Success Story of UP girl with broken elbow, Slept on railway station to crack NEET 2025 dgtl
Tabassum Jahan
কনুই ভেঙে দেড় বছর পড়াশোনা বন্ধ! রাত কাটিয়েছেন স্টেশনে, এমবিবিএস হওয়ার লড়াইয়ে তবস্সুমের পাশে দর্জি মা
আর্থিক অভাবের ফলে স্বপ্ন প্রায় ভেঙেই যেতে বসেছিল উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বাসিন্দা তবস্সুম জাহানের। সংসারের হাল ধরতে একটি শপিং মলে চাকরি জোগা়ড় করেন। সঙ্গে চলতে থাকে নিটের ইউজি পরীক্ষার প্রস্তুতি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫ ১৬:২২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
পরিবারের মাসিক আয় মাত্র ১০ হাজার টাকা। অর্থাভাব নিত্যসঙ্গী। সংসারের হাল টানতে পড়াশোনার ফাঁকে করতে হয়েছে ছোটখাটো কাজ। অভাব-অনটনও দমাতে পারেনি এই তরুণীকে। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে গিয়েছেন বছরের পর বছর। অর্থাভাবের কারণে পড়াশোনায় ঘটেছে বিচ্ছেদ। হাজারো বাধা পেরিয়েও যে স্বপ্ন বুনেছিলেন তা পূরণ করতে পিছপা হননি। সেই পথ ছিল চড়াই-উতরাইয়ে ভর্তি।
০২১৭
আর্থিক অভাবের ফলে স্বপ্ন প্রায় ভেঙেই যেতে বসেছিল উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বাসিন্দা তবস্সুম জাহানের। আর্থিক অনটন, শারীরিক সমস্যা, বাসস্থানের অভাব, সমস্ত বাধাকে তুচ্ছ করে ২০২৫ সালে নিট ইউজি পরীক্ষায় সাফল্য পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তবস্সুম
০৩১৭
২০২৩ সাল থেকে ডাক্তারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেছিলেন তবস্সুম। সেই বছর ৪১০ নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। ২০২৪ সালের নম্বর ছিল ৬২১। ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ নম্বরের (কাটঅফ মার্কস) থেকে তবস্সুমের প্রাপ্ত নম্বর কম ছিল। ওই বছর এমবিবিএস-এ ভর্তি হতে পারেননি তিনি।
০৪১৭
তাতেও হাল ছাড়েননি তব্বাসুম। ২০২৫ সালে আবারও পরীক্ষায় বসেন। সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হতে দেখা গেল তাতে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৫৫০। বরাবরই চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন তিনি। সে কারণে অন্য কোনও কোর্সের জন্য কাউন্সেলিংয়ে বসতে চাইতেন না তিনি।
০৫১৭
চার সদস্যের পরিবারের একসময় মাথা গোঁজার ঠাঁই পর্যন্ত ছিল না। উপার্জনের জন্য শপিং মলেও কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। সেই কাজ করতে গিয়ে শরীরে মারাত্মক চোট পান। এ কারণে তাঁর নিটের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাতও ঘটেছিল। গোরক্ষপুর থেকে পটনায় এসে চিকিৎসা করাতে এসে জোটেনি মাথা গোঁজার কোনও ঠাঁইও।
০৬১৭
পড়াশোনা করা তো দূরস্থান, সেই সময়ে রেলস্টেশনে থাকতে হয়েছিল তবস্সুম ও তাঁর মাকে। যে ক্লিনিকে চিকিৎসা চলত তবস্সুমের, সেটি রাতে বন্ধ হয়ে যেত। তখন রাতে রেলের প্ল্যাটফর্মে ঘুমোনো ছাড়া মা-মেয়ের আর কোনও বিকল্প ছিল না। শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে অসহায় পরিস্থিতি তবস্সুমের মনোবলকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছিল।
০৭১৭
তবস্সুমের ভবিষ্যৎ গড়ার আশায় তাঁরা সপরিবারে গোরক্ষপুর থেকে বিহারের সিওয়ানে চলে আসেন। সেখানে গিয়েও বাসস্থান নিয়ে সঙ্কট মেটেনি হতদরিদ্র পরিবারটির। তাঁরই মধ্যে নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন তবস্সুম। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই সব সময় পরিবারকে পাশে পেয়েছেন দরিদ্র পরিবারের মেধাবী পড়ুয়া।
০৮১৭
দরিদ্র কৃষক পরিবারে প্রধান রোজগেরে সদস্য ছিলেন তবস্সুমের বাবা। যদিও তাঁর কোনও স্থায়ী চাকরি নেই। এমন একটা সময় ছিল যখন তিনি শপিং মলে নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে কাজ করতেন। কখনও আবার কাপড় বিক্রি করতেন। তাঁর মাসিক রোজগারের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ হাজার টাকা। সংসার চালাতে দর্জির কাজ করতেন তরুণীর মা। সব মিলিয়ে হাজার দশেক টাকায় চলত পরিবার ও তবস্সুমের পড়াশোনার খরচ।
০৯১৭
সংসারের হাল ধরতে একটি শপিং মলে চাকরি জোগা়ড় করেন তবস্সুম। সঙ্গে চলতে থাকে নিটের ইউজি পরীক্ষার প্রস্তুতি। ভাগ্যের ফেরে কর্মক্ষেত্রে প়ড়ে গিয়ে কনুই ভেঙে দু’টুকরো হয়ে যায় তাঁর। ভাঙা কনুই জোড়া দেওয়ার জন্য তাঁদের সর্বস্বান্ত হওয়ার দশা হয়। তবস্সুম একটি সাক্ষাৎকারে জানান, টাকা না থাকায় তাঁকে একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
১০১৭
তখনই তিনি উপলব্ধি করেন সেখানে কেউ রোগীদের দিকে মনোযোগ দেয় না। প্লাস্টার করার পরেও তবস্সুমের অবস্থার একটুও উন্নতি হয়নি। ৯-১০ মাস ধরে বহু চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার পরও তাঁর হাতের অবস্থার উন্নতি হয়নি।
১১১৭
পরিবারের এক আত্মীয়ের পরামর্শে পটনার এক ক্লিনিকে চিকিৎসা করাতে এসে রেলস্টেশনে তিন রাত কাটিয়ে ছিলেন তবস্সুম ও তাঁর মা। তিনি জানান, তাঁর মা তাঁকে ক্লিনিকে নামিয়ে দিতেন এবং টাকা রোজগারের জন্য সেলাইয়ের কাজ করতে চলে যেতেন। ইঞ্জেকশনের কারণে প্রায়ই অজ্ঞান হয়ে যেতেন তবস্সুম। এই ভাবে চলার ফলে প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
১২১৭
চিকিৎসার জন্য আত্মীয়-পরিজনদের কাছে তবস্সুমের পরিবারকে বার বার সাহায্যের জন্য হাত পাততে হয়েছিল। শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। একটি সাক্ষাৎকারে তবস্সুম বলেছিলেন, ‘‘আমার মাকে অন্যের কাছে টাকা চাইতে দেখে আমার খুব খারাপ লাগত। আঘাতের চেয়ে এটা আমাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে।’’
১৩১৭
কোভিড অতিমারির সময়ে তাঁর স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে তিনি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির নিয়মিত ক্লাসগুলিতে যোগ দিতে পারেননি।
১৪১৭
২০২৪ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ৬২০-এর বেশি নম্বর প্রাপ্তির পর তবস্সুম আশা করেছিলেন সরকারি কলেজগুলিতে তাঁর ভর্তি নিশ্চিত হতে চলেছে। সেখানেও তাঁর ভাগ্য সহায় হয়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিতর্কের কারণে, ২০২৪ সালের কাটঅফ মার্কস অনেক বেড়ে যায়। তিনি এক বছরের ব্যবধানে পুনরায় চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৫১৭
নিটে সফল অন্য পরীক্ষার্থীদের তুলনায় তবস্সুমের পড়াশোনার কোনও নির্দিষ্ট সময় ছিল না। পরীক্ষার আগে তিনি ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমোতেন। সাক্ষাৎকারে তবস্সুম বলেন, ‘‘পরীক্ষার আগের রাতেও, যখন বেশির ভাগ শিক্ষার্থী জেগে থাকে এবং উদ্বিগ্ন থাকে, তখন আমি টানা ৮ ঘণ্টা ঘুমিয়েছিলাম।’’
১৬১৭
তবস্সুম তাঁর জীবনের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। প্রস্তুতির জন্য কোনও প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভর্তি পারেননি এই ছাত্রী। অর্থাভাবের কারণে নিজেই প্রস্তুতি নেন তিনি। অন্যান্য শিক্ষার্থী যেখানে কোচিং সেন্টার এবং নানা ধরনের বইয়ের উপর নির্ভর করেন, সেখানে তবস্সুমের কাছে ছিল কেবল একটি ফোন, ইউটিউব এবং তাঁর ইচ্ছাশক্তি।
১৭১৭
একটি জনপ্রিয় শিক্ষা সংক্রান্ত ইউটিউব চ্যানেলের পক্ষ থেকে তাঁকে একটি ল্যাপটপ ও চার লক্ষ টাকা বৃত্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রমই সাফল্যের মন্ত্র। এই দু’টি মন্ত্র মেনে চললে জীবনের কঠিন থেকে কঠিনতম পরিস্থিতিও জয় করে ফেলা যায়। তাঁর মতো যে সব ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন তাঁদের কাছে এই বার্তাই দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের লড়াকু তবস্সুম।