Why Israel is so strong in wars despite its limited territory and hostile neighbours dgtl
UK
লড়াই জন্ম থেকে, যুদ্ধে হারেনি এক বারও! ইজ়রায়েলের পরাক্রমের নেপথ্যে কি শত্রুদের ব্যর্থতা, না বিশেষ ‘জাদুমন্ত্র’?
পশ্চিম এশিয়ার একটি ছোট দেশ ইজ়রায়েল। ছোট হলে কী হবে! এর ক্ষমতার সামনে টিকতে পারছে না কেউই। ইজ়রায়েলের আক্রমণে গাজ়া প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আকারে ছোট হলেও দেশটির শক্তি এবং ক্ষমতার জেরে কাঁপছে আশপাশের মুসলিম দেশগুলি। কিন্তু কী ভাবে একটি ছোট দেশ হয়ে উঠল এমন শক্তিশালী? তা হলে কি শুরু থেকেই পশ্চিমি ক্ষমতাধর দেশগুলির মদত পেত ইজ়রায়েল?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
বিগত দু’বছর ধরে চারিদিক থেকে যুদ্ধে জর্জরিত ইজ়রায়েল। এক দিকে প্যালেস্টাইন দখলের লড়াই চলছে, অন্য দিকে ইরান, সিরিয়া ও লেবাননের সঙ্গেও সংঘাত চলছে ইহুদিদের। সব দিক থেকে আক্রমণের পরেও ইজ়রায়েলকে দমিয়ে রাখতে পারছে না কেউ।
০২২৬
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই ‘যুদ্ধ’ করছে ইজ়রায়েল। ওই বছর মে মাস থেকে শুরু হয় যুদ্ধ, যা শেষ হয় পরের বছরের এপ্রিল মাসে। অর্থাৎ, দীর্ঘ ন’মাস ধরে প্রতিবেশী দেশ মিশর, জর্ডন, সিরিয়া, লেবানন, ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধ করে ইজ়রায়েল। ইতিহাসের খাতায় এই যুদ্ধ প্রথম আরব-ইজ়রায়েল নামে পরিচিত।
০৩২৬
রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে ইজ়রায়েলকে একটি মানচিত্র তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। সেই মানচিত্রের জমি তো ইজ়রায়েল রক্ষা করেই ছিল, বরং মানচিত্রের বাইরে গিয়েও আরও বেশ কিছু জমি দখল করতে পেরেছিল ইজ়রায়েল।
০৪২৬
১৯৬৭ সালে ছ’দিনের জন্য যুদ্ধে জড়িয়েছিল ইজ়রায়েল। ওই বছরের ৫ থেকে ১০ জুন মিশর, সিরিয়া এবং জর্ডনের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল তারা। পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা, সীমান্ত সংঘাত-সহ আরও বেশ কিছু কারণে তিনটি দেশের সঙ্গে একসঙ্গে যুদ্ধ করেছিল ইজ়রায়েল। সেখানেও জয় হয়েছিল ইহুদিদেরই। বৃহত্তর ভূখণ্ড দখল করতে সক্ষম হয় ইজ়রায়েল।
০৫২৬
ফের ১৯৭৫ সালে যুদ্ধ হয়। মিশর ও সিরিয়া নিজেদের হারিয়ে যাওয়া জায়গা পুনরুদ্ধারের জন্য ইজ়রায়েল আক্রমণ করে। অবশেষে রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
০৬২৬
যুদ্ধবিরতির পর ইজ়রায়েল ও মিশরের মধ্যে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে মিশরের কাছে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায় ইজ়রায়েল। দু’পক্ষে মিটে যায় সীমান্ত সংঘাত। শুরু হয় কূটনৈতিক সম্পর্ক।
০৭২৬
জন্মলগ্ন থেকে কোনও যুদ্ধেই পরাজয়ের স্বাদ পেতে হয়নি ইজ়রায়েলকে। বিপক্ষ যত শক্তিশালীই হোক না কেন, রণাঙ্গনে যাবতীয় হিসেব উল্টে দিতে পেরেছে ইহুদি ফৌজ। আয়তনের নিরিখে এত ছোট হওয়া সত্ত্বেও কোন জাদুমন্ত্রে একাধিক দেশকে হারাতে পারছে তেল আভিভ? বিশ্লেষকদের দাবি, এর নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ।
০৮২৬
এর প্রধান কারণ মানসিকতার পার্থক্য। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই বিষয়কে কোনও ভাবেই এড়ানো যায় না। এক দিকে আরব দেশগুলি লড়াই করছিল শুধুমাত্র নিজেদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার তাগিদে, সেখানে ইজ়রায়েল লড়েছে অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে। ইজ়রায়েল খুব ভাল ভাবেই জানে, যদি তারা যুদ্ধে পরাজিত হয়, তা হলে কোনও ভাবেই আর ইজ়রায়েলে ইহুদিরা থাকতে পারবে না।
০৯২৬
ইজ়রায়েলকে শুরু থেকেই আমেরিকা অনেক রকম ভাবে সাহায্য করেছে। আমেরিকার থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সাহায্য পেয়েছে ইজ়রায়েল। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকা প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার দেয় ইজ়রায়েলকে। সেই টাকা মূলত অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।
১০২৬
অর্থসাহায্য ছাড়াও আমেরিকা অস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে থাকে ইজ়রায়েলকে। এফ-৩৫-এর মতো যুদ্ধবিমান আমেরিকা থেকে সরাসরি ইজ়রায়েল পেয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ইজ়রায়েল আমেরিকার থেকে পেয়েছে।
১১২৬
২০২৩ সালে ফের ইজ়রায়েল আক্রমণ করে আরব দেশগুলি। সে সময় ইজ়রায়েলের উপর সাত দিক থেকে আক্রমণ চলেছিল। ইরান, গাজ়া, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন ও পশ্চিম প্রান্ত থেকে হামলা চলে। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘‘সাতটি দিক থেকে আক্রমণের শিকার হয়েছি, কিন্তু আমরা প্রতিটির উত্তর তীব্র ভাবে দিচ্ছি।”
১২২৬
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বার ইজ়রায়েলের জয়ের আরও একটি কারণ গণতন্ত্র। আরব দেশগুলিতে কোনও গণতন্ত্র নেই। উল্টো দিকে ইজ়রায়েল শুরু থেকেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তাই অন্যান্য দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ইজ়রায়েল পক্ষে অনেকটাই সহজ।
