতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থা সে দেশের ল্যাপল্যান্ডে জন্মানো স্প্রুস গাছ নিয়ে পরীক্ষা করা শুরু করেছিল। ২৩টি গাছের ১৩৮টি নমুনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল। এর মধ্যে, বেশ কয়েকটি গাছে সোনার আণুবীক্ষণিক কণা শনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন গবেষকেরা। এই আবিষ্কারটি কয়েক দশকের পুরনো রহস্যে এক নতুন মোড় এনেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানী এবং অনুসন্ধানকারী দলের সদস্যেরা।

০৪ ১৭
Gold Grows on Trees

গাছের পাতায় সোনা সঞ্চয়ের পিছনে নতুন এক ‘অ্যালকেমিস্ট’দের জড়িত থাকার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন গবেষকেরা। ধাতু থেকে সোনা তৈরি করা সম্ভব কি না তা নিয়ে মধ্যযুগ থেকেই অ্যালকেমিস্টদের গবেষণার অন্ত ছিল না। নিজেদের দাবি প্রমাণে অ্যালকেমিস্টরা এক অজানা উপাদান তৈরির জন্য বিস্তর অনুসন্ধান চালিয়ে গিয়েছেন।

০৫ ১৭
Gold Grows on Trees

পরবর্তী কালে অণু-পরমাণুর মধ্যে হেরফের ঘটিয়ে সোনা তৈরির চেষ্টায় পিছিয়ে ছিলেন না বিজ্ঞানীরাও। তাঁরাও কৃত্রিম ভাবে সোনা তৈরির চেষ্টা করে গিয়েছেন।

০৬ ১৭
Gold Grows on Trees

গবেষণাটি আলোকপাত করেছে নতুন এক তত্ত্বের উপরেও। মনে করা হচ্ছে, এখানে আসল অ্যালকেমিস্টরা হয়তো জীবাণু। মাটির গভীরে থাকা সোনাকে উদ্ভিদের পাতায় পাঠিয়ে দিচ্ছে বিশেষ কোনও জীবাণুই। গাছের পাতায় সুচের মতো অংশে সোনা জমানোর অনুঘটক হল এন্ডোফাইট নামের এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া।

০৭ ১৭
Gold Grows on Trees

‘বায়ো মিনারালাইজ়েশন’ বা ‘জৈব খনিজকরণ’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবাণুটি মাটিতে মিশে থাকা সোনার আয়নগুলিকে ধাতব আণুবীক্ষণিক কণায় রূপান্তরিত করে। সহজ ভাষায়, গাছটি সোনাযুক্ত জল শোষণ করে এবং জীবাণুগুলি রাসায়নিক ভাবে সেই সোনাকে কঠিন কণায় পরিণত করে গাছের পাতায় জমা করে। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে ফেললে পাতার নিড্‌ল টিস্যুর মধ্যে এই কণা দৃশ্যমান।

০৮ ১৭
Gold Grows on Trees

এক দশকেরও বেশি আগে অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষকদল ইউক্যালিপটাস পাতার ভিতর সোনার ক্ষীণ চিহ্ন খুঁজে পেয়েছিল। সেই সময় ‘সোনার গাছ’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই পড়ে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজ়েশনের ভূ-রসায়নবিদ মেল লিন্টার্ন জানিয়েছিলেন, একটি বিশাল এক্স রে যন্ত্র ব্যবহার করে তাঁরা কিছু গাছের পাতা, ডালপালা এবং বাকলের মধ্যে সোনার চিহ্ন খুঁজে পেয়েছিলেন।

০৯ ১৭
Gold Grows on Trees

খরার সময় জলের উৎস সন্ধানে ইউক্যালিপটাস গাছের শিকড় মাটির বহু গভীর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্যালিপটাস গাছের দৈর্ঘ্য ১০ মিটার হলে তার শিকড় গাছটির দৈর্ঘ্যের চার গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার গাছগুলির ক্ষেত্রেও সেই ঘটনাই ঘটেছে৷ জলের সন্ধানে গাছটির শিকড় মাটির যে গভীরতায় গিয়েছে, সেখানে সম্ভবত সোনা ছিল। বায়োমাইনিং পদ্ধতির সাহায্যে কিছু উদ্ভিদ তাদের শিকড়ের মাধ্যমে মাটি থেকে ধাতু শোষণ করে এবং তাদের পাতা এবং শাখায় স্থানান্তরিত করে।

