Why Netherlands sell 18 F-16 fighter jets to Romania in dirt cheap price that is just 1 Euro dgtl
F-16 fighter jets
বিনা পয়সায় এফ-১৬ বিক্রি! মাত্র এক ইউরোয় নেটো-বন্ধুকে ১৮টা মার্কিন জেট সরবরাহ করবে ডাচেরা, নেপথ্যে কোন রহস্য?
নেটো সদস্য রোমানিয়াকে মাত্র এক ইউরোয় ১৮টি এফ-১৬ মার্কিন লড়াকু জেট সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘বাঁধের দেশ’ নেদারল্যান্ডস। কার্যত বিনা পয়সায় এই লেনদেনের নেপথ্যে রয়েছে কোন রহস্য?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ১১:১০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ঠিক যেন চৈত্র সেল। প্রায় বিনা পয়সায় আস্ত বাজার কিনে ফেলা। নেদারল্যান্ডস-রোমানিয়ার লড়াকু জেট সংক্রান্ত চুক্তিকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করছে পশ্চিমি বিশ্ব। হবে না-ই বা কেন! মাত্র এক ইউরো খরচ করে ডাচদের থেকে ১৮টি ব্যবহৃত (পড়ুন সেকেন্ড হ্যান্ড) এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান কিনে নিয়েছে বুখারেস্ট। কার্যত বিনামূল্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি লড়াকু জেট বিক্রির নেপথ্যে আছে কোনও কূটনৈতিক চাল? উঠছে প্রশ্ন।
০২১৮
চলতি বছরের ৩ নভেম্বর ডাচ বিমানবাহিনীর ১৮টি ব্যবহৃত এফ-১৬ যুদ্ধবিমান অধিগ্রহণ সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি চুক্তি সারে রোমানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। পরে এই নিয়ে বিবৃতি দেয় বুখারেস্ট। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির ফেতেস্তি বিমানঘাঁটিতে রয়েছে ইউরোপীয় এফ-১৬ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যার পোশাকি নাম ইএফটিসি (ইউরোপিয়ান এফ-১৬ ট্রেনিং ফাইটার সেন্টার)। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানগুলি সেখানেই মোতায়েন রয়েছে।
০৩১৮
জলের দরে পুরনো এফ-১৬ কেনা নিয়ে ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন রোমানিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিভিউ-ইওনুত মোস্তেনু। তাঁর কথায়, ‘‘গত জুনে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে নেটোর শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন ইএফটিসির সম্প্রসারণের জন্য ডাচদের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে (মেমোর্যান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা মউ) সই করি। তখনই সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটগুলি অধিগ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত তাতে আপত্তি করেনি আমস্টারডাম।’’
০৪১৮
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, নেদারল্যান্ডস এবং রোমানিয়া, দু’টি দেশেরই মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় সামরিক জোট ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা নেটোর (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন) সদস্যপদ রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই বুখারেস্ট তার ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রগুলির বিমানবাহিনীর যোদ্ধা-পাইলটদের যুক্তরাষ্ট্রের লড়াকু জেট চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। সেই উদ্দেশ্যেই ফেতেস্তি বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ‘ইউরোপিয়ান এফ-১৬ ট্রেনিং ফাইটার সেন্টার’ চালাচ্ছে তারা।
০৫১৮
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা অবশ্য এক ইউরোয় ১৮টি ব্যবহৃত এফ-১৬ বিক্রির বিষয়টিতে প্রতীকী বলে ব্যাখ্যা করেছেন। কারণ চুক্তি অনুযায়ী করবাবদ ২ কোটি ১০ লক্ষ ইউরো (২.৪০ কোটি ডলার) নেদারল্যান্ডসকে দেবে রোমানিয়া। তার পরেও বুখারেস্টের কাছে এই লেনদেন সস্তা হচ্ছে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় সংস্থা লকহিড মার্টিনের তৈরি সংশ্লিষ্ট জেটটির প্রতি ইউনিটের বাজারমূল্য কম-বেশি সাত কোটি ডলার।