১৩২৬
আরব দেশগুলির নিজেদের মধ্যেই জাতিগত অশান্তি রয়েছে। কিন্তু ইজ়রায়েল পুরোপুরি ইহুদিদের। এটা বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে সরাসরি নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। এই কারণে ইজ়রায়েলিদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক খুবই দৃঢ়।
১৪২৬
সৌদি আরব মৌখিক সমালোচনায় থাকলেও কখনও তাদের সামনে থেকে লড়তে দেখা যায়নি। অন্য দিকে সিরিয়া বহু বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। আরব দেশগুলি নিজেদের মধ্যে লড়াই করে কে নেতৃত্ব হবে, এই নিয়ে। এই সব কারণে আরব দেশগুলির মধ্যে তেমন একতা নেই। সেখানে ইজ়রায়েল বছরের পর বছর ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করছে।
১৫২৬
ইজ়রায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও বেশ তুখোড়। তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা ইজ়রায়েলের নিরাপত্তা এবং স্বার্থ রক্ষাকে শক্তিশালী করেছে। এর মধ্যে অন্যতম মোসাদ।
১৬২৬
সংস্থাটি মূলত খুব দ্রুত এবং সফল ভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম। পাশাপাশি এরা যে কোনও অপারেশন খুব তুখোড় ভাবে করতে পারে। এমনকি ইজ়রায়েলের বাইরে গুপ্তচরবৃত্তি, শত্রুদের বিরুদ্ধে অপারেশন এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহের কাজে জড়িত থাকে মোসাদ।
১৭২৬
বিশেষ ভাবে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং শত্রু রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা করে মোসাদ। দেশের নিরাপত্তা এবং বিশ্বব্যাপী কুখ্যাত সব গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য মোসাদের পরিচিতি রয়েছে। এই সংস্থাকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং পেশাদার গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে ধরা হয়।
১৮২৬
ইজ়রায়েলের অন্য আর একটি গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, যার নাম শিন বেট। এটি ইজ়রায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা। দেশের নিরাপত্তা এবং অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে কাজ করে এরা। তবে বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, এই গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও উন্নতি করতে পেরেছে আমেরিকা, ব্রিটেনের সাহায্যে।
১৯২৬
ইজ়রায়েল বহু বছর ধরে নিজেদের প্রযুক্তি, কৃষিক্ষেত্রে নিজেদের উন্নত করেছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইজ়রায়েলের ব্যবসায়িক সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে। এমনকি গুজরাতে লবণ উৎপাদনে ইজ়রায়েলি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
২০২৬
ইজ়রায়েল তার সামরিক শক্তির জন্যও বিশ্ব জুড়ে পরিচিত। এই দেশ প্রতি বছর তার বাজেটের একটি বড় অংশ সামরিক খাতে ব্যয় করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও আধুনিক সেনাবাহিনী তৈরি করেছে দেশটি।
২১২৬
এই দেশের সব নাগরিকের ১৮ বছর বয়সের পর সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক ভাবে কাজ করতে হয়। ইজ়রায়েলে পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ ৩২ মাস এবং নারীদের জন্য ২৪ মাস।
২২২৬
ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)-কে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সেনাবাহিনী হিসেবে গণ্য করা হয়। তথ্য অনুযায়ী, আইডিএফ-এ প্রায় ১,৬৯,৫০০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। আনুমানিক ৪,৬৫,০০০ সদস্যকে জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করে রাখা রয়েছে।
২৩২৬
প্রতিরক্ষা খাতে তাদের রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, সাইবার যুদ্ধক্ষমতা এবং উন্নত বিমানবাহিনী। যুদ্ধের উপযোগী নিজেদের তৈরি যন্ত্রপাতি, ড্রোন এবং অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আছে।
২৪২৬
বর্তমানে ইজ়রায়েলের কাছে আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং, অ্যারো-২, অ্যারো-৩-এর মতো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি জেরিকো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, স্পাইক ক্ষেপণাস্ত্র, বারাক-৮-এর মতো ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। এ ছাড়া ইজ়রায়েলের কাছে পারমাণবিক বোমাও রয়েছে।
২৫২৬
আন্তর্জাতিক পরমাণু বিশেষজ্ঞদের মতে, ইজ়রায়েলে অন্তত ১০০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এটি তাদের কৌশলগত নিরাপত্তা এবং সামরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
২৬২৬
চক্রব্যূহের আটকে ইজ়রায়েল। শুরু থেকেই প্রতিবেশী দেশ মিশর, জর্ডন, লেবানন, সিরিয়া, প্যালেস্টাইন-সহ আশপাশের দেশগুলির শত্রুতা সত্ত্বেও ঠেকানো যায়নি ইজ়রায়েলের উত্থান। ইজ়রায়েল এখন বেশ উন্নত। তাদের সাহায্যের মাধ্যমে পশ্চিমি দেশগুলি নিজেদের কাজেও ইজ়রায়েলকে যে কোনও সময় ব্যবহার করতে পারে। যদিও এই যুক্তি ঘিরেও নানা বিতর্ক রয়েছে।