১০ ১৭
Gold Grows on Trees

অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে দেখেন, একটি সোনার আংটি তৈরি করতে যে পরিমাণ সোনা দরকার হতে পারে, তার জন্য অন্তত ৫০০টি গাছের প্রয়োজন পড়বে। তাঁদের বিশ্বাস, গাছগুলি একটি হাইড্রলিক পাম্পের মতো কাজ করছে। শিকড় থেকে খাবার তৈরির জন্য জল আনতে গিয়ে দ্রবীভূত সোনা ভাস্কুলার সিস্টেমের মাধ্যমে পাতায় ছোট সোনার কণাগুলিকে জমা করে চলেছে।

১১ ১৭
Gold Grows on Trees

নতুন ফিনিশীয় গবেষণা সেই বিষয়টিকে পরিষ্কার করে দিয়েছে। উচ্চ রেজ়োলিউশন ইমেজিং ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে, সোনা উদ্ভিদের টিস্যুর গভীরে অবস্থান করে। এটি প্রমাণ করে যে, হলুদ ধাতুর কণা শোষিত এবং রূপান্তরিত হচ্ছে। এবং জীবাণুগুলি নীরবে দ্রবীভূত সোনা প্রক্রিয়াজাত করছে এবং ক্ষুদ্র ধাতব দানায় পরিণত করে তুলছে।

১২ ১৭
Gold Grows on Trees

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গাছে গাছে সোনা ফলার দৃশ্য কল্পনা করার আগে বাস্তবতা যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে। গাছের পাতায় যে ‘ভান্ডার’ সঞ্চিত রয়েছে তা যৎসামান্য, এক গ্রাম সোনার কোটি ভাগের এক ভাগ। অর্থনৈতিক ভাবে এর তেমন গুরুত্ব নেই।

১৩ ১৭
Gold Grows on Trees

ফিনল্যান্ডের উলু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী কাইসা লেহোস্মা জানিয়েছেন, গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখা গিয়েছে গাছের অভ্যন্তরে বসবাসকারী ব্যাক্টেরিয়া ও অন্যান্য অণুজীব গাছের মধ্যে সোনা জমা হওয়ার বিষয়টিকে প্রভাবিত করতে পারে। নতুন এই আবিষ্কার পরিবেশবান্ধব উপায়ে সোনা অনুসন্ধানের পথ খুলে দিচ্ছে।

১৪ ১৭
Gold Grows on Trees

বৈজ্ঞানিক ভাবে এটি বেশ বড় ব্যাপার। আবিষ্কারটি খনিজ অনুসন্ধানের কৌশলকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। ভূতাত্ত্বিকদের নতুন দিশা দেখাবে নতুন এই আবিষ্কার। সোনার খনির সঞ্চয়ের অবস্থান শনাক্ত করার জন্য অনেক দীর্ঘ এবং প্রচলিত প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় ভূতাত্ত্বিকদের। সেই জটিল পদ্ধতির বদলে সম্ভাব্য অঞ্চলের গাছপালা পরীক্ষা করে সঞ্চিত কাঞ্চন ভান্ডারের হদিস মিলতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।

১৫ ১৭
Gold Grows on Trees

সোনার খনির সন্ধানে অন্তহীন পরিবেশগত সমস্যা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা যদি খননকাজ যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে চান, তা হলে এই পদ্ধতিটি ভবিষ্যতে যুগান্তকারী বলে বিবেচিত হবে। পাতার একটি অংশ হয়তো ফিসফিস করে বলে দেবে এখানে সোনা বা তামা মাটির নীচে শুয়ে আছে।

১৬ ১৭
Gold Grows on Trees

এ ছাড়াও কৃত্রিম ভাবে সোনা ফলানোর একাধিক উপায় আছে বলে দাবি করা হয়েছে নানা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা এমন এক ব্যাক্টেরিয়া আবিষ্কার করেছেন যার মধ্যে রয়েছে অসাধারণ এক ক্ষমতা। বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগগুলিকে ২৪ ক্যারেট সোনায় রূপান্তরিত করতে সক্ষম সেই বিশেষ অণুজীবটি।

১৭ ১৭
Gold Grows on Trees

সোনা তৈরি করেছেন ইউরোপের নিউক্লিয়ার রিসার্চ অর্গানাইজ়েশন বা ‘সার্ন’-এর বিজ্ঞানীরাও। সিসা থেকে সোনা তৈরি হয়েছে সুইৎজ়ারল্যান্ডের রাজধানী জেনিভার অদূরে ‘সার্ন’-এর ভূগর্ভস্থ ‘লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার’-এ। সেখানে গবেষকেরা সিসাকে সোনায় পরিণত করে অ্যালকেমিস্টদের একসময়ের অসম্ভব স্বপ্নকে পূর্ণ করেছেন। সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য হলেও সিসা থেকে সোনা তৈরির এই বিরল মুহূর্তটি স্থায়ী হয়েছিল।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy