Why number 94 written on the ashes after cremation in Varanasi’s Manikarnika Ghat dgtl
Manikarnika Ghat
নেবে না চিতার আগুন! মণিকর্ণিকা ঘাটে দাহের পর চিতাভস্মের উপর কেন লেখা থাকে ‘৯৪’ সংখ্যা? নেপথ্যে কোন রহস্য?
হিন্দুশাস্ত্র ও পুরাণের একটি ধারণা যে, কাশীতে মৃত্যু হলে আর পুনর্জন্ম হয় না। সেই কারণে, কাশীতে মৃত্যুবরণ করতে আসা মানুষজন থাকতে চান মণিকর্ণিকা ঘাটের আশপাশে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৪২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
যুগ যুগ ধরে ভারতের সনাতন সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করছে গঙ্গা নদী। এই নদীর তীরেই রয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহর বারাণসী, যা পরিচিত ভারতের ‘আধ্যাত্মিক রাজধানী’ হিসাবেও।
০২১৬
বারাণসীতে ৮৪টি ঘাট রয়েছে। গঙ্গায় নৌকাবিহার করতে করতে সেই ঘাটগুলি দেখে নেওয়া যায় অনায়াসে।
০৩১৬
দশাশ্বমেধ, অসি, দ্বারভাঙা থেকে মণিকর্ণিকা— বারণসীর এই ঘাটগুলি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিটি ঘাট ঘিরে রয়েছে শত শত বছরের গল্প।
০৪১৬
বারাণসীর জনপ্রিয় দু’টি ঘাট হল— দশাশ্বমেধ এবং মণিকর্ণিকা। দশাশ্বমেধ বিখ্যাত মূলত সন্ধ্যারতি এবং স্নানের জন্য। আর মণিকর্ণিকা শ্মশানঘাট হিসাবে। এই ঘাট সারা বছর আকর্ষণ করে পর্যটকদের।
০৫১৬
হিন্দুশাস্ত্র ও পুরাণের একটি ধারণা যে, কাশীতে মৃত্যু হলে আর পুনর্জন্ম হয় না। সেই কারণে, কাশীতে মৃত্যুবরণ করতে আসা মানুষজন থাকতে চান মণিকর্ণিকা ঘাটের আশপাশে।
০৬১৬
বলা হয়, বারাণসীর এই মণিকর্ণিকা ঘাটে চিতার আগুন কখনও নেবে না। এই ঘাটেই নাকি আদি শঙ্করাচার্যকে চণ্ডালরূপে দেখা দেন ছদ্মবেশী শিব।
০৭১৬
দশাশ্বমেধ এবং সিন্ধিয়া ঘাটের মাঝে অবস্থিত মণিকর্ণিকা ঘাটের নামকরণের নেপথ্যেও নানা প্রচলিত কাহিনি রয়েছে। পুরাণমতে, শিবের প্রলয় নৃত্যের সময় তার কানের অলঙ্কার এখানে পড়েছিল। তখনই মণিকর্ণিকা ঘাট তৈরি হয়েছিল।
০৮১৬
সংস্কৃত ভাষায় কানের দুলকে ‘মণিকর্ণ’ বলা হয়। এই ‘মণিকর্ণ’ শব্দ থেকেই এই ঘাটের নাম হয় ‘মণিকর্ণিকা’।
০৯১৬
স্কন্দ পুরাণে উল্লেখ রয়েছে, ভগবান বিষ্ণু ওই ঘাটের কাছে ধ্যান করেছিলেন এবং শিব-পার্বতীর স্নানের জন্য মণিকর্ণিকা কুণ্ড খনন করেছিলেন। স্নানের সময় পার্বতীর কানের দুল নাকি সেখানে পড়ে যায় এবং সেই থেকে নাম হয় মণিকর্ণিকা।
১০১৬
আবার এ-ও কথিত রয়েছে, বারাণসীর এই ঘাটে দেবীর চোখের একটি মণি পড়েছিল, তাই এ রকম নাম।
১১১৬
প্রাচীন বহু লিপিতে ঘাটটির উল্লেখ রয়েছে। চিনা পর্যটক জুয়ানজাং এবং ই-তসিং (৫ম-৭ম শতাব্দী) মণিকর্ণিকায় শবদাহের বর্ণনা দিয়েছেন। মণিকর্ণিকা ঘাট শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে। অনেকেই জানেন, মণিকর্ণিকায় শবদাহের পর চিতাভস্মের উপর ‘৯৪’ সংখ্যাটি লেখা হয়। কিন্তু কেন তেমনটা করা হয়, তা অনেকেরই অজানা।
১২১৬
ভারতের প্রাচীনতম এবং সর্বাধিক বিখ্যাত শবদাহস্থল মণিকর্ণিকা হাজার হাজার বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষের শেষকৃত্যের সাক্ষ্য বহন করছে। শুধুমাত্র এই ঘাটেই শেষকৃত্য সম্পন্নকারী ব্যক্তির চিতা ঠান্ডা হয়ে গেলে ভস্মের উপর ‘৯৪’ সংখ্যাটি লেখা হয়। অন্য কোথাও এই প্রথা নেই।
১৩১৬
প্রচলিত বিশ্বাস, মণিকর্ণিকা ঘাটে যাঁকে দাহ করা হয়, তাঁর কানে তারক মন্ত্র বা মুক্তির মন্ত্র দেন স্বয়ং মহাদেব। ‘৯৪’ সংখ্যাটিকে একটি মুক্তিমন্ত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এর অর্থ, মুক্তির জন্য প্রার্থনা।
১৪১৬
মনে করা হয়, ৯৪টি গুণ মানুষের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাকি ৬টি, অর্থাৎ জীবন, মৃত্যু, খ্যাতি, অপমান, লাভ এবং ক্ষতি নির্ধারণ করেন ব্রহ্মা। সেগুলিতে মানুষের হাত নেই। কিন্তু সঠিক চেষ্টা এবং ইচ্ছার মাধ্যমে ৯৪টি গুণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে মানুষ। তার সাহায্যে আত্মাকে মুক্তির সঙ্গে যুক্ত করতে পারে।
১৫১৬
আর সেই কারণেই ওই সংখ্যাটি লিখে দেওয়া হয় মণিকর্ণিকায় দাহ করা ব্যক্তির চিতাভস্মের উপর। সংখ্যাটি খোদাই করার পর, চিতার উপর একটি জলভর্তি পাত্রও ভাঙা হয়।
১৬১৬
হিন্দু ধর্মগ্রন্থে এই আচারের উল্লেখ নেই। এটি একটি স্থানীয় ঐতিহ্য, যা মণিকর্ণিকা ঘাটের দেখা যায়। স্থানীয়েরা এই আচারকে পবিত্র মনে করেন।