চাকরির বাজারের ভবিষ্যৎ রূপরেখা কী হতে চলেছে সে-ই নিয়ে চলতি বছরে (২০২৫ সাল) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম একটি সমীক্ষা করে। প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব রূপান্তর, অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যার পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজার পুনর্গঠিত হচ্ছে। সমীক্ষা বলছে আগামী দিনে কাজের বাজারে একটা বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে।
বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে শুরু হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর প্রয়োগ। দিন দিন এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বহু মানুষ যেমন চাকরি হারাতে পারেন তেমনই বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৈরি হবে নতুন নতুন চাকরির সম্ভাবনাও। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান কর্মসংস্থানের ১৪ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ করবে।
এমন কিছু কাজ, যা শিখিয়ে নেওয়া যায়, তা কৃত্রিম বুদ্ধিনির্ভর মেশিন করতে পারবে প্রচলিত প্রযুক্তির সাহায্যেই। প্রযুক্তি উন্নত হলে গবেষণাগারেও ক্লান্তিহীন ভাবে কাজ করে যেতে পারে যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা। ফলে, ২০২৫ সালে প্রায় ন’কোটি চাকরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আওতায় চলে যেতে পারে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধি ব্যবহারকারী সংস্থাগুলি সাড়ে সাত কোটি নতুন চাকরি সৃষ্টিও করবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তিগত বুদ্ধির দ্বারা চালিত ভূমিকার চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাকরিগুলির মধ্যে রয়েছে বিগ ডেটা বিশেষজ্ঞ, ফিনটেক ইঞ্জিনিয়ার এবং এআই ও মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ। যাঁরা প্রাথমিক স্তরে রয়েছেন বা সংস্থায় জুনিয়র অ্যানালিস্ট বা ডেটা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাঁদের ঘাড়ে কোপ পড়ার শঙ্কার কথা শুনিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সমীক্ষা।
যে সমস্ত ক্ষেত্রে হাতেকলমে কাজের দক্ষতার কোনও দরকার পড়ে না, অর্থাৎ নিয়মমাফিক একই ধাঁচে কাজ করে যেতে হয় সেই সমস্ত কাজের বাজারে মানবসম্পদ ছাঁটাই করে এআই তার দখল নিয়ে নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন ধরা যাক বিষয় লেখক বা কনটেন্ট রাইটার। এই ধরনের কাজ বা কনটেন্ট যাঁরা তৈরি করেন সেই কাজ এক–চতুর্থাংশ এআই করে দিতে সক্ষম।
ওয়ার্ডস্মিথ বা অটোমেটেড ইনসাইটের মতো চ্যাট বট দিয়ে যে কোনও প্রবন্ধ বা প্রতিবেদন লিখতে যে সময় লাগে তার চেয়ে ঢের বেশি সময় ব্যয় করেন এক কর্মী। সমাজমাধ্যমে অনেকেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তাঁদের চাকরির জায়গা দখল করে নিয়েছে এআই। বর্তমানে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম এবং স্টার্ট-আপ সংস্থা এআই নির্ভর হতে শুরু করেছে।
আরও কয়েকটি পেশা রয়েছে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে বিমাক্ষেত্রে দায়ভার নির্ধারণ করার কাজ, গুদাম রক্ষণাবেক্ষণের কাজ কিংবা কায়িক শ্রম নির্ভর উৎপাদনের কাজ, গ্রাহক পরিষেবার কাজ, ডেটা এন্ট্রির কাজ ইত্যাদি। এ ছাড়া হিসাবরক্ষক, প্যারালিগাল চাকরি, রেডিয়োলজিস্টের মতো কয়েকটি পেশায় চাকরি আর সৃষ্টি না-ও হতে পারে আগামী পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে।
তবে আগাম তথ্য এবং বিবেচনা ব্যবহার করে যাঁরা শিক্ষা ও কাজের প্রকৃতি বদলে ফেলতে পারবেন, তাঁদের চাকরির অভাব হবে না। যাঁরা পুরনো চাকরিতে দক্ষতার মাঝের সারিতে রয়েছেন, তাঁরা যদি কৃত্রিম বুদ্ধির দাপটে চাকরি বদলাতে বাধ্য হন, তাঁদের ক্ষেত্রে কিন্তু নতুন পেশায় নীচের দিকে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, ফলে আয়ও কমতে পারে।
ফরেন্সিক বিজ্ঞানী, আর্থিক বিশেষজ্ঞ, ভূতাত্ত্বিক প্রযুক্তিবিদ থেকে শুরু করে শিল্পক্ষেত্রে হিসাবরক্ষকের চাকরি— সবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনুষঙ্গে ক্রমশ বাড়বে। কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম মেধার ব্যবহার হবে সীমিত। যেমন, কৃষিবিশারদ, মনোরোগবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, অপরাধের বিচার, শিক্ষকতা, মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণা, গল্প-উপন্যাস-কবিতা লেখার মতো ক্ষেত্রে। বাড়বে দক্ষ কর্মীদের চাহিদা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy