বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার জেরে অনেকটাই বেড়েছে সোনার দর। ফলে পৃথিবীর বহু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি ব্যাপক হারে হলুদ ধাতু কেনা শুরু করেছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৫ ১০:২৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
বিশ্ববাজারে রকেটের গতিতে বাড়ছে হলুদ ধাতুর মূল্য। প্রতি দিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণমূল্য। সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ বলে গণ্য করা হয়। ভারতের ক্ষেত্রে সোনা সঞ্চয় করা হয় বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে। সঞ্চিত সোনার মূল্য বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে যুক্ত হয়। যে কোনও দেশের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি অনেকটাই নির্ভর করে সঞ্চিত বৈদেশিক মুদ্রার উপর।
০২১৭
বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারই আন্তর্জাতিক বাজারে কোনও দেশের দর বৃদ্ধি করে। যে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার যত বেশি, সে দেশ অর্থনৈতিক ভাবে তত শক্তিশালী। এই সঞ্চয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় দেশটির ব্যবসায়িক প্রতিপত্তি।
০৩১৭
বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার জেরে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে সোনার দর। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি ব্যাপক হারে হলুদ ধাতু কেনা শুরু করেছে। আগে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা আরবিআইতে বৈদেশিক তহবিলে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সঞ্চিত থাকত।
০৪১৭
শুধু ভারত নয়, একাধিক দেশই স্বর্ণসঞ্চয়ে জোর দিচ্ছে। শুধুমাত্র ডলারের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে তারা। আর তাই বিকল্প হয়ে উঠছে সোনা।
০৫১৭
আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই ডলারে অস্থিরতা দেখা গিয়েছে। আর তাই সোনা কেনার অঙ্ক বৃদ্ধি করেছে বেজিং। কূটনৈতিক সম্পর্কে পান থেকে চুন খসলেই নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করে থাকে আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতিকে কেন্দ্র করে দিন দিন তীব্র হচ্ছে আমেরিকা ও চিনের ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’।
০৬১৭
এই সংঘাতের জিগির তুলে আমেরিকা আচমকা চিনের উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করলে এত দিনের সঞ্চিত ডলার অর্থহীন হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রার দর পড়লেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালাতে যাতে সমস্যা না হয়, তাই নিজেদের রাজকোষে টন টন সোনা জমাচ্ছে এশিয়ার প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি চিন। ইউরোপীয় দেশ ও আমেরিকার মতো ড্রাগনভূমিও স্বর্ণভান্ডারের মজুত হ্রাস করতে অনিচ্ছুক।
০৭১৭
সোনা মজুতের দিক থেকে এশিয়ার মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে রয়েছে চিন। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে সে দেশে মজুত সোনার পরিমাণ ২২৯২.৩১ টন। নিজেদের খনি থেকে উত্তোলিত সোনা ও সরকারি ভাবে কেনা সোনা দিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সোনার ভান্ডার ভরেছে শি জিনপিঙের দেশ।
০৮১৭
ইতিমধ্যেই প্রচুর পরিমাণে সোনা মজুত থাকা সত্ত্বেও, তারা ২০২৪ সালে ৪৪.১৭ টন সোনার মজুত বৃদ্ধি করেছে বলে জানা গিয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে (২০২৫-২৬) প্রথম ত্রৈমাসিকের তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩ টন সোনা আমদানি করেছে চিন। তবে ২০২৪ সাল থেকে চিন তাদের সোনা ক্রয়ের গতি কিছুটা কমিয়ে এনেছে। এর আগে ২০২৩ সালে ২২৪.৪৮ টন এবং ২০২২ সালে ৬২.২ টন সোনার মজুত বৃদ্ধি করেছিল তারা।