০৬১৮
‘বন্ধু’ দেশের যোদ্ধা পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিতে এর আগেও সস্তায় ব্যবহৃত লড়াকু জেট কিনেছে রোমানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। অতীতে নরওয়ের সঙ্গে ৩৭ কোটি ৭০ লক্ষ ডলারের চুক্তি করে তারা। ফলে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটির থেকে ৩২টি ব্যবহৃত এফ-১৬ পেয়েছিল বুখারেস্ট। এ ছাড়া পর্তুগালের থেকেও ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ মার্কিন লড়াকু জেট কিনেছে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের ওই দেশ। ফলে তাদের মোট ব্যবহৃত এফ-১৬-এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭।
০৭১৮
নেটোভুক্ত দেশগুলির মধ্যে এই ধরনের লেনদেন কিন্তু প্রথম নয়। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে পোল্যান্ডকে ২২টি মিগ-২৯ লড়াকু জেট বিক্রি করে দেয় জার্মানি। এর জন্য প্রতীকী দামবাবদ পূর্ব ইউরোপের দেশটির থেকে মাত্র এক ইউরো নিয়েছিল বার্লিন। রুশ নির্মিত যুদ্ধবিমানগুলির পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের সরঞ্জাম এবং লড়াকু জেটের অস্ত্রও ওয়ার’শকে সরবরাহ করেছিল তারা। ডাচদের সঙ্গে রোমানিয়ার চুক্তিতে সেই সংস্থান নেই বলে জানা গিয়েছে।
০৮১৮
বর্তমান আমেরিকার তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেলথ’ শ্রেণির অত্যাধুনিক এফ-৩৫এ লাইটনিং টু যুদ্ধবিমানটিকে বায়ুসেনার বহরে শামিল করছে নেদারল্যান্ডস। এই লড়াকু জেটের নির্মাণকারী সংস্থাও লকহিড মার্টিন। সূত্রের খবর, বাহিনীতে নতুন যুদ্ধবিমান চলে আসায় পুরনো এফ-১৬ জেটগুলিকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ডাচ সরকার। ঠিক তখনই সেগুলিকে অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয় রোমানিয়া। ফলে জলের দরে সংশ্লিষ্ট জেট বিক্রিতে দ্বিধা করেনি ডাচ সরকার।
০৯১৮
নেদারল্যান্ডসের ব্যবহৃত এফ-১৬ কেনার নেপথ্যে বুখারেস্টের দ্বিমুখী উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, কৃষ্ণ সাগরের দিক দিয়ে প্রায়ই রোমানিয়ার আকাশসীমায় রুশ লড়াকু জেটের ঘটছে ‘অনুপ্রবেশ’। ফলে ওই এলাকায় ব্যাপক ভাবে নজরদারির জন্য সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানগুলিকে ব্যবহার করতে চাইছে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশটির বিমানবাহিনী। দ্বিতীয়ত, ইএফসিটির পরিসর বৃদ্ধির কাজ করেছে তারা। নেটোভুক্ত দেশগুলির বিপুল সংখ্যক যোদ্ধা পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত এফ-১৬ প্রয়োজন পড়ছে তাদের।
১০১৮
গত বছর রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত ইউক্রেনের জেট পাইলটদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেয় রোমানিয়া। ২০২৪ সালের অগস্ট থেকে চলছে সেই প্রক্রিয়া। এ প্রসঙ্গে একটি বিবৃতিতে ডাচ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুবেন ব্রেকেলম্যানস বলেছেন, ‘‘মস্কোর বিমানহামলা ঠেকাতে কিভের যোদ্ধারা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পুরনো এফ-১৬-এ নেওয়া প্রশিক্ষণ লড়াইয়ের ময়দানে ঘুরে দাঁড়াতে তাঁদের দারুণ ভাবে সাহায্য করবে। এ ভাবেই অ-নেটোভুক্ত ইউক্রেনকে সাহায্য করছে রোমানিয়া।’’
১১১৮
সাবেক সেনাকর্তাদের একাংশ অবশ্য মনে করেন, ফেতেস্তির প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কারণ, নেদারল্যান্ডসের পাশাপাশি নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং বেলজিয়ামের মতো রোমানিয়ার ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রগুলি বিমানবাহিনীর বহরে ধীরে ধীরে শামিল হচ্ছে এফ-৩৫ লড়াকু জেট। ফলে ক্রমশ বাড়ছে বাতিলের খাতায় নাম ওঠা এফ-১৬ জেটের সংখ্যা। ২০৩০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী এক দশকে রোমানিয়ার বায়ুসেনাও পেতে পারে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান।
১২১৮
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, এফ-১৬-এর উপযোগিতা এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। ‘স্টপগ্যাপ’ হিসাবে এটিকে দিব্যি ব্যবহার করছে রোমানিয়া। ‘দ্য ইউরেশিয়ান টাইম্স’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আপাতত ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখছে তারা। এর উপর নির্ভর করবে মস্কোর বিরুদ্ধে কিভের বিমানবাহিনীর সাফল্য। অন্য দিকে এই সিদ্ধান্তের জন্য ক্রেমলিনের চক্ষুশূল হয়েছে বুখারেস্ট।
১৩১৮
রোমানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মনে করে, বর্তমানে এক যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে তাদের এফ-১৬ প্রশিক্ষণকেন্দ্র। সেই বিবর্তনে ব্যবহৃত জেটগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে বলে জানিয়েছে বুখারেস্ট। অন্য দিকে ইউরোপের বাজারে ফাইটিং ফ্যালকনের চাহিদা ফুরিয়ে গিয়েছে ভাবলে ভুল হবে। কারণ, নেটোভুক্ত বুলগেরিয়া ও স্লোভাকিয়া ইতিমধ্যেই পুরনো মিগ-২৯ জেটগুলিকে বাতিল করে কিনেছে লকহিড মার্টিনের এই লড়াকু জেট।
১৪১৮
নেদারল্যান্ডসের বিমানবাহিনীর ইতিহাসে এফ-১৬-এর গৌরবগাথা নেহাত ছোট নয়। ১৯৯৯ সালে আলবেনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী কসোভো লিবারেশন আর্মির বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সার্বিয়ার ফৌজ। ওই সময় সাবেক যুগোস্লাভিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল এই ইউরোপীয় দেশ। লড়াই শুরু হলে আলবেনিয়ায় জাতিগত নির্মূল অভিযান চালাতে থাকে সার্বিয়া। তা থামাতে ছুটে আসে নেটোবাহিনী। সেই অভিযানে এফ-১৬ নিয়ে আসরে নামে ডাচ বিমানবাহিনী।
১৫১৮
১৯৯৯ সালের ২৪ মার্চ ৪টি মার্কিন লড়াকু জেট নিয়ে সার্বিয়ার আকাশে ঢোকে নেদারল্যান্ডসের বায়ুসেনা। বেলগ্রেডের বিমানবাহিনীর সঙ্গে চলে তাদের ডগফাইট। ওই সময় একটি সার্বিয়ান মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামায় ডাচেরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-’৪৫ সাল) পর এটাই ছিল তাঁদের আকাশের লড়াইয়ের প্রথম সাফল্য।
১৬১৮
পরে ওই সংঘর্ষের বিস্তারিত বিবরণ দেন বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস ডিপ্লয়েড এয়ার টাস্ক ফোর্সের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল জন আবমা। তাঁর কথায়, ‘‘ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ চারটে এফ-১৬ জেট নিয়ে নেটোর স্ট্রাইক প্যাকেজের একটিকে রক্ষা করতে এসকর্ট অপারেশন শুরু করে ডাচ বিমানবাহিনী। অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের উপরে মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরে তারা। এর পর আলবেনিয়া টপকে সার্বিয়ার আকাশসীমায় ঢোকে ওই চার যুদ্ধবিমান।’’
১৭১৮
আবনা জানিয়েছেন, ডাচ বায়ুসেনার ‘অনুপ্রবেশ’-এর খবর পেয়ে চুপ করে বসে থাকেনি সার্ব ফৌজ। তড়িঘড়ি বেলগ্রেডের কাছের একটি ঘাঁটি থেকে তিনটে মিগ-২৯ জেট পাঠিয়ে দেয় তারা। নেদারল্যান্ডসের এফ-১৬গুলির সঙ্গে থাকা ‘অ্যাওয়াক্স’ বিমানের রেডার ধরা পড়ে সেটি। ফলে ডগফাইটের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পেয়েছিলেন তাঁরা।
১৮১৮
সার্বিয়ান বায়ুসেনার রুশ জেটকে গুলি করে নামাতে ‘অ্যামরাম’ নামের আকাশ থেকে আকাশের (এয়ার টু এয়ার) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ডাচ বিমানবাহিনী। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয় তারা। বিস্ফোরণের ফলে অগ্নিকাণ্ড দেখতে পেয়েছিলেন এফ-১৬র ককপিটে বসে থাকা ডাচ পাইলট।