০৯১৭
এ বার নজর দেওয়া যাক তালিকার দু’নম্বর দেশের দিকে। চিনের মতো বিপুল পরিমাণ সোনা মজুত করতে না পারলেও এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় ও বিশ্বের সপ্তম স্থান অধিকার করেছে ভারত (২০২৪ সালের ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী)। গত বছর সোনা জমানোর নিরিখে চিনকেও পিছনে ফেলে দিয়েছিল ভারত। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে পোল্যান্ডের পর ভারত ছিল দু’নম্বর দেশ, যারা সবচেয়ে বেশি সোনা সঞ্চয় করেছিল।
১০১৭
গত বছর ভারত ৭২.৬০ টন সোনা মজুত করেছিল। অক্টোবরে সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি যে পরিমাণ সোনা কিনেছিল তার ৪৮ শতাংশই ছিল ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের। ২০২০ সালে সোনা সঞ্চয়ের নিরিখে আমেরিকাকেও পিছনে ফেলে দিয়েছিল ভারত। কোভিডকালে ৪১ টন সোনা জমায় ভারত।
১১১৭
আরবিআইয়ের কাছে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে সঞ্চিত সোনার পরিমাণ ৮৭৯.৬০ টন। ২০২৪ সালে আরবিআইয়ের কাছে সঞ্চিত ছিল ৮৭৬ টন সোনা। সোনার সঞ্চয় আরও বৃদ্ধি করতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। ডলার ও অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল কমিয়ে সোনা জমানোর পথে হাঁটছে নয়াদিল্লি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য বলেছে, গত বছরে রেকর্ড সোনা মজুত করেছে ভারত।
১২১৭
এ বছরের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ভারতের বিদেশি মুদ্রাভান্ডার বৃদ্ধি পায় ৫৫০ কোটি ডলার। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় বারের জন্য মুদ্রাভান্ডারটি বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর নেপথ্যে আরবিআইয়ের সোনা মজুতের হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের স্বর্ণভান্ডার বৃদ্ধি পেয়েছে ১২০ কোটি ডলার। ফলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মোট মজুত করা সোনার বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ৭,০৮৯ কোটি ডলার।
১৩১৭
ভারতের পর রয়েছে জাপান। অর্থনৈতিক ভাবে এশিয়ার অন্যতম শক্তিধর জাপানের গোল্ড রিজ়ার্ভ প্রায় ৮৪৫.৯৭ টনের। তবে চলতি বছর সোনার সঞ্চয় বৃদ্ধি করেনি জাপান। ২০২৪ সালের শেষ ত্রৈমাসিকে যে পরিমাণ সোনা জমা ছিল টোকিয়োর ভাঁড়ারে, তার থেকে এক রতিও বাড়েনি এই বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে।
১৪১৭
উজ়বেকিস্তানের মতো ছোট্ট দেশের সোনার ভাঁড়ার তাক লাগানোর মতো। ২০২৫ সালের শেষ তথ্য অনুযায়ী চিন, ভারত, জাপানের পর রয়েছে মধ্য এশিয়ার এই দেশটি। এখানে ৩৬৭.৬৪ টন সোনা সঞ্চিত রয়েছে। তবে ২০২৪ সালে এই দেশের সোনা সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ৩৮৩ টন।
১৫১৭
ভারতের পাঁচ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সোনা জমা রয়েছে পাকিস্তানে। ইসলামাবাদের হাতে রয়েছে ৬৫ টন সোনা। তবে সম্প্রতি পাকিস্তানে ৩৩ টন স্বর্ণভান্ডারের হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি তুলেছে সে দেশের সরকার। সেই দাবি সত্যি হলে পাকভূমের সোনার তহবিলে যুক্ত হতে পারে আরও কয়েক টন সোনা।
১৬১৭
বাকি চার রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের কাছে জমা রয়েছে ১৪.২৮ টন সোনা। দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার কাছে যৎসামান্য সোনা অবশিষ্ট রয়েছে। মাত্র ০.৪৭ টন। নেপাল ও ভুটানের সঞ্চিত সোনার তথ্য আন্তর্জাতিক সংস্থার থেকে পাওয়া যায়নি।
১৭১৭
উপরিউক্ত সমস্ত তথ্য ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের থেকে পাওয়া। সোনার মজুত ও সঞ্চয়ের পরিমাণ দ্রুত পরিবর্তশীল। তাই প্রতিটি দেশের স্বর্ণ সঞ্চয়ের পরিমাণ হেরফের ঘটা অসম্ভব নয